ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আরও একটি পাইলের কাজ সম্পন্ন হবে আজ

পদ্মা সেতু ॥ মাওয়ায় শীঘ্রই বসছে তিন স্প্যান

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৮ জুলাই ২০১৮

 পদ্মা সেতু ॥ মাওয়ায় শীঘ্রই  বসছে তিন স্প্যান

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতু এবার দৃশ্যমান হচ্ছে মাওয়া প্রান্তে। মাওয়ার তীর ঘেঁষা ২, ৩, ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটি পুরোপুরি সম্পন্ন হয়ে গেছে। এই চার খুঁটিতে শীঘ্রই উঠবে তিন স্প্যান। তবে শুরুতেই উঠছে ২ ও ৩ নম্বর খুঁটিতে। তবে ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটি উঠে গেলে এবং এক নম্বর খুঁটি সম্পন্ন হলে কিছু নাড়াচাড়া করতে হবে শুধু। কারণ পদ্মা সেতুর ডিজাইন অনুযায়ী ৭টি গ্রুপে স্প্যান বসানো হবে। এক নম্বর গ্রুপ হচ্ছে-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটি মিলে। যে কোন গ্রুপেরই এক প্রান্ত থেকে হয় ১ ও ২ নম্বর খুঁটি থেকে না হয় ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটি থেকে স্প্যান উঠানোর কথা। সেই অনুযায়ী মাওয়া প্রান্তে প্রথম স্প্যান দৃশ্যমান করতে চেয়েছিল কর্তৃপক্ষ। সেই অনুযায়ী প্রথম ৭ নম্বর খুঁটিতে পাইল শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই খুুঁটির পাইল কাজ শুরুর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর মূল কাজের উদ্বোধন করেন। এই খুঁটির পাশে ৬ নম্বর খুঁটিতেও পাইল বসানো শুরু হয়। দুই খুঁটিতেই পাইল বসে ৩টি করে মোট ছয়টি। এই দুই খুঁটির জন্যই ‘১-এফ’ নম্বর প্রথম স্প্যান চীন থেকে দেশে আসে। কিন্তু নদীর তলদেশে নরম মাটির দেখা দেয়া। তাই বিশেষজ্ঞদের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়। এতেই মূল সেতুর কাজ সরিয়ে নেয়া হয় আগে জাজিরা প্রান্তে। তাই জাজির প্রান্তে ৭ নম্বর গ্রুপের ৫টি স্প্যানই বসে গেছে আগে। তবে এবার নরম মাটিকে বস মানানো হয়েছে। ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটিসহ ২২টি খুঁটির ডিজাইনে পরিবর্তন এনে ছয়টির স্থলে ৭টি করে পাইল বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই পরিবর্তিত ডিজাইন অনুযায়ী এই ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটিতে আরও ৪টি করে পাইল স্থাপন এবং গভীরতায় খানিকটা কম বেশি করা হচ্ছে। এমন সিদ্ধান্তে সকল বিশেষজ্ঞ একমত হওয়ার পরই পদ্মা সেতুর কাজে নতুন গতি আসে। তাই মাওয়া প্রান্তেও কাজ শুরু হয় পুরোদমে। ২, ৩, ৪ ও নম্বর পিলার সম্পন্ন ছাড়াও ১৩ নম্বর খ্ুঁটির কাজ সম্পন্ন। ১৪ নম্বর খুঁটির কাজও একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে। এছাড়াও বর্ষার পরেই ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটির বাকি পাইল স্থাপানের কাজ শুরু হবে। এদিকে তীরের ১ নম্বর খুঁটির কাজও এগিয়ে চলেছে। ১৬টি পাইলের মধ্যে ১২টি পাইল সম্পন্ন। আরও একটি পাইলের কাজ আজ শনিবার সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এই পাইল বসানোর পরও খুঁটি উঠতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। তাই এক প্রান্ত থেকে স্প্যান বসানো বিলম্ব হচ্ছে। কিন্তু এদিকে চীন থেকে আসা স্প্যানের স্থুপ পরে গেছে মাওয়ার কুমারভোগের বিশেষায়িত ওয়ার্কসপে। স্প্যান রাখার আর জায়গা নেই। তাই চীনে তৈরি করে রাখা স্প্যানগুলো পাঠাতে পারছে না। কুমারভোগের এই ওয়ার্কসপে এখনও ১৩টি স্প্যান রয়েছে। এর মধ্যে ৫টা স্প্যান ফিটিংস হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত ১৮টি স্প্যান চীন থেকে আনা হয়। বাকি ৫টি স্প্যান সেতুতে ফিটিং করা হয়েছে। তাই এক প্রান্তের পরিবর্তে আপাতত মাঝের খুঁটি থেকেই স্প্যান বসানো শুরু হচ্ছে। তাই শীঘ্রই ১ নম্বর গ্রুপের ছয়টি স্প্যানের মধ্যে ৩টিই বসিয়ে দেয়া হবে। এমনভাবে বসানো হবে যাতে পারে আবার নাড়াচড়া করা যায়। কারণ ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটি এবং ১ নম্বর খুুঁটি উঠে গেলে পাকাপোক্তভাবে স্থাপন করা হবে। এতে ওয়াকর্সপের জায়গা খালি হবে। চীনে তৈরি হয়ে থাকা স্প্যানগুলো কুমারভোগ ওয়ার্কসপে এনে ফিটিং এবং রং করাসহ অন্যান্য কাজ এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। পদ্মা মূল সেতুর ৪২টি খুঁটির ওপর বসবে ১৫০ মিটার দীর্ঘ ৪১টি স্প্যান। এছাড়া প্রায় সব স্প্যানই তৈরি হয়ে গেছে বলে সেতু কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন। সেতুর ৭টি গ্রুপের মধ্যে ৬ নম্বর গ্রুপের স্প্যানও কুমারভোগে ওয়ার্কসপে এসে গেছে। ছয় নম্বর গ্রুপের ছয়টি স্প্যানের মধ্যে প্রথম বসবে ‘৬-এফ’ নম্বর স্প্যান। এটি বসবে ৩৬ ও ৩৭ নম্বর খুঁটিতে। ৩৭ নম্বর খুঁটির অপর প্রান্তে রয়েছে অপর গ্রুপের ‘৭-এ’ নম্বর স্প্যান। এই ৩৭ নম্বর খুঁটিতে জোড়া লাগবে ৬ ও ৭ গ্রুপ। তবে ৩৬ নম্বর খুঁটির কাজ এখনও বাকি। তাই ‘৬-এফ’ নম্বর স্প্যানটি বসতে এখনও আরও সময় দরকার বলে শুক্রবার দায়িত্বশীল প্রকৌশলীগণ জানিয়েছেন। এদিকে সংযোগ সেতুর কাজও অনেকটা এগিয়ে গেছে। মূল সেতু ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর সঙ্গে যুক্ত থাকবে দু’প্রান্তে আরও প্রায় ৩ কিলোমিটার সংযোগ সেতু। মাওয়া ও জাজিরা মিলে এই সংযোগ সেতুর ৩৬৫টি পাইলই বসে গেছে। এখন উঠতে শুরু করেছে ক্যাপ ও খুঁটি। মাওয়া প্রান্তের প্রায় দেড় কিলোমিটার সংযোগ সেতুর ১৭২টি পাইলের ওপর ৩৮টি ক্যাপ হচ্ছে। এই ৩৮ ক্যাপের ওপর ৩৮টি খুঁটি উঠবে। ইতোমধ্যেই ৮টি ক্যাপ হয়ে গেছে। আর খুঁটি উঠেছে ২টি। অন্যদিকে আগে শুরু হওয়া জাজিরা প্রান্তের দেড় কিলোমিটারেরও বেশি সংযোগ সেতুর জন্য ১৯৩টি পাইলের ওপরে ক্যাপ হচ্ছে ৪২টি। যার মধ্যে ৩৪টি ক্যাপ হয়ে গেছে, খুঁটি উঠেছে ৮টি। এছাড়া পদ্মায় মূল সেতুর ২৬২টি পাইলের মধ্যে ১৫৮টি পাইল বসে গেছে। আরও ১৩টি পাইলের বটম শেকসন হয়েছে। শ্রাবণের মুষলধারে বৃষ্টি উপেক্ষা করে এগিয়ে চলেছে পদ্মা সেতুর কাজ। স্প্যানের ওপরে স্লাভ তৈরির কাজেও গতি আসছে। রোডওয়ে বক্স স্লাভ ২৮টি সম্পন্ন হয়েছে। নানা সাইজের এই বক্স স্লাভ প্রয়োজন হবে ৩ হাজার ৫০টি। এই স্লাভের ওপর দিয়েই চলবে গাড়ি। কুমারভোগ ওয়ার্কসপের উত্তর পাশে এই স্লাভ তৈরি হচ্ছে। আর নিচের তলার ট্রেনের জন্যও সমপরিমাণ স্লাভ তৈরি হচ্ছে। ইতোমধ্যেই সাড়ে ৫শ’র বেশি ট্রেন ওয়ে বক্স স্লাভ হয়ে গেছে। এভাবেই দ্রুত এগিয়ে চলেছে বাঙালীর গৌরব পদ্মা সেতু তৈরির কাজ। পদ্মা সেতুর সর্বশেষ টেস্ট পাইল বসানো হচ্ছে এখন। এটি বসানো হবে মাঝ পদ্মায় অর্থাৎ ২৫ থেকে ২৮ নম্বর খুঁটির মাঝামাঝি স্থানে। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ৩ মিটার ডায়া বিশিষ্ট এ টেস্টিং পাইল স্থাপনের সম্ভবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে কুমারভোগ ওর্য়াকশপে পাইলের টিউব তৈরি করা হয়ে গেছে। ‘ডিটি ১০’ নম্বর এই টেস্টিং পাইল স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল প্রায় তিন মাস আগে।
×