ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এবার বল হাতে উজ্জ্বল সাইফউদ্দিন

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৫ অক্টোবর ২০১৮

এবার বল হাতে উজ্জ্বল সাইফউদ্দিন

মিথুন আশরাফ ॥ প্রথম ওয়ানডেতে দলের বিপদের সময় ব্যাট হাতে নিজেকে মেলে ধরেছেন পেস অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ৫০ রানের ইনিংস খেলেছেন। সেঞ্চুরিয়ান ইমরুল কায়েসের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে ১২৭ রানের জুটি গড়েছেন। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বল হাতে উজ্জ্বলতা ছড়ালেন সাইফউদ্দিন। একাই ৩ উইকেট শিকার করে নিলেন। শুরুতেই হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে ফিরিয়ে জিম্বাবুইয়েকে বিপদে ফেলেন। এরপর বাংলাদেশের বিপদ হয়ে ওঠা শন উইলিয়ামসকে ফিরিয়ে দিয়ে জিম্বাবুইয়ের ব্যাটিং ছন্নছাড়া করে তুলেন। অভিজ্ঞ চিগুম্বুরাকে শেষে সাজঘরে ফেরান। মাভুতার উইকেটটিও পেতে পারতেন সাইফউদ্দিন। যদি মুস্তাফিজের হাতে থাকা বলটি মাটি স্পর্শ না করত। শেষ পর্যন্ত ১০ ওভারে ১ মেডেনসহ ৪৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে সাইফউদ্দিন বোলিংয়ে জৌলুস ছড়ান। জিম্বাবুইয়ের কোচ লালচান রাজপুত দ্বিতীয় ওয়ানডের আগেরদিন বলেছিলেন, ‘আমি নিশ্চিত, ওরাও (মাসাকাদজা-টেইলর) বড় স্কোরের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারছে। বড় রান আসছে। নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি শীঘ্রই আসছে।’ অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজা দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও পারেননি। তাকে পারতে দেননি সাইফউদ্দিন। তবে ব্রেন্ডন টেইলর ঠিকই ৭৫ রানের ইনিংস খেলে দেখিয়েছেন। মনে হচ্ছিল সেঞ্চুরি করেই মাঠ ছাড়বেন টেইলর। কিন্তু মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এলডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন টেইলরকে। তাতে বাংলাদেশ শিবিরে খানিক স্বস্তিও আসে। যেভাবে টেইলর ও শন উইলিয়ামস এগিয়ে যাচ্ছিলেন, মাহমুদুল্লাহ জুটি না ভাঙ্গলে ৩০০ রানের বেশি স্কোর হওয়ার সম্ভাবনা জেগে গিয়েছিল। সেখান থেকে রক্ষা মিলে। টস জিতে আগে ফিল্ডিং নেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে স্কোরবোর্ডে রান সবসময়ই জমা হয়। শিশির পড়ার দিনে সেই রান অতিক্রম করার দিকেই ঝুঁকে টস জেতা দলগুলো। প্রথম ইনিংস শেষে যে দ্বিতীয় ইনিংসে বোলাররা নিজেদের মেলে ধরতে পারেন না। বলই তো ঠিকমতো ধরা যায় না। বল হাতে নৈপুণ্য দেখানো তাই কঠিন। আগে ব্যাটিং করা দলকে তাই এমন রান করতে হয়, যে রান অতিক্রম করাই কঠিন। স্কোরবোর্ডে রান সুবিধামতো জমা না হলেই প্রতিপক্ষ দল ‘শিশিরে’র সুবিধা নিয়ে জিতে যেতে পারে। এই স্টেডিয়ামে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে বুধবার দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে পাঁচ ম্যাচ খেলে তিনটিতেই পরে ব্যাটিং করে জিতেছিল বাংলাদেশ। এবারও সেই সুযোগ তৈরি হলো। শুরুতে দলের ১৮ রানের মধ্যে ১৪ রান করা হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে ফিরিয়ে দেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। এরপর থেকেই জিম্বাবুইয়ে বড় জুটি গড়ার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। ঝুওয়াও ও টেইলর মিলে মুহূর্তেই দলকে ৭০ রানে নিয়ে যান। এমন সময় ২০ রান করা ঝুওয়াওকে সাজঘরে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। জিম্বাবুইয়ে বিপদে পড়ে যাবে কি, উল্টো বাংলাদেশের ঘাড়েই যেন চাপ তৈরি হয়। এবার টেইলর ও উইলিয়ামস মিলে সেই চাপ তৈরি করেন। দুইজন মিলে দলকে ১০০ রানে নিয়ে যান। ১৫০ রানের কাছাকাছিও চলে যান। কিন্তু যে দল ১৪৭ রানে যায়, দুইজন মিলে ৭৭ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন, জিম্বাবুইয়েও ৩০০ রানের ওপরে করে ফেলবে; এমন ভাবনা হতে থাকে, মাহমুদুল্লাহ ‘ত্রাতা’ হয়ে আবির্ভূত হন। টেইলরকে আউট করে দেন। বাংলাদেশ শিবিরেও স্বস্তি ধরা হয়। এমনই স্বস্তি মিলে, এরপর জিম্বাবুইয়ের ওপরই চড়াও হন বাংলাদেশ বোলাররা। নাজমুল ইসলাম অপু ছাড়া সব বোলারই উইকেট পান। দলের ১৮৮ রানের সময় ৪৭ রান করা উইলিয়ামসকে সাইফউদ্দিন আউট করে দেন। যখন সিকান্দার রাজা ও পিটার মুর মিলে বড় জুটির সম্ভাবনা তৈরি করেন, সিকান্দারকে (৪৯) ফিরিয়ে দেন মাশরাফি। ২২৯ রানে সিকান্দার আউট হওয়ার পর স্কোরবোর্ডে আর কোন রান জমা না হতেই ১৭ রান করা মুরকে সাজঘরে ফেরান মুস্তাফিজুর রহমান। ৬ উইকেট হারিয়ে এমনই বিপত্তির মধ্যে পড়ে জিম্বাবুইয়ে, ৩০০ রান দূরে থাক, ২৫০ রান করাই কঠিন হয়ে পড়ে। ৫ রান যোগ হতেই চিগুম্বুরাকে আউট করে দেন সাইফউদ্দিন। ৩ উইকেট শিকার করে নেন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৩ উইকেট নেন সাইফউদ্দিন। ৮ রান যোগ হতে মাভুতাকেও আউট করে ৪ উইকেট শিকার করার সুযোগ ধরা দিয়েছিল সাইফউদ্দিনের। কিন্তু বলটি তালুবন্ধী করতে পারেননি মুস্তাফিজ। শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ২৪৬ রানের বেশিও করতে পারেনি জিম্বাবুইয়ে। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের ২৭১ রানের সামনে পড়ে মিরাজ ও অপুর স্পিন ঘূর্ণিতে ২৪৩ রান করতে পেরেছিল জিম্বাবুইয়ে। এবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পেসার সাইফউদ্দিনের গতির সামনে পড়ে ৩ রান বেশি করতে পারল জিম্বাবুইয়ে। সাইফউদ্দিন অসাধারণ বোলিং করে দেখালেন। এর আগে এ বছর জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে ১ উইকেট নিয়েছিলেন সাইফউদ্দিন। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে পর্যন্ত চার ওয়ানডে খেলে এই ১টি উইকেটই তার পুঁজি ছিল। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৩ উইকেট নেয়ায় সেই পুঁজি এক লাফে ৪ উইকেটে গিয়ে দাঁড়াল। বল হাতে দারুণ উজ্জ্বল নৈপুণ্য দেখালেন সাইফউদ্দিন।
×