ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ২৬ অক্টোবর ২০১৮

বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট

ঢাকায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট ‘শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’ করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নিজের নামে। একথা সত্য যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তি আগ্রহের অভিপ্রায়ে প্রতিষ্ঠানটি আজকের অবস্থানে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বার্ন চিকিৎসার স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন। তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিল। আকাশছোঁয়া এই ইনস্টিটিউটিকে তিনটি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। একদিকে বার্ন ইউনিট, অন্যদিকে প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট। তৃতীয় ব্লকটিতে এ্যাকাডেমিক ভবন। এই ইনস্টিটিউটে হেলিপ্যাড সুবিধা রয়েছে। এর মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো কোন সরকারী হাসপাতালে হেলিপ্যাড সুবিধা রাখা হলো। ইনস্টিটিউটটিতে ৫০০টি শয্যা, ২০টি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট, ৬০টি এসডিইউ, সর্বাধুনিক ১২টি অপারেশন থিয়েটার ও পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড রয়েছে। ব্যথা ও জীবাণুমুক্ত ড্রেসিং রুমও রয়েছে। সবই অত্যাধুনিক। রয়েছে নার্স ও প্যারামেডিক্যাল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটসহ সারাদেশে মোট ১৪টি হাসপাতালে বার্ন ইউনিট রয়েছে। তবে ঢাকার বাইরেরগুলো নামমাত্র। পূর্ণাঙ্গ বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি শুধু ঢাকায়। এ কারণে সারাদেশ থেকে পোড়া রোগীরা ঢাকায় আসেন। বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জনের পরই দেশব্যাপী পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। শত শত মানুষ পেট্রোল বোমায় হতাহত হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে পেট্রোল বোমায় আহত হয়ে ঢাকায় আনার পথেই অনেকের মৃত্যু হয়েছে। আবার অনেকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হলেও চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে শয্যার তুলনায় কয়েকগুণ রোগী ভর্তি থাকায় সেখানেও সঙ্কুলান করতে হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে। এ অবস্থায় সরকার দেশে একটি পূর্ণাঙ্গ বার্ন ইনস্টিটিউট স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ২০১৫ সালের নবেম্বরে একনেক সভায় এই ইনস্টিটিউটের অনুমোদন দেয়া হয়। ২০১৬ সালের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এখানে বিশ্বের সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতিসহ উন্নততর চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। বার্ন ইনস্টিটিউটটি স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে যে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। দগ্ধ রোগীর পাশাপাশি চিকিৎসক, নার্সদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে প্রতিষ্ঠানটি। আশির দশকের প্রথম ভাগেও দগ্ধ রোগীদের জন্য ঢাকা মেডিক্যালে কোন ইউনিট ছিল না। দগ্ধ বা পোড়া রোগীদের জায়গা হতো হাসপাতালের বারান্দায়। ১৯৮৬ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঁচটি শয্যা নিয়ে বার্ন ইউনিটের যাত্রা শুরু হয়। এরপর ধাপে ধাপে তা ১শ’ শয্যায় রূপান্তরিত হয়। ২০১৩ সালে সরকার ইউনিটটিকে ইনস্টিটিউট করে ৩০০ শয্যা করার উদ্যোগ নেয়। এখন এটি পাঁচ শ’ শয্যার। সরকারের এই উদ্যোগ সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। আমরা মনে করি, দেশের ২৯টি সরকারী মেডিক্যাল কলেজ, ৬৪টি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ ও ৪৬৪টি উপজেলায়ও দগ্ধ রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকা দরকার। পরিসংখ্যান বলছে, বছরে প্রায় ১০ লাখ লোক আগুনে পুড়ে যাওয়ার শিকার হয়। তাদের ৮০ ভাগেরই প্লাস্টিক সার্জারির প্রয়োজন হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বর্তমানে দেড় কোটি মানুষের জন্য মাত্র একজন প্লাস্টিক সার্জন রয়েছেন। পোড়া রোগীদের কারও কারও হাত-পা-শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেঁকে যায়। এক্ষেত্রে তাদের প্লাস্টিক সার্জারি ছাড়া কোন বিকল্প নেই। এই সার্জারি করার পর তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। একথা সত্য যে, পোড়া ও প্লাস্টিক সার্জারির চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ইনস্টিটিউটটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চিকিৎসক ও সার্জন সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি চিকিৎসা প্রাপ্তি সহজলভ্য করার দ্রুত উদ্যোগ নেয়া জরুরী।
×