ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছিটমহল বিনিময়ের ৩য় বর্ষ, জমকালো অনুষ্ঠান

শেখ হাসিনা মা জননী আমরা তার মুক্তি সেনার দল...

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৩১ জুলাই ২০১৮

শেখ হাসিনা মা জননী আমরা তার মুক্তি সেনার দল...

তাহমিন হক ববী ॥ দেখতে দেখতে ছিটমহল বিনিময়ের তিনবছর হয়ে গেল। আগামীকাল পহেলা আগস্ট বিগত বছরগুলোর মতো এবারও সাবেক ছিটমহলবাসীরা নানান আনন্দঘন আর জমকালো কর্মসূচীর মধ্যে দিয়ে ‘তৃতীয় বর্ষ ছিটমহল বিনিময় দিবস’ পালন করবে। এদিকে, আজ মঙ্গলবার ৩১ জুলাই ছিটমহল বিনিময়ের ৩ বছর পূর্তি পালন উপলক্ষে নানা আয়োজনে দিনটি পালন করছে কুড়িগ্রামের বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী। বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময়ের ৩ বছর পূর্তির এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে দেশের সর্ববৃহৎ ছিট কুড়িগ্রামের দাসিয়ারছড়াসহ ১১১টি বিলুপ্ত ছিটের মানুষ মেতে উঠেছে নানা আনন্দ আয়োজনে। মূলত কোন রকম রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বা যুদ্ধ ছাড়াই ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই রাত ১২টা ১ মিনিটে ছিটমহল বিনিময় কার্যকর হয়েছিল। যা ১৯৭৪ সালের ইন্দিরা-মুজিব স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক স্থলসীমা দীর্ঘ ৪১ বছর পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হন। বাংলাদেশ-ভারত স¤পর্কের ক্ষেত্রে ২০১৫ সাল ছিল নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। ফলে প্রায় ৫২ হাজার ছিটের লোকদের জীবন থেকে ৬৮ বছরের অবরুদ্ধতার অবসান ঘটেছে। মিলেছে রাষ্ট্র ও নাগরিক পরিচয়। মিলেছে জীবনের নিরাপত্তা ও মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার সাবেক ছিটমহলবাসী ভোট দিতে পারবে। জীবনের প্রথম ভোট দিবে তারা সরকার গঠনের নির্বাচনে। তাই তাদের মুখে সুর উঠেছে ‘শেখ হাসিনা আমাদের মা জননী আমরা তার মুক্তিসেনা দল’। সাবেক ছিটমহলের সবুজ বৃক্ষঘেরা পরিচ্ছন্ন পথ ধরে এগিয়ে গেলে চোখে পড়ে নীলফামারীর ডিমলায় সাবেক ছিটমহলের গয়াবাড়ি ইউনিয়নের রহমানের বাজার। এখানে কথা হয় বিলুপ্ত ছিটমহলের নয়াবাংলা গ্রামের সফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন কী পেলাম? কী পেলাম না? এ নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা নেই আমাদের। যেটি বড় পাওয়া সেটি আমরা পেয়ে গেছি। ৬৮ বছরের বন্দীদশা হতে মুক্ত হয়েছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ আমাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়েছে। আজ আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, পেয়েছি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। তিনি বললে এবার আমরা বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেয়ার সুযোগ পাব। আমাদের প্রথম ভোটটা আমরা আমাদের মা জননী শেখ হাসিনার নৌকা প্রতীকে দিতে চাই। এমন কথা আরও বললেন জয়নাল, রফিকুল, সফিয়ারসহ সকলেই। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ২৮ নম্বর বড়খানকি খারিজা বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দা ময়মনা বেগম। জন্ম ১৯০২ সালের পহেলা জানুয়ারি। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী এই বৃদ্ধার বয়স ১১৬ বছর। এই বৃদ্ধার বাড়িতে গেলে তিনি জানালেন, আগে তিনি ছিটমহলের বাসিন্দা ছিলেন। তবে এখন আর ছিটমহলের বাসিন্দা নন। তিনি বলেন, আমি সেই আমি নই। আমি এখন বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক। আমার ছেলে মুক্তিফৌজ গর্বের সঙ্গে এ কথা জানিয়ে বৃদ্ধা বললেন আমি এখন বাংলাদেশের নাগরিক তাই আমার জীবনের শেষ ইচ্ছা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একবার দেখবার চাই। বৃদ্ধা জানালেন তিনি যদি বেঁচে থাকেন তাহলে সরকার গঠনের ভোটে তার সিল যাবে নৌকায়। বৃদ্ধাকে দেখে মনে হলো - যেই আমি, এইখানে আছি সে-ই ছিল ঠিক ওইখানে। বৃষ্টির জল সব ধুয়ে নিল, নদী গেল মুছে, ঘুচে গেছে মেঘ, কুয়াশা অনল। সেই আমি- এই আমি- ছিটের আমি নই -এখানে যে আছে, ছায়া হয়ে আছে, অচেনা অন্য কেউ...। জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা এই বৃদ্ধা আজ বিলুপ্ত ছিটমহলের এক জীবন্ত ইতিহাস বৈকি! ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে রচিত হয় নতুন এক ইতিহাস। দীর্ঘ ৬৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত থেকে উঠে যায় ছিটমহল। তারা বিচ্ছিন্ন কোন আর ভূখ-ের নয়, স্বাধীন দেশের নাগরিক বনে যায়। বাংলাদেশ-ভারতের মূল ভূখ-ে মিশে যায় ১৬২ ছিটমহল। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহলের নাম হয়ে যায় বাংলাদেশ। আর নাগরিক পরিচয় হয় বাংলাদেশী। অপরদিকে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলও বিলীন হয়ে যায় ভারতে, সেখানকার নাগরিকরা হয় ভারতীয়। দেশের ১১১টি সাবেক ছিটমহলে (বিলুপ্ত ছিটমহল) তৃতীয় মুক্তদিবস বার্ষিকী হিসেবে পালন করা হবে। আগামীকাল পহেলা আগস্ট। সরকার বিগত তিন বছরে ছিটমহলবাসীর উন্নয়নে নেয়া সকল কাজ দৃশ্যমান করেছে। উন্নয়ন কাজ এখনও চলছে। কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়া বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী নাগরিকত্ব ভোটার আইডি কার্ড, বিদ্যুত, রাস্তাঘাট, প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। তৃতীয় ছিটমহলমুক্ত দিবস পালন উপলক্ষে পহেলা আগস্ট সূর্য ওঠার পর সকালে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে সাবেক ছিটমহলবাসী। প্রতিটি ছিটমহলে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, আনন্দ র‌্যালি, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সরকারী দল প্রতিটি বিলুপ্ত ছিটমহলে আলোচনা সভা করবে। সেখানে তৃতীয় বছরে প্রশাসনিক কার্যক্রম ও বিলুপ্ত ছিটমহলের উন্নয়নে নেয়া নানামুখী উন্নয়ন কর্মকা- স¤পর্কে আলোচনা হবে। কুড়িগ্রাম ॥ রাজু মোস্তাফিজ জানান, ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ৬৮টি মোমবাতি জ্বালিয়ে দু’দেশের অভ্যন্তরে থাকা ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হয়। তারপর থেকেই এদেশের ছিটমহলগুলোতে শুরু হয় নানা উন্নয়নমূলক কর্মকা-। ছিটবাসীর দাবি উন্নয়নের এ ধারা যেন অব্যাহত থাকে।
×