ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গডফাদারদের কেউ ধরা পড়েনি

মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে এখনও আসছে ইয়াবা

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৮ জুলাই ২০১৮

মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে এখনও আসছে ইয়াবা

মোয়াজ্জেমুল হক/ এইচএম এরশাদ ॥ ভয়ঙ্কর নেশার মাদক ইয়াবার চালান মিয়ানমারের সীমান্ত গলিয়ে এখনও আসছে বাংলাদেশে। তবে ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’- এ ঘোষণা দিয়ে র‌্যাবের অভিযান শুরু হওয়ার পর তা বহুলাংশে হ্রাস পেলেও পুরোপুরিভাবে বন্ধ করা যাচ্ছে না। মঙ্গলবার ভোর রাতেও টেকনাফের হোয়াইকং এলাকায় পুলিশী অভিযানে ধরা পড়েছে ইয়াবার একটি চালান। অপরদিকে, ইয়াবা স¤্রাটদের কেউই এখনও ধরা পড়েনি। ইয়াবা ডনদের অধিকাংশ টেকনাফ এলাকার। চিহ্নিত ও তালিকাভুক্তরা সকলেই আত্মগোপনে। এদিকে, চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে প্রতিনিয়ত কখনও বন্দুকযুদ্ধে, কখনও চোরাচালানিদের নিজেদের দ্বন্দ্বে অস্ত্রের হোলি খেলায় লাশ পড়ছে। কিন্তু একজন গডফাদারের লাশ যেমন পড়েনি, তেমনি ধরাও পড়েনি। অপরদিকে, মিয়ানমারের যেসব ইয়াবা কারখানা রয়েছে সেসব কারখানায়ও উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। উৎপাদিত এই ইয়াবার চালানের গন্তব্য বাংলাদেশই। ইয়াবা মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হওয়ার পর টেকনাফের জনপ্রিয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরামের মৃত্যুর ঘটনাটি নিয়ে একটি ভিডিও গোটা দেশকে ঝাঁকুনি দেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পক্ষে তাকে ডেকে নেয়ার পর মৃত্যুর ঘটনাটি রহস্যময় হয়ে আছে। শুধু টেকনাফ নয়, দেশের আগ্রহী মহল চেয়ে আছে এ রহস্যের জট কখন খুলছে। একরাম আসলে কি ইয়াবা চোরাচালানিদের লিস্টে ছিল? নাকি তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেনÑ এ ধরনের নানা প্রশ্ন এখন আগ্রহী মহলে ঘুরপাকই খাচ্ছে। ইয়াবার চোরাচালানি, গডফাদার, ক্যারিয়ার, চোরাপথে এ মাদক আনার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের লিস্ট অনেক লম্বা। সকলকে ধরা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি এর নির্মূলও একেবারে সম্ভব হবে তাও বলা যাবে না। কিন্তু শীর্ষ তালিকায় যারা রয়েছে এদের আইনের আওতায় এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কার্যকর করা গেলে সর্বত্র স্বস্তি যে মিলবে এতে কোন সন্দেহ নেই। বছরের পর বছর ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত হয়ে টেকনাফ, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় যারা বিত্তের পাহাড় গড়ে তুলেছে তারা সকলেই চিহ্নিত। এই চিহ্নিতদের কেউ এখনও পর্যন্ত ধরা পড়ল না। এদিকে, টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে অতি গোপনে ইয়াবার চালান যে আসছে তার প্রমাণ মঙ্গলবার ভোরে হোয়াইকং এলাকায় পুলিশী অভিযানে আটক ইয়াবার চালানটি। মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হওয়ার পর এখনও যারা ইয়াবা নিয়ে খেলছে তাদের দুঃসাহস আগ্রহী মহলকে আতঙ্কিত করছে নিয়ত। এদের শক্তি কোথায়, শেকড় কোথায়, কারা এদের পৃষ্ঠপোষক-এসব নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। মাদকবিরোধী চলমান অভিযানে যাদের মৃত্যু ঘটছে এদের অধিকাংশ চুনোপুঁটি। আসল গডফাদারদের কেশাগ্রও এখনও স্পর্শ করা যায়নি। শুধু তাই নয়, পৌর কাউন্সিলর একরামের মৃত্যু রহস্যের জট এখনও খোলেনি। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মঙ্গলবার ঢাকায় আবারও বলেছেন, একরামের মৃত্যু নিয়ে যে ভিডিও চিত্র প্রচার হয়েছে তার তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে কারও বেআইনী কর্মকা- ঘটে থাকলে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। অপরদিকে মঙ্গলবার নিহত একরামের পরিবারের পক্ষ থেকে আবারও জানানো হয়েছে, একরাম ষড়যন্ত্রের শিকার। গত ২৬ জুন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এ দিন রাতেই টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়ক থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। একরামের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী কক্সবাজারে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে যে ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করেন সেটি নিয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলে তিনিও জেনেছেন। একরামের মৃত্যুর পর শঙ্কিত হয়ে তিনি টেকনাফ ছেড়ে চট্টগ্রামে অবস্থান নিয়েছিলেন।
×