ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে বর্ণিল গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:০১, ৬ অক্টোবর ২০১৮

 ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে বর্ণিল গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নাটক নিয়ে বৃহৎ পরিসরের আয়োজন। তাই বলে শুধু নাটকে সাজানো উৎসব নয়। মঞ্চনাটকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নৃত্য-গীত, কবিতা পাঠ ও যাত্রাপালা। সব মিলিয়ে বহুমাত্রিক পরিবেশনার রং ছড়িয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বময় সম্পর্কের সাক্ষ্যবহ উৎসবটি। সেই ভ্রাতৃত্ববোধের পথ ধরে শুক্রবার থেকে শুরু হলো এগারো দিনব্যাপী গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার তিনটি মিলনায়তনসহ নাট্যশালার উন্মুক্ত আঙিনাজুড়ে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে উৎসব। প্রতিদিন বিকেলে উপস্থাপিত হবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। আর সন্ধ্যায় থাকবে দুই বাংলার বিভিন্ন নাট্যদলের ৩০টি নাটকের প্রদর্শনী। সপ্তমবারের মতো এ উৎসবের আয়োজক গঙ্গা-যমুনা নাট্যোৎসব পর্ষদ। সহযোগিতায় রয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন, শিল্পকলা একাডেমি এবং মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড। শুক্রবার বিকেলে একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে বাদ্যযন্ত্রের সুরে সূচনা হয় উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা। প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে উৎসব উদ্বোধন করেন অতিথিরা। উৎসবের উদ্বোধনী বক্তব্য দেন ভারত ও বাংলাদেশের দুই প্রখ্যাত নাট্যজন বিভাস চক্রবর্তী ও মামুনুর রশীদ। প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। উদ্বোধনী পর্বে সম্মানিত অতিথি ছিলেন নাট্যজন আতাউর রহমান, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। উৎসব পর্ষদের আহ্বায়ক গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পর্ষদের সদস্য সচিব আকতারুজ্জামান। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, দুই বঙ্গের আত্মীয়তা শুধুমাত্র ভাষার কারণে নয়, সংস্কৃতির শেকড়ের কারণে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, নাটক, গান, নাচ দুই বঙ্গকে এক সুতোয় বেঁধেছে। এ ধরনের সাংস্কৃতিক উৎসব দুই দেশের সংস্কৃতির আদানপ্রদানে সহায়তা করবে। এ সময় মন্ত্রী এ উৎসবকে ঢাকার বাইরে আয়োজন করতে আয়োজকদের অনুরোধ করেন। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, দুই বঙ্গের আত্মীয়তা শুধুমাত্র ভাষার কারণে নয়, সংস্কৃতির শেকড়ের কারণে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, নাটক, গান, নাচ দুই বঙ্গকে এক সুতোয় বেঁধেছে। এ ধরনের সাংস্কৃতিক উৎসব দুই দেশের সংস্কৃতির আদান-প্রদানে সহায়তা করবে। জঙ্গীবাদের মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এ ধরনের আয়োজন। বক্তব্যে সংস্কৃতিমন্ত্রী এ ধরনের উৎসবকে ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে দিতো অয়োজকদের প্রতি অনুরোধ জানান। মামুনুর রশীদ বলেন, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে যে সংকট চলে তা থেকে দেশ ভাগ হয়ে যায়। কিন্তু ভাষা, মানুষের তো কোন ভাগ হয় না। ভৌগলিকভাবে আমরা আলাদা হলেও বাঙালী হিসেবে আমরা একই সংস্কৃতির মানুষ। এ ধরনের উৎসব সেই একই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বিভাস চক্রবর্তী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে দুদেশের শিল্পীদের নিয়ে বিশাল সাংস্কৃতিক আয়োজন করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন সংস্কৃতিকে অবলম্বন করে দুই বাংলার মানুষকে এক করতে। দুই্ বাংলার মানুষের মাঝে সেই ইচ্ছাটা প্রবল থাকলেও প্রাতিষ্ঠানিক ও রাষ্ট্রীয় স্তরে তা খুব একটা এগিয়ে যাচ্ছে না। তা না গেলেও বাঙালিত্বের যাত্রাকে দুই দেশের মানুষ এগিয়ে নিয়ে যাবে। নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বলেন, এ ধরনের উৎসবের মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কটি আরও দৃঢ় হয়। এ ধরনের উৎসবের মাধ্যমে আমরা বাঙালীর জীবন ও সৃষ্টিশীলতার উদ্যাপন করি। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে ভারতের ড্যান্সার্স গিল্ড পরিবেশন করে জোনাকী সরকারের নির্দেশনায় ও ড. মঞ্জুশ্রী চাকীর নৃত্য পরিচালনায় নৃত্যনাট্য ‘তোমারই মাটির কন্যা’ এবং স্টুডিও থিয়েটার হলে পরিবেশিত হয় চন্দ্রকলা থিয়েটারের নাটক ‘তন্ত্রমন্ত্র’। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন এইচ আর অনিক। আজ শনিবার উৎসবের দ্বিতীয় দিন। এদিন সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে ভারতের নাট্যদল অনীক মঞ্চস্থ করবে ‘বিষঘুম’ এবং এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে থিয়েটার মঞ্চস্থ করবে ‘মেরাজ ফকিরের মা’। উন্মুক্ত মঞ্চের সাংস্কৃতিক পর্বে অংশ নেবে বহ্নিশিখা, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, নটরাজ, কথা আবৃত্তি চর্চাকেন্দ্র, ঢাকা স্বরকল্পন, তাল কালচারাল একাডেমি ও গতি থিয়েটার। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তন, এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হল ও স্টুডিও থিয়েটার হলে ভারতের চারটি দলের পাশাপাশি ঢাকা ও ঢাকার বাইরের ২৬টি নাট্যদল অংশ নিচ্ছে। এছাড়াও নয়টি পথ নাটক, ১৮টি আবৃত্তি সংগঠন, ১৮টি সঙ্গীত সংগঠন, ১৮টি নৃত্য সংগঠন, একক আবৃত্তি ও একক সঙ্গীত পরিবেশনা নিয়ে এ উৎসব আয়োজিত হচ্ছে। আনুমানিক আড়াই হাজার শিল্পী এ উৎসবে অংশ নিচ্ছে। ১২ অক্টোবর সকাল ১০টায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে ‘গঙ্গা-যমুনা পাড়ের সংস্কৃতি ও একটি অনুসন্ধান’ শীর্ষক সেমিনার। ‘টুনু ভাইকে নিবেদিত ছায়ানটের আনন্দ আয়োজন ॥ সবার প্রিয় দাদা বা টুনু ভাই আ.ফ.ম. সাইফুদ্ দৌলা গত ২৮ সেপ্টেম্বরে ৯০ বছরে পা রেখেছেন। তিনি ছায়ানটের বর্তমান সংগঠকদের মধ্যে প্রবীণতম। তাকে শুভেচ্ছা জানাতে শুক্রবার আনন্দ আয়োজন করে ছায়ানট। সন্ধ্যায় ছায়ানট মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তার প্রিয় তিন প্রজন্মের তিন শিল্পী গাইলেন গান। টুনু ভাইয়ের নিবিড়ভাবে দেখা তিন প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্য থেকে তারই নির্বাচিত প্রিয়দের অন্যতম ফাহ্দা খাতুন, ইফ্আরা দেওয়ান, মহিউজ্জামান ময়না ও লাইসা আহমদ লিসা। স্মৃতিচারণের সঙ্গে গান শুনিয়েছেন ছায়ানট সভাপতি সন্দা খাতুন। শুরুতেই সম্মেলক কণ্ঠে শিল্পীরা গেয়ে শোনান ‘আনন্দধ্বনি জাগাও গগনে’। মঞ্চে আসেন ইফফাত আরা দেওয়ান। তিনি রবীন্দ্র সঙ্গীত দিয়ে শুরু করেন। গেয়ে শোনান ‘শ্রাবণের ধারার মতো’ ও ‘মম দুঃখের সাধন’। এরপর ধরেন আঙ্গুরবালার গান ‘হাত ধরে তুমি নিয়ে চলো সখা’। শেষ করেন অতুলপ্রসাদ সেনের ‘আমি বাঁধিনু তোমার তীরে’। এরপর মহিউজ্জামান ময়নাও শুরু করেন রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে। তিনি একে একে গেয়ে শোনান ‘যেতে যেতে একলা পথে’, ‘যতবার আলো জ্বালাতে চাই’। শেষ করেন সলিল চৌধুরীর ‘পথে এবার নামো সাথী’ গান দিয়ে। এরপর সম্মেলক কণ্ঠে ছায়ানটের শিল্পীরা গেয়ে শোনায় ‘প্রাণ বরিয়ে তৃষা হরিয়ে’। একক গান নিয়ে এরপরে আসেন লাইসা আহমেদ লিসা। তিনি দুটি রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে শোনান। এগুলো হলো- ‘তুমি ছেড়ে ছিলে, ভুলে ছিলে বলে’ ও ‘বড় বেদনার মতো’। সবশেষে সন্জীদা খাতুন টুকরো টুকরো গান আর টুনু ভাইকে নিয়ে স্মৃতিকথায় আসর জমিয়ে তোলেন। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনরে মধ্য দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান। কুড়ি বছর পরে মঞ্চস্থ ‘গ্যালিলিও’ ॥ বিশ বছর পরে ঢাকার মঞ্চে ফিরে এলো দর্শকনন্দিত নাটক ‘গ্যালিলিও’। সেই সূত্রে দীর্ঘদিন পর মঞ্চে ফিরলেন আলী যাকের। আর সংস্কৃতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা আসাদুজ্জামান নূর ফিরলেন প্রায় বিশ বছর পর। শুক্রবার সন্ধ্যায় নাটকটি দেখতে মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে ছিল দর্শকদের উপচেপড়া ভিড়। এভাবেই বিপুলসংখ্যক দর্শককে সঙ্গী করে নবরূপে মঞ্চে এলো ‘গ্যালিলিও’। আতাউর রহমানের নির্দেশনায় অল্প সময়েই ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পায় নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের এই নাটকটি। ১৯৯৮ সালে হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় নাটকটির প্রদর্শনী। এবার নাটকটির নবরূপায়নে নির্দেশনা দিয়েছেন পান্থ শাহরিয়ার। বার্টল্ট ব্রেখটের ‘দ্য লাইফ অব গ্যালিলিও গ্যালিলি’ অবলম্বনে ‘গ্যালিলিও’ নাটকটির অনুবাদ করেন অধ্যাপক আবদুস সেলিম। দীর্ঘদিন পর অভিনয় করা প্রসঙ্গে আলী যাকের বলেন, শারীরিক অসুস্থতার জন্য কারণে মঞ্চে অভিনয় করতে বা নির্দেশনা দিতে পারছেন না তিন। তবে শরীর যদি সায় দেয়, তবে এ নাটকের মধ্য দিয়েই তিনি নিয়মিত অভিনয় করবেন বলে জানান। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, প্রায় বিশ বছর পর এই নাটকের মাধ্যমে আবার মঞ্চে ফিরে এলেন তিনি। অভিনয় সবসময়ই টানলেও, রাজনৈতিক ব্যস্ততায় অভিনয় করা হয়ে উঠে না। এখন থেকে নিয়মিত নাটকে অভিনয় করার চেষ্টা করবেন বলেও জানান তিনি। ‘গ্যালিলিও’ নাটকে নাম ভূমিকায় অভিনয় করছেন আলী যাকের, আসাদুজ্জামান নূর অভিনয় করছেন অধ্যক্ষ, বারবেরিনি ও পোপ চরিত্রে। খালেদ খানের চরিত্র আন্দ্রিয়া সার্তি চরিত্রে পান্থ শাহরিয়ার, সিনোরা সার্তি চরিত্রে ফারহানা মিছু, লুদোভিকা মার্সিলি চরিত্রে মোস্তাফিজ শাহীন, সাগরেদো ও বেলারমিন চরিত্রে কাওসার চৌধুরী, ফেদারজোনি চরিত্রে ফারুক আহমেদ, ধর্মযাজক চরিত্রে ফখরুজ্জামান চৌধুরীনহ নাগরিকের নতুন ও পুরোনো অভিনেতারা নাটকটিতে অভিনয় করেছেন। তিন দিনের এশিয়ান থিয়েটার সামিট ॥ স্বাগতিক বাংলাদেশসহ সাত দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে রাজধানীতে শুরু হলো তিন দিনের এশিয়ান থিয়েটার সামিট। ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার এ্যাসোসিয়েশনÑআইয়াটা’র এশিয়ান রিজিওনাল সেন্টারের উদ্যোগে এবং পিপলস থিয়েটার এ্যাসোসিয়েশন ও শিল্পকলা একাডেমির যৌথ আয়োজনে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। শুক্রবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে এ সম্মেলনের সূচনা হয়। উদ্বোধনী আয়োজনে অংশ নেন নাট্যজন আতাউর রহমান, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, সিঙ্গাপুরের চাইনিজ অপেরা ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক চুয়া সু পং, জাপানের অধ্যাপক ইয়াসু নাগাটা, হংকংয়ের চান কাম কুয়েন, চীনের চেন ইয়া জিন ও কোয়াও জিংপিং, ভারতের রবিজিতা গোগোই, ফিলিপাইনের অধ্যাপক জিমি ফং এবং ঢাকার ইরানী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পক্ষে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কাজেম কাহ্দোহি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেন, যেকোন অশুভ শক্তির বিপরীতে মঞ্চনাটক একটি শক্তিশালী অস্ত্র। অবিবেচকদের অমানবিক কর্মকা-ের বিপরীতে মঞ্চনাটককে আরও বেশি শক্তিশালী করতে হবে। সময়ের প্রেক্ষাপটে এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর নাট্যদলগুলোর মধ্যে যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি করতে হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এর শুরুতেই বাঁশিতে সুরের মূর্ছনা পরিবেশন করেন শিল্পী মনিরুজ্জামান। এর পর ছিল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিল্পীদের পরিবেশনা নৃত্য। সবশেষে ‘মঙ্গল হোক এই শতকে’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা। উদ্বোধন শেষ দিনভর নানা অধিবেশনে নিজ নিজ দেশের নাট্যচর্চার ইতিহাস ও বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করেন সিঙ্গাপুরের চুয়া সু পং, জাপানের অধ্যাপক ইয়াসু নাগাটা, হংকংয়ের চান কাম কুয়েন, চীনের চেন ইয়া জিন ও কোয়াও জিংপিং, ভারতের রবিজিতা গোগোই এবং ফিলিপাইনের অধ্যাপক জিমি ফং। হাতিরঝিলে ‘ওয়াটারনেস’ ॥ নাচের সঙ্গে ছিল সুর। সেই সঙ্গে যুক্ত হয় মার্শাল আর্টস, আবৃত্তি, তাইচি, মাইম, চিঠি, চিত্রÑসবকিছুই ছিলো এক পরিবেশনায়। এভাবেই পরিবেশিত হয় তুরঙ্গমী রেপার্টরি ড্যান্স থিয়েটারের নৃত্যনাট্য ‘ওয়াটারনেস’। ৪৫ মিনিট দৈর্ঘ্যরে এ নৃত্যনাট্য দেশ ও দেশের বাইরে পরিবেশনার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় হাতিরঝিলের মুক্তমঞ্চে মঞ্চস্থ হয়। কলকাতার ধীমান ভট্টাচার্যের চিত্রনাট্যে নৃত্যনাট্যটির মূল ভাবনা, নক্সা, নৃত্য পরিচালনা ও নির্দেশনায় ছিলেন পূজা সেনগুপ্ত। ‘ওয়াটারনেস’ মূলত জল ও নারীর সম্পর্কের আখ্যান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের ছায়া অবলম্বনে প্রযোজনাটির মূল প্রেরণা ছিল কাদম্বরী দেবী। আর তাই তাকেই উৎসর্গ করা হয়েছে প্রযোজনাটি। বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় তৈরি ‘ওয়াটারনেস’- এর নৃত্য ও অভিনয়ে ছিলেন পূজা সেনগুপ্ত, রক্তিম গোস্বামী, আতিক রহমান, শ্রেয়সী ত্রয়ী, ইয়াসনা রহমান, নবনীতা দেব, লোপা সুস্মিতা, নাফিজ বাঁধন, মোঃ দাউদুল ইসলাম। সুমন সরকারের সঙ্গীত পরিচালনায় গানে কণ্ঠে দিয়েছেন জয়তী চক্রবর্তী, স্বপ্নীল সজীব, সৌনাক চট্টোপাধ্যায়, ডোনা দাস ও শ্রীকান্ত আচার্য। আবৃত্তির আসর ‘কবিতার কথা’ ॥ আবৃত্তি সংগঠন বাকশিল্পাঙ্গন শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে আয়োজন করে আবৃত্তির আসর ‘কবিতার কথা’। দলের তিন নিয়মিত বাচিকশিল্পী ইমরুন নাহার ইমু, নুৎফা বিনতে রব্বানী ও ডলি দাসের সঙ্গে এই আসরে অতিথি হিসেবে আবৃত্তি করেন সৈয়দ শহীদুল ইসলাম নাজু ও মাহফুজ মাসুম। ইমরান নাহার ইমু আবৃত্তি করেন রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’র ‘আমি সেই অভিমান’, রফিক আজাদের ‘যদি ভালোবাসা পাই’, ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘দহনের চিঠি’ ও নির্মলেন্দু গুণের ‘প্রথম অতিথি’। নুৎফা বিনতে রব্বানী আবৃত্তি করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ইচ্ছামতি’ ও ‘কুয়ার ধারে’, নির্মলেন্দু গুণের ‘কাশবনে বৃষ্টি’, আদিত্য অনিকের ‘লবণ’, সব্যসাচী দেবের ‘চ-ালিকা’ এবং শহীদ কবি মেহেরুন্নেসার ‘জনতা জেগেছে’ কবিতাগুলো। ডলি দাস আবৃত্তি করেন আবু জাফর ওবায়দুল্লাহের ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’, মদিনা খাতুনের ‘একজন মায়ের চিঠি’, আবু হেনা মোস্তফা কামালের ‘নিষিদ্ধ গোলাপ’। এছাড়াও ড. নীলিমা ইব্রাহিমের ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’র নির্বাচিত অংশ। সৈয়দ শহীদুল ইসলাম নাজু আবৃত্তি করেন জীবনানন্দ দাসের ‘সহজ’, খোন্দকার আশরাফ হোসেন আবৃত্তি করেন ‘হোরেশিওর প্রতি হ্যামলেট’ ও সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘প্রিয়তমাসু’। মাহফুজ মাসুম আবৃত্তি করেন শুভ দাশগুপ্তের ‘পুতুল’, ভাস্বর চৌধুরীর ‘আমার বন্ধু নিরঞ্জন’, জীবনানন্দ দাসের ‘লোকেন বোসের জার্নাল’, নির্মলেন্দু গুণের ‘ফিরে এসো নিরঞ্জন’ ও হুমায়ূন আজাদের ‘খোকনের সানগ্লাস’। রবিরশ্মির দুই দশক ॥ পথচলার দুই দশক পূর্ণ করল সঙ্গীত সংগঠন ‘রবিরশ্মি’। এ উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে সংগঠনটি আয়োজন করে ‘প্রেমের জোয়ারে ভাসাবে দোহারে’ শীর্ষক সঙ্গীতসন্ধ্যা। এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুপ ভট্টাচার্য্য। সূচনা বক্তব্য রাখেন রবিরশ্মি’র পরিচালক শিল্পী মহাদেব ঘোষ। অনুষ্ঠানে সংগঠনের শিল্পীরা রবীন্দ্রনাথের পূজা, প্রেম, প্রকৃতি পর্যায়ের গান, আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশন করেন।
×