ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বামীর পরকীয়ার যৌতুকের বলি সোমার সংসার

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ২৩ জুলাই ২০১৮

স্বামীর পরকীয়ার যৌতুকের বলি সোমার সংসার

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া ॥ স্বামীর পরকীয়ার সম্পর্ক জেনেও সব মেনে নেয় গৃহবধু সোমা আক্তার রহিমা। ট্রাক্টর মেশিন কিনে দিয়েছেন। যৌতুক দিয়েছেন প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। তারপরও মন গলেনি পাষন্ড স্বামী শাহবুদ্দিন জোমাদ্দার, শাশুড়ি সালেহা বেগমসহ ননদ ভাসুরদের। সবশেষ বাড়ি থেকে বিতাড়িত করতে সোমার পাঁচ বছর বয়সী শিশু সন্তান প্রতিবন্ধী ইয়াসিন ও নয় মাসের সুমাইয়াকে হত্যা করতে বিষ খাইয়ে দেয়। নিজের নাতিদের বিষ খাইয়ে মেরে ফেলার চক্রান্ত মা হয়ে নিজ চোখে দেখে সোমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। এমনকি চিকিৎসা নিতে পর্যন্ত বাধা দেয়া হয়। হাসপাতালে নিতে পর্যন্ত ননদ, ভাসুররা গৃহবধু সোমাকে আটকে দেয়। সোমা হাতে-পায়ে ধরে কান্নাকাটি করছিলেন। কিন্তু পাষন্ডদের হৃদয় গলেনি। ভাইদের সহায়তায় দুই সন্তানকে প্রথমে কলাপাড়া হাসপাতালে পরে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করায়। এমন লোমহর্ষক নির্যাতনের এবং শিশু সন্তানদের হত্যার চেষ্টার অভিযোগে সোমা আক্তার কলাপাড়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬ জুলাই একটি মামলা করেছেন। যেখানে শাশুড়ি সালেহা বেগম, স্বামী শাহাবুদ্দিন, ননদ, দেবর, ভাসুর, ননদের জামাইসহ আট জনকে আসামি করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে ২০ জুলাই কলাপাড়া থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার বিবরন ও সোমার দেয়া তথ্যমতে, ২০১০ সালের মার্চ মাসে বালিয়াতলী ইউনিয়নের কাংকুনিপাড়া গ্রামের লাল মিয়া জোমাদ্দারের ছেলে শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সোমা আক্তারের বিয়ে হয়। সোমার বাড়ি রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবি গ্রামে। সোমার অভিযোগ প্রথমে সে অন্তঃস্বত্তা হলে কিছু খাইয়ে পেটের সন্তান নষ্ট করে দেয়া হয়। পরে তিন বছরের সময় কোলজুড়ে আসে প্রতিবন্ধী ইয়াসিন। এরপর থেকেই সোমার প্রতি শুরু হয় অমানষিক নির্যাতন। মারধর থেকে সবকিছু। তারপরও স্বামীর সংসারে একটু শান্তির আশায় বাবার বাড়ির সম্পত্তি বিক্রি করে চার লাখ টাকা এনে দেয়। কিনে দেন একটি ট্রাক্টর পর্যন্ত। কিন্তু সুখের দেখা পায়নি হতভাগী সোমা। কোলজুড়ে আসে আরেক সুস্থ কন্যা সন্তান। এরপরও ক্ষান্ত হয়নি নির্যাতনের ধারা। আরও যৌতুকের দাবিতে সোমার দুই শিশু সন্তানকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়। এমনকি মৌসুমি নামের এক মেয়ের সঙ্গে শাহাবুদ্দিনের পরকীয়ার সম্পর্ক রয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করেন সোমা আক্তার। তবুও স্বামী দুরে কর্মস্থল থাকায় বাড়িতে শ^শুর-শাশুড়িসহ সকলে মন যুগিয়ে অসম্ভব কষ্ট করে দিন পার করছিলেন। সোমা জানান, প্রতিবন্ধী ছেলেকে রশিতে পা বেধে ঘরের রান্নাসহ সকল কাজ করেছেন। তারপরও মারধর গালাগাল ছিল নিত্যঘটনা। এরপরও শাশুড়িসহ স্বামী ও ননদ, ভাসুর, দেবরদের সোমাকে তাড়ানোর জঘন্যতম চক্রান্ত থেমে থাকেনি। ৮ জুলাই। রবিবার, বেলা ১১টা। পুকুরে পানি আনার জন্য পাঠায় শাশুড়ি। এই সুযোগে পাষন্ড দাদি প্রথমে নয় মাসের সুমাইয়াকে এন্ড্রিন (বিষ) খাইয়ে দেয়। এরপরে ইয়াসিনকে জবরদস্তি করে বিষ খাওয়ায়। এমন অবস্থায় ঘরে ফেরে সন্তানদের মেরে ফেলার ঘটনা দেখে চিৎকার করে শাশুড়ির পা ধরে হাসপাতালে নেয়ার জন্য কান্নাকাটি করতে থাকে। কিন্তু পাষন্ডরা উল্টো তাকে আটকে রাখে। বর্তমানে সোমা তার দুই অবুঝ শিশু সন্তান নিয়ে ভাইদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। স্বামীর সংসার। সন্তানদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে সোমা এখন অনেকটা নির্বক হয়ে পড়েছেন। শুধু দু’চোখ গড়িয়ে অশ্রু ঝরে তার। স্বামীর সংসারের স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিনত হয়েছে। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কায় বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন। বানের জলের মতো ভাসছে সোমার সাজানো সংসার। তবে তিনি তার সন্তানকে মেরে ফেলার চেষ্টার বিচার দাবি করেছেন। কলাপাড়া থানার ওসি মো: জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, মামলার সকল আসামিরা পলাতক রয়েছে।
×