ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ ডায়াবেটিস দিবস ॥ শৃঙ্খলা মেনে চললে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ১৪ নভেম্বর ২০১৮

আজ ডায়াবেটিস দিবস ॥ শৃঙ্খলা মেনে চললে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস এখন মহামারী হয়ে উঠছে। বিশ্বে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪২ কোটির বেশি। দেশের ৭৩ লাখ ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে প্রায় ৪৫ লাখ রোগীকে সেবার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। বিশ্বের সর্বত্র বয়সী মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এটি সারাজীবনের রোগ। এ রোগ সম্পর্কে কখনও সম্পূর্ণ সারে না। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নির্ধারিত নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চললে এবং প্রয়োজনে পরিমাণ মতো ওষুধ গ্রহণ করলে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ এবং প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ বুধবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘ডাযাবেটিস প্রতি পরিবারের উদ্বেগ’। দিবসটি উপলক্ষে মঙ্গলবার বারডেম হাসপাতালের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি। সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, ডায়াবেটিস এমন এক রোগ, স্বাস্থ্য শিক্ষাই যার প্রধান চিকিৎসা। যথাযথ স্বাস্থ্যশিক্ষা পেলে একজন ডায়াবেটিস রোগী চিকিৎসকের ওপর নির্ভর না হয়ে এ রোগ ভালভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। সারা বিশ্বেই ডায়াবেটিস এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। তবে উন্নত বিশ্বের তুলনায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ডায়াবেটিস রোগী বৃদ্ধির হার বেশি। ডায়াবেটিস সম্পর্কে অসচেতনতার কারণে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতায় প্রতি বছর মৃত্যুবরণ করছে অসংখ্য মানুষ। তিনি আরও বলেন, ডায়াবেটিসে মোট আক্রান্তের শতকরা ৫ ভাগ আক্রান্ত টাইপ-১ ডায়াবেটিসে। এই প্রকার ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা ইনসুলিন ছাড়া বাঁচতে পারেন না। তাদের ইনসুলিন প্রাপ্তি মানবাধিকার হয়ে দাঁড়ায়। গরিব রোগীদের পক্ষে বছরের পর বছর ধরে ইনসুলিন গ্রহণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাসপাতাল, ক্লিনিক, থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা সেন্টারসমূহে সরকারী উদ্যোগে স্বল্প খরচে ইনসুলিন সরবরাহ এবং ডায়াবেটিস পরীক্ষা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। ডায়াবেটিস এমন এক রোগ, যা সুনিয়ন্ত্রণে না থাকলে রোগীর হৃদপি-, কিডনি ও চোখসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। ডায়াবেটিস আছে এমন রোগীদের শতকরা ৫০ ভাগই জানেন না যে, তাদের ডায়াবেটিস আছে। তাই বছরে অন্তত একবার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা দরকার। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অপরিকল্পিত নগরায়নে জীবনযাপন পদ্ধতি ও খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে ডায়াবেটিস মহামারী আকার ধারণ করছে। ডায়াবেটিস যে হারে বাড়ছে তাতে আমাদের এখনই এ রোগ প্রতিরোধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। আর যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের সচেতন করে তুলতে হবে, যাতে তারা ডায়াবেটিসকে সুনিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ, স্বাভাবিক ও কর্মঠ জীবন নিশ্চিত করতে পারে। ঘন ঘন ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাতে হবে। এক পর্যায়ে পৌঁছলে অনেক জটিল রোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে ডায়াবেটিস। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, টাইপ-২ ডায়াবেটিস শতকরা ৭০ ভাগেরও বেশি প্রতিরোধযোগ্য। প্রাথমিকভাবে ডায়াবেটিস প্রতিরোধের লক্ষ্যে বাডাস বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসাবে সম্প্রতি বাডাস কর্পোরেটভিত্তিক ডায়াবেটিস প্রতিরোধ কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এই কর্মসূচীর অধীনে বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বল্প মূল্যে ডায়াবেটিস নির্ণয় ও প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য শিক্ষা দেয়া হবে। চলচ্চিত্রের মধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া ডায়াবেটিস প্রতিরোধে জাতীয় নীতিমালার একটি খসড়া তৈরি করে তা সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এতে যেসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছেÑফাস্টফুড ও কোমল পানীয়ের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে যাতে প্রতিটি বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নেয়া উচিত। স্কুল কলেজে খোলা মাঠ রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এককভাবে না পারলেও কয়েকটি স্কুল বা কলেজ যাবে সম্মিলিতভাবে একটি খেলার মাঠের ব্যবস্থা করে সে ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা যেতে পারে। টিভি-রেডিও-সংবাদপত্রে সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন বা স্লোগান প্রচারের ব্যবস্থা করা দরকার। এলাকাভিত্তিক ওয়াকিং ক্লাব, সুইমিং ক্লাব ইত্যাদি গড়ে তোলা উচিত।
×