ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চরম ভোগান্তি ॥ মানুষকে জিম্মি করে পরিবহন ধর্মঘট

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৯ অক্টোবর ২০১৮

   চরম ভোগান্তি ॥ মানুষকে জিম্মি করে পরিবহন ধর্মঘট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের শ্রমিক সংগঠনের ডাকা ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে সারাদেশ। পরিবহন শ্রমিকদের টানা দুই দিনের ধর্মঘটের প্রথম দিন রবিবার সারাদেশে কোন পরিবহন চলেনি। বড় শহরগুলোতে ব্যক্তিগত যান চালানোর ক্ষেত্রেও শ্রমিকরা বাধা সৃষ্টি করেছে। চালকদের মুখে পোড়া মবিল লাগিয়ে দিয়েছে। মহাসড়কে এলোমেলোভাবে গাড়ি রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। বাদ যায়নি রোগীর এ্যাম্বুলেন্সও। এতে তীব্র ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায় করার এই হুমকিকে ভালভাবে দেখছে না সাধারণ মানুষ। পরিবহন শ্রমিক এবং মালিক নেতাদের সংগঠনের শীর্ষ নেতারা সরকারপন্থী হওয়াতে ধর্মঘট প্রত্যাহারে কার্যকর কোন উদ্যোগ সারাদিনে চোখে পড়েনি। যদিও সড়ক পরিবহন এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে মন্ত্রীর আহ্বানে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সাড়া মেলেনি। পরিবহন শ্রমিক সংগঠনগুলোর শীর্ষ ফোরাম বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি মন্ত্রী শাজাহান খান পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। দুই দিনের ধর্মঘটের প্রথম দিন রবিবার রাজধানী ঢাকার চিত্র ছিল ভয়াবহ। সকালে অফিস বা অন্য কোন কাজে যারা বেরিয়েছেন তারা বিকেলে ঘরে ফিরেছেন দুর্ভোগ সঙ্গে নিয়েই। রিক্সা, সিএনজি এবং বিভিন্ন এ্যাপসভিত্তিক পরিবহনে গন্তব্যে পৌঁছানো এবং ফেরার চেষ্টা করছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় এসব যানের পরিমাণ নিতান্ত কম হওয়াতে হেঁটেই বেশিরভাগ মানুষকে গন্তেব্যে পৌঁছাতে হয়েছে। অফিস আর স্কুলগামীদের দুর্ভোগ ছিল অবর্ণনীয়। সকাল থেকেই প্রতিটি রাস্তার পাশে শতশত মানুষকে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। অনেক সময় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কোন ধরনের পরিবহন না পেয়ে গন্তব্যে পৌঁছেছেন। বিকেলে যারা অফিস থেকে ফিরেছেন তাদেরও একই অবস্থা ছিল। ধর্মঘটের কারণে গলিপথের সব রিক্সা মূল সড়কে উঠে আসায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এদিন রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ঢিলেঢালাভাবে সাধারণ মানুষকে রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ বসে কাটাতে হয়েছে। রাজধানী আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী, উত্তরা, বিমানবন্দর, মহাখালী, ফার্মগেট, গাবতলী, ফুলবাড়িয়া ও যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি, অটোরিক্সা ও রিক্সা থেকে যাত্রীদের নামিয়ে হেনস্থা করা হয়েছে। এ সময় প্রাইভেটকার চালকদের মুখে কালো রং, পোড়া মবিল ও আলকাতরা মেখে দিতে দেখা গেছে কিছু শ্রমিককে। এ সময় পরিবহন শ্রমিকদের মারমুখী আচরণে কেউ ভয়ে প্রতিবাদও করতে পারেনি। ধর্মঘট আহ্বানের সঙ্গে ধর্মঘট পালনে সাধারণ মানুষকে বাধ্য করতে পরিবহন শ্রমিকদের অতীতে দেখা যায়নি। তবে রবিবারের চিত্র ছিল একেবারে ভিন্ন। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে নেবে পরিবহন শ্রমিকরা যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষের ওপর চড়াও হয়েছে। সরকার এই সঙ্কট সৃষ্টি করে রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ৯ অক্টোবর শ্রমিক সংগঠনগুলোর ডাকা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যে বৈঠক করেছিল তাতে বলা হয়েছিল স্বারাষ্ট্র, আইন ও সড়ক পরিবহন এবং সেতু মন্ত্রণালয় শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে একটি সিদ্ধান্ত জানাবেন। ওই বৈঠকে শ্রমিক সংগঠনগুলো দাবি মানার জন্য ২৮ তারিখ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। দাবি মানার বিষয়ে এখনও কোন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা যায়নি। এদিকে শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে সকাল থেকে নগরীর মহাখালী, গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে আন্তঃনগরসহ দূরপাল্লার কোন বাস ছেড়ে যায়নি। স্টেশনে আসা সাধারণ যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। অন্য ধর্মঘটে সরকার নিয়ন্ত্রিত পরিবহন বিআরটিসি চলাচল করলেও এবার ছিল ভিন্ন চিত্র। সকালে বিআরটিসি চলাচল করলেও বেলা বাড়লে পরিবহন শ্রমিকরা আটকে দেয় এসব গাড়ি। বিআরটিসির গাজীপুর ডিপোর ম্যানেজার বুলবুল আহমেদ বলেন, সকালে আমি কিছু বাস বের করেছিলাম। কিন্তু গাজীপুর চৌরাস্তা এবং বোর্ড বাজারে সেগুলো আটকে দিয়েছে পরিবহন শ্রমিকরা। আমাদের কয়েকজন চালককে পিটিয়েছে। এজন্য এখন বাস চালানো বন্ধ আছে। গাবতলী ডিপোর ব্যবস্থাপক মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, মিরপুর দশ নম্বরসহ কয়েক জায়গায় বাস আটকে দেয়া হয়েছে। সেগুলো সেখানেই আছে। আমিও প্রায় এক ঘণ্টা ধরে মিরপুর দশ নম্বর বসে আছি। পরিবহন শ্রমিকরা কোন গাড়ি যেতে দিচ্ছে না। কামারপাড়া থেকে মতিঝিল যাওয়ার বাস আবদুল্লাহপুরে আটকে দেয়। মন্ত্রীর ধর্মঘট প্রত্যাহারের দাবি ॥ এই মুহূর্তে সড়ক পরিবহন আইন পরিবর্তন করে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়া সম্ভব নয় জানিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে বলতে চাই ধর্মঘাট প্রত্যাহার করুন, মানুষকে কষ্ট দিয়ে কোন লাভ নেই। এই মুহূর্তে আইন পরিবর্তন করার কোন সুযোগ নেই। এই মুহূর্তে পরিবর্তন করতে তো পারব না। পরবর্তী পার্লামেন্ট পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে হবে। পরিবহন শ্রমিকদের ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়ে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের বলেন, তাদের অপেক্ষা করতে হবে। এর মধ্যে কোন ন্যায়সঙ্গত বিষয় থাকলে পরে আলোচনার মাধ্যমে বিবেচনা করা হবে। শাজাহান খান চুপ ॥ পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটে সারাদেশের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়লেও এ নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। সারাদেশের পরিবহন শ্রমিক সংগঠনগুলোর শীর্ষ ফোরাম বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন সরকারের প্রভাবশালী এই মন্ত্রী। অনেকেই বলেন, তার নির্দেশের বাইরে গিয়ে দেশের পরিবহন শ্রমিকরা কোন কর্মসূচী পালন করেন না। রবিবার সচিবালয়ে নিজের দফতর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকরা পরিবহন শ্রমিকদের কর্মসূচীর বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এরপরও সাংবাদিকরা বার বার প্রশ্ন করতে থাকলে মন্ত্রী বলেন, ‘কোন মন্তব্য নয়।’ রাজধানীর বাইরের চিত্র ॥ ঢাকার বাইরের চিত্রও ছিল অনেকটা ফাঁকার মতোই। দেশের কোথাও কোন দূরপাল্লার পরিবহন এবং পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করতে দেয়নি শ্রমিকরা। আমাদের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে সবখানেই মানুষের তীব্র দুর্ভোগের খবর জানা গেছে। কার্যত ঢাকার সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে শ্রমিকরা। এই অবস্থা চলতে থাকলে পণ্যের দরও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্টাফ রিপোর্টার নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, পরিবহন ধর্মঘটের সমর্থনে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কর শিমরাইল মোড়ে সকাল পরিবহন শ্রমিকরা মহাসড়কে নামে। এ সময় তারা মহাসড়কে যানচলাচলে বাধা দেয়। দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সময় শ্রমিকরা এ্যাম্বুলেন্স, রিক্সা, মোটরসাইকেলসহ সকল প্রকার পরিবহন চলাচলে বাধা প্রদান করে। রবিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে শিমরাইল মোড়ে প্রধানমন্ত্রীর পিএস-১ সাজ্জাদুল হাসানের গাড়ি আটকে দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। প্রায় আধা ঘণ্টা পর নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের সহায়তায় শ্রমিকদের কবল থেকে রক্ষা পায় গাড়িটি। নারায়ণগঞ্জ জেলার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই, প্রশাসন) মোল্লা তাসলিম হোসেন জানান, শিমরাইল মোড়ে পরিবহন শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীর পিএস-১ সাজ্জাদুল হাসানের গাড়িটি আটকে দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। পরে আমরা খবর পেয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের কবল থেকে গাড়িটি উদ্ধার করে মেঘনা ঘাট পর্যন্ত পৌঁছে দেই। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে কাঁচপুর মোড় পর্যন্ত প্রায় ১০টি স্পটে অবস্থান নেন পরিবহন শ্রমিকরা। তারা রাস্তায় টায়ারে আগুন ধরিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এ সময় সব প্রকার যানবাহনের চলাচলে বাধা দেয়। শিমরাইলে মোড়ে যাত্রী ফয়সাল জানান, রাজধানী ঢাকার গুলিস্তানে যাওয়ার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এসে পরিবহন পাচ্ছি না। ফলে রিক্সাযোগে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত দেড় শ’ টাকা ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। কাঁচপুরের যাত্রী নয়ন মিয়া জানান, পরিবহন বন্ধ থাকায় গুলিস্তানে থেকে শিমরাইল মোড়ে আসতে দেড় শ’ টাকা ভাড়া গুনতে হয়েছে। অথচ এখানে মাত্র ২৫ টাকা ভাড়া। এভাবেই যাত্রীরা গণপরিহন না পেয়ে ৪ থেকে ৬ গুণ ভাড়া দিয়ে তাদের নির্ধারিত গন্তেব্যে পৌঁছেছে। নিজস্ব সংবাদদাতা মীরসরাই চট্টগ্রাম থেকে জানান, ধর্মঘটের প্রথম দিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাইয়ে রাস্তায় সাধারণ পরিবহনের কোন গাড়ির দেখা মেলেনি। ফলে অফিসগামী ও সাধারণ জনগণকে পড়তে হচ্ছে বিপাকে। সরেজমিনে দেখা গেছে, মীরসরাই, বারইয়ারহাটসহ বিভিন্ন বাস স্টপে অফিসগামীদের অনেকেই গাড়ির অপেক্ষায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। গাড়ি না পেয়ে তাদের অনেকেই হেঁটে রওনা দিচ্ছেন। মীরসরাইয়ে সকাল থেকে কোন পরিবহন সকাল থেকে চলতে দেখা যায়নি। এই সুযোগে রিক্সা ও সিএনজিচালিত অটোরিক্সার চালকরা দুই তিন গুণ ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। মীরসরাই থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে সুমন জানান, চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি কোন গাড়ি নাই। এমন আরও রাস্তার পাশে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী জানান, হঠাৎ করে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হওয়ায় সাধারণ জনগণ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। স্টাফ রিপোর্টার খুলনা থেকে জানান, রবিবার ভোর থেকে খুলনার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সোনাডাঙ্গা থেকে সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। আন্তঃজেলার ১৮টি এবং রাজধানী ঢাকাসহ দূর পাল্লার কোন রুটের বাস ছেড়ে না যাওয়ায় গন্তব্যে যাওয়ার উদ্দেশে বাস টার্মিনাল ও পরিবহন কাউন্টারে আসা যাত্রীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। জরুরী প্রয়োজনে অনেকে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, পিকআপ, ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল এবং বিভিন্ন পরিবহন ব্যবহার করেছেন। এর জন্য তাদের গুণতে হয় অনেক বাড়তি টাকা। স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকেই দুর্ভোগে পড়েন হাজারো মানুষ। এ অবস্থায় জাতীয় ও আঞ্চলিক সড়কে অবৈধ যান ভটভটিই বেছে নিয়েছেন দুর্ভোগে পড়া মানুষ। এসব অবৈধ যানই এখন ভরসা রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের। আর দূরযাত্রার যাত্রীরা ভিড় জমাচ্ছেন ট্রেনের আশায়। ধর্মঘটের কারণে রবিবার সকাল থেকে রাজশাহী থেকে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লা রুটের কোন যান ছেড়ে যায়নি গন্তব্যে। এতে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী-নওগাঁ, রাজশাহী-নাটোরসহ অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীরা গন্তব্যে পাড়ি জমাচ্ছেন ইজিবাইক আর ভটভটি চেপে। আর স্বল্প দূরত্বের যাত্রীরা আরোহী হয়েছেন রিকশা-ভ্যানের। তবে রাস্তায় এসব যানের সংখ্যাও অপ্রতুল। এতে পদে পদে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। তবে সুযোগ বুঝে বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন চালকরা। রাজশাহীর মহাসড়ক এখন এসব ছোট ছোট ভটভটির দখলে। অন্যান্য দিন দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসব অবৈধ যান ধরপাকড় করলেও রবিবার দেখা যায়নি সেই তৎপরতা। তবে ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলগামী বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা পাড়ি দিচ্ছেন ট্রেনে চেপে। স্টাফ রিপোর্টার, বেনাপোল থেকে জানান, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে দেশের সর্ববৃহত্তম বেনাপোল বন্দর থেকে পণ্য ওঠা নামা বন্ধ হয়ে গেছে। চেকপোস্টে আটকে পড়েছে কয়েক হাজার পাসপোর্ট যাত্রী। সীমাহীন দুর্ভোগে রয়েছেন তারা। তবে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। অচল হয়ে পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ এই স্থল বন্দরটি। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন দুদেশের যাতায়াতকারীরা। বেনাপোল সিএন্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম-সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, আমদানি-রফতানি কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলেও পণ্য পরিবহন করতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স ল্যান্ডপোর্ট সাব-কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, কর্মবিরতির ফলে বেনাপোল বন্দরে প্রায় ৩ শতাধিক ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে আটকা পড়েছে। এসবের মধ্যে শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল ও জরুরী অক্সিজেন ও পচনশীল পণ্য রয়েছে। দ্রুত সমাধান না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে ধর্মঘটের কারণে এখান থেকেও কোন দূরপাল্লার বাস বা অভ্যন্তরীণ রুটে পরিবহন ছেড়ে যায়নি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। ভারত ফেরত পাসপোর্ট যাত্রীরা গন্তব্যে যেতে না পেরে বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টার ও আবাসিক হোটেলগুলোতে আটকা পড়ে আছে। ঝামেলা এড়াতে বন্ধ রয়েছে অনেক কাউন্টার। তবে কাছাকাছি এলাকার যাত্রীরা ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও ইঞ্জিন ভ্যানে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ভারত ফেরত যাত্রী হরেণ দাস বলেন, তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন, আরও কিছু দিন থাকার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু পাসপোর্টে ভিসা শেষ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে তাকে ফিরতে হয়েছে। কাছে খরচের টাকাও প্রায় শেষ। তিনি বলেন, বাস বন্ধ কিভাবে বাড়ি পৌঁছাব বুঝতে পারছি না। বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো শাখার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে বেনাপোল বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকলেও ভারতের থেকে আমদানি পণ্য প্রবেশে বাধা নেই। স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, রবিবার শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে গণপরিবহন না থাকাতে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে সকাল থেকেই শত শত নারী-পুরুষ যাত্রীকে যানবাহনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। সড়কে গণপরিবহন চলাচল না করাতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় চরম বেকায়দ। মহাসড়কে নিষিদ্ধ অটোরিক্সা, সিএনজি ও ছাদবিহীন লেগুনাগুলোই ছিল যাত্রীদের একমাত্র ভরসা। সরেজমিনে শিমুলিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-মাওয়া লোকাল বাসগুলো পাকিং ইয়ার্ডে থাকলেও ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছেনা কোন বাস। যাত্রীরা বাস না পেয়ে ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, লেগুনা, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন প্রকার যানবাহনে করে বিকল্পভাবে গন্তব্যে উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। ঢাকা-মাওয়া মহসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে শত শত যাত্রী বাসের অপেক্ষায় থাকলেও বাস না পাওয়ায় তাদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। বাস না পেয়ে তারা লেগুনাসহ নানা প্রকার যানবহনে হুমড়ি খেয়ে তাতে উঠার চেষ্টা করে। তবে এ সুযোগে পরিবহনের ভাড়াও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। প্রাইভেটকারে যাত্রী প্রতি ৫শ’ আর মোটরসাইকেলে ৩শ’ টাকা করে যাত্রীরা ঢাকায় গেছেন। তবে মহাসড়কে চলেনি কোন দূরপাল্লার বাস। মাঝে মধ্যে ২-১টি লোকাল বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। নিজস্ব সংবাদদাতা মানিকগঞ্জ থেকে জানান, সকাল থেকে ঢাকা আরিচা মহাসড়কে মানিকগঞ্জ এলাকায় দূরপাল্লার কোন যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। কর্মস্থল বা গন্তব্য স্থালে পৌঁছানোর জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আবার কেউ কেউ অটোসিএনজি, হ্যালোবাইকের মাধ্যমে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্য স্থানে যাচ্ছেন। সকাল থেকেই ঢাকা আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়ক পরিবহন শ্রমিকের ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা অবস্থান করেন এবং দূরপাল্লার যানবাহন চলাচলে বাধা দিয়েছে। পরে নেতাকর্মীদের ভয়ে চালকরা রাস্তার পাশে গাড়ি বন্ধ করে রেখেছে। মানিকগঞ্জ জেলায় শুভযাত্রা, যাত্রীসেবা, পদ্মা লাইন ও ভিলেজ লাইনসহ আন্তঃজেলার সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্রসঙ্গত পরিবহন শ্রমিককরা পাশ হওয়া আইনে বিভিন্ন ধারা সংশোধনের দাবি তুলেছে। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে সড়ক দুর্ঘটনার সব মামলা জামিনযোগ্য করা, দুর্ঘটনায় চালকের পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান বাতিল, চালকের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণীর পরিবর্তে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত করা, ৩০২ ধারার মামলার তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখা, পুলিশি হয়রানি বন্ধ, ওয়েজ স্কেলে জরিমানা কমানো ও শাস্তি বাতিল এবং গাড়ি নিবন্ধনের সময় শ্রমিক ফেডারেশন প্রতিনিধির প্রত্যয়ন বাধ্যতামূলক করা। জনকণ্ঠের চট্টগ্রাম অফিস জানায়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন আহুত ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের প্রথমদিনে রবিবার জেলার সবকটি রুটে শ্রমিকরা পরিবহন কর্মবিরতি পালন করেছে। বিভিন্ন রুটে ভারী কোন যানবাহন চলেনি। মহানগরী থেকে উত্তর ও দক্ষিণে এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যাত্রী দুর্ভোগের পাশাপাশি পরিবহানে ব্যাপক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এই কর্মবিরতি চলাকালে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের বাহন আওতার বাইরে থাকবে কিন্তু এতে কোন সুফল আসেনি। অধিকাংশ পরীক্ষার্থীর বাহন গণপরিবহন। এতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালযের চলমান ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের ভয়ানক দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। এদের অধিকাংশ রিক্সা ও থ্রি হুইলার বেছে নিয়েছে। আর এই সুযোগে এসব যানবাহন চালকরা আদায় করেছে মোটা অঙ্কের ভাড়া। রবিবার মহানগরীর সবকটি স্ট্যান্ডে সবকটি ভারী যানবাহনকে অচল থাকতে দেখা গেছে। কর্মবিরতিতে অংশগ্রহণকারী পরিবহন শ্রমিকরা বিক্ষিপ্তভাবে সভা সমাবেশ ও মিছিল করেছে। কর্মবিরতি উপলক্ষে পুলিশ ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপর থাকতে দেখা গেছে। ফলে মহানগরীতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে ঢাকা, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িসহ অভ্যন্তরীণ কোন রুটে কোন ধরনের ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।
×