ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রতি জেলায় মাদকবিরোধী আদালত গঠনের সুপারিশ র‌্যাব ডিজির

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৩০ জুলাই ২০১৮

 প্রতি জেলায় মাদকবিরোধী আদালত গঠনের সুপারিশ র‌্যাব ডিজির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের নিয়ে দেশের ৬৪ জেলায় মাদকবিরোধী বিশেষ আদালত গঠনের সুপারিশ করেছেন র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, সময় এসেছে এসব বন্দীদের জন্য বিশেষ জেল করার। বঙ্গোপসাগরের কোন দ্বীপ বা বিচ্ছিন্ন কোন জায়গায় সে জেলখানা হতে পারে। রবিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত মাদকবিরোধী ‘এ্যাকশন প্ল্যান’ বাস্তবায়ন বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কর্মশালায় স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী এ্যাকশান প্ল্যান উপস্থাপন করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, দেশের নিম্ন আদালতে বর্তমানে ৩০ লাখ মামলা পেন্ডিং আছে। অনেক আসামি ধরা হয় কিন্তু মামলার জট ও দীর্ঘসূত্রতায় বাদী সাক্ষী না পাওয়ায় পার পেয়ে যায়। আমি দেশের ৬৪ জেলায় শুধু মাদক সংক্রান্ত আসামিদের বিচারের জন্য একটি আলাদা আদালতের সুপারিশ করছি। সেটা ৫/৬ বছরের জন্যই হোক না কেন। এ সময় তার পাশে বসা ছিলেন সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। বেনজীর আহমেদ বলেন, অবসর প্রাপ্ত বিচারকদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে প্রতি জেলায় একটা করে ৩ সদস্যের বিশেষ আদালত করা যেতে পারে। কারণ আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা মাত্র ১ হাজার ৮শ’। বিশেষ আদালতের জন্য নতুন করে নিয়োগ দিতে হলে অনেক দীর্ঘসূত্রতা দেখা যাবে। আমি বলব বিশেষ আদালত করে তাদের বিচার করা হোক। বিচারে আসামি খালাস পাক, তারপরও বিচারটা হোক। দেশের ৩৬ হাজার বন্দীর ধারণক্ষমতার জেলখানায় ৯০ হাজার বন্দী রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বন্দীদের ৪৪ শতাংশই মাদক মামলার। তার মানে জেলখানার ধারণক্ষমতার সমপরিমাণ বন্দী মাদক সংশ্লিষ্টতায়। সময় এসেছে এসব বন্দীদের জন্য বিশেষ জেল করার। বঙ্গোপসাগরের কোন দ্বীপ বা বিচ্ছিন্ন কোন জায়গায় সে জেল হতে পারে। দয়া করে এটা করে দিন, যাতে মাদক মামলার আসামিদের আলাদা করতে পারি। এতে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাটাও সহজ হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এ্যাকশন প্ল্যানে চাকরিতে প্রবেশের সময় ডোপ টেস্ট করানো সিদ্ধান্তের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, অবশ্যই ভাল খবর। পৃথিবীর কোন দেশই মাদকমুক্ত নয়, তবে এটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে এটা আমাদের সর্বাত্মক যুদ্ধ, যে যুদ্ধে বিজয়ী হয়েই আমরা ঘরে ফিরব। আমি চাই ডোপ টেস্ট শুধু চাকরির ক্ষেত্রে নয়, এটা রেনডমলি (সবার ক্ষেত্রে) চালু হোক। মাদক আইনে পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাদকে একমাত্র শাস্তি হতে হবে মৃত্যুদন্ড। মাদক বিক্রি, সেবন সবক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ সাজার বিধান থাকতে হবে মৃত্যুদন্ড। মাদকবিরোধী অভিযানের সমালোচকদের ওপর ক্ষোভ ঝেড়ে বেনজীর আহমেদ বলেন, কোনকিছু শুরু করলে একশ্রেণীর মানুষ চিৎকার শুরু করেন। তারা আসলে কি পেতে চায়? জঙ্গীবিরোধী অভিযানের সময়ও দেখেছি তারা রাতের পর রাত টেলিভিশনে বসে চিৎকার করছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী বলেন, সরকারী চাকরিতে প্রবেশের সময় স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি ডোপ টেস্টের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া, বেসরকারী চাকরিতে নিয়োগ কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সময়েও ডোপ টেস্টের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এই এ্যাকশন প্ল্যানটি প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সেখান থেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে এবং কর্মকর্তাদের ওয়ার্কশপের মাধ্যমে এগুলো বুঝিয়ে দিতে বলা হয়েছে। অল্প সংখ্যক জনবল নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর খুব ভাল কাজ করছে। তাদের জন্য আরও ৬ হাজার ৭শ’ জনবলের চাহিদা জানানো হয়েছে। আশা করছি, শীঘ্রই তাদের জনবল সাড়ে ৮ হাজারে দাঁড়াবে। মাদকের বিরদ্ধে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। মাদকের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ মেসেজ হচ্ছে, ‘বাংলাদেশ থেকে মাদক শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।’ আমরা অভিযান চালিয়ে যাব। পাশাপাশি দেশে মাদকের চাহিদা নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জামালউদ্দীন আহমেদ বলেন, অধিদফতর এ পর্যন্ত মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায়ে জড়িত মোট ১৩ হাজার জনকে গ্রেফতার করেছে। ১২ হাজারের বিরদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গ্রেফতারের সংখ্যাটা কম মনে হলেও আমাদের যত সংখ্যক ফোর্স আছে সে অনুযায়ী অনেক বেশি। মাদক নিয়ন্ত্রণে উত্থাপিত এ্যাকশন প্ল্যানে স্বল্পমেয়াদী (১ বছর), মধ্যমেয়াদী (২ বছর) ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা (৫ বছর) করা হয়েছে। এতে মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন, মাদকের প্রবেশ রোধ, অপারেশন কার্যক্রম প্রণয়নের বিভিন্ন সময়কাল উল্লেখ করা হয়েছে।
×