ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জেনেভায় বিশ্ব বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি

বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে আঙ্কটাডের সহায়তা চাওয়া হবে

প্রকাশিত: ০৪:৪৪, ১ অক্টোবর ২০১৮

বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে আঙ্কটাডের সহায়তা চাওয়া হবে

এম শাহজাহান ॥ বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ। সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশগ্রহণে বাংলাদেশ প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। বিশ্ব উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ টানতে কর্মকৌশল নির্ধারণসহ এজেন্ডা চ‚ড়ান্ত করে আনা হয়েছে। ওই সম্মেলনে যোগ দেবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। বাংলাদেশ যে, বিনিয়োগের উর্বরভ‚মি সেটা সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করা হবে। বিশ্বনেতাদের পাশাপাশি এবারের সম্মেলনে ১৬০টি দেশের প্রায় ৪ হাজার বিনিয়োগকারী উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। এদিকে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। স্বল্পোন্নত থেকে মধ্যম আয়ের দেশে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। গত এক দশকে কিভাবে বাংলাদেশ সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গেল, সেই তথ্যও সরকারের পক্ষ থেকে বিনিয়োগ সম্মেলনে তুলে ধরা হবে। বিনিয়োগমুখী মেগা প্রকল্প গ্রহণ করায় বিশ্ব উদ্যোক্তারা বাংলাদেশ মুখী হচ্ছেন। বিনিয়োগাকারীদের জন্য ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হচ্ছে। কোন দেশ চাইলে পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করছে সরকার। শুধু তাই নয়, বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কর্পোরেট ট্যাক্স কমানোসহ লভ্যাংশ দ্রæত নিজ দেশে নিতে পারছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। এছাড়া বিনিয়োগের জন্য সব ধরনের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এসব বিবেচনায় বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের জন্য উর্বরভূমি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, শেখ হাসিনার সরকার বিনিয়োগবান্ধব সরকার। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে গত কয়েক বছর ধরে কাজ করা হচ্ছে। অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য মেগা প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এ কারণে বিদেশী উদ্যোক্তারা এখন বাংলাদেশমুখী। তারা এদেশে বিনিয়োগ করতে আসছেন। তিনি বলেন, দেশে চীন, জাপান ও ভারতের বিনিয়োগ আসছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য মুখিয়ে আছেন। এছাড়া দেশীয় উদ্যোক্তারাও বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন। সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের উৎকৃষ্ট স্থান। এ কারণে সরকারের পক্ষ থেকে আমরা যেখানেই যাচ্ছি, সেখানেই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার কথা বলছি। জানা গেছে, ইতোপূর্বে নাইরোবী ও জেনেভায় অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরামের বৈঠকে আঙ্কটাড কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়তা করার আশ্বাস দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত কয়েক বছর দেশে-বিদেশে বেশকিছু আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সম্মেলনেও সমান তালে অংশগ্রহণ করা হয়। ফলে গত এক দশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আসা শুরু হয়েছে। জানা গেছে, আগামী ২২-২৬ অক্টোবর জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের উদ্যোগে জেনেভায় বিশ্ব বিনিয়োগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, বিনিয়োগকারী, উর্ধতন সরকারী কর্মকর্তা, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত ইস্যুর পাশাপাশি এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত এজেন্ডা-২০৩০ বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হবে। এতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের সিদ্ধান্তকে বাস্তবে রূপায়নের জন্য জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অর্থায়ন ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের বিষয়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ ও উন্নয়ন সম্পর্কিত ইস্যু নিয়ে আলোচনা ও এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈশ্বিক ফোরাম হচ্ছে বিশ্ব বিনিয়োগ সম্মেলন। ব্যাপক স¤প্রচারের মাধ্যমে এ ফোরাম বিনিয়োগের লক্ষ্যস্থল হিসেবে বিশ্বের ব্যবসা ও বাণিজ্য নেতাদের কাছে বাংলাদেশের পরিচিতি বাড়াতে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। জানা গেছে, এবারের সম্মেলনে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশ সরকারের নেয়া উদ্যোগ ও কর্মসূচী সফলভাবে তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সম্মেলনে অংশ গ্রহণকারী দেশ ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা সম্পর্কে নতুন করে ধারণা পাবে। এছাড়া সম্মেলনের মাধ্যমে আঙ্কটাড সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বেসরকারী খাতে উদ্ভাবনী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অগ্রাধিকার পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। জানা গেছে, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে শুধু উন্নয়নশীল দেশগুলোতেই বছরে তিন দশমিক নয় ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন। এর বিপরীতে বর্তমানে প্রতি বছর মাত্র এক দশমিক চার ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনয়োগ হচ্ছে। বাংলাদেশসহ জলবায়ুর ঝুঁকিতে থাকা স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে অধিকহারে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে আঙ্কটাড’র সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিও আহবান জানানো হবে। এছাড়া সম্মেলনে বেসরকারী খাতে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিনিয়োগ উদ্বুদ্ধ করতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ চাওয়া হবে বলে জানা গেছে। কারণ বেসরকারী খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ থাকলেও তা সৃজনশীল খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে না। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সরকারী পর্যায়ে বিনিয়োগ আসলেও, বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ আসে না। এ কারণে এবারের সম্মেলনে বেসরকারী খাতের বিনিয়োগের ব্যাপারেও বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে।
×