ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাজার ভরে উঠেছে লটকনে

বুনো গাছের থোকা থোকা ফল, টক মিষ্টি স্বাদ ভরপুর ভিটামিন সি

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৮ জুলাই ২০১৮

বুনো গাছের থোকা থোকা ফল, টক মিষ্টি স্বাদ ভরপুর ভিটামিন সি

মোরসালিন মিজান ॥ ফল খাবেন। কোনটির স্বাদ মিষ্টি। কোনটি হবে টক। দুটো একসঙ্গে চাই? যদি চাই, লটকনের জুড়ি নেই। এইটুকুন ফল, এইটুকুন বটে, রসালো খুব। খোসা ছাড়িয়ে মুখে পুরলেই হলো, কী যেন ঘটে যায়। টক লাগছে। মিষ্টিও। দারুণ না ব্যাপারটা? স্বাদ যে শুধু জিহ্বা টের পায়- এমন নয়। মুখের ভেতরে কী ঘটছে, বাইরে তার একটা ছবি ফুটে ওঠে। মুখ সোজা হয়। বংলার ৫ এর মতো বাঁকা হয়। চোখ বুজে আসে। আবার খুলে যায়। লটকনই ঘটিয়ে থাকে এমন সব কা-। মৌসুমি ফল। বর্ষায় হয়। এবারও ভাল ফলন। শুধু ভাল বললে ভুল হবে, প্রচুর ফলন হয়েছে। হলুদ বা বাদামী রঙের থোকা থোকা ফলে এখন বাজার ভর্তি। শহর ঢাকার অলিতে গলিতে পাওয়া যাচ্ছে। ফলের দোকান, অথচ সেখানে লটকন নেই? যেন ভাবাই যায় না। গত কয়েকদিন কাওরান বাজার ঘুরে রীতিমতো অবাক হতে হয়েছে। এত এত লটকন আসছে, যায় কোথায়? কে খায়? শাহআলম নামের এক বিক্রেতা প্রশ্ন শুনে হেসেই ফেললেন। বললেন, জ্যৈষ্ঠের পর কিছু ফল পুরনো হয়ে গেছে। কিছু নিঃশেষ হওয়ার পথে। এ অবস্থায় নতুন ফল হয়ে বাজারে প্রবেশ করেছে লটকন। তাই বেশ চাহিদা। কাওরান বাজার থেকে বের হয়ে বাংলা মোটরের দিকে আসতে অন্তত পাঁচ স্থানে ফলটি বিক্রি করতে দেখা গেল। প্রতি কেজির দাম ৬০ থেকে ১০০ টাকা। অনেকেই আগ্রহ নিয়ে কিনছেন। হাবিব নামের এক ক্রেতা বললেন, টকমিষ্টি স্বাদের কারণেই ফলটি আলাদা। খেতে ইচ্ছে করে। এরপর স্মৃতিতে ফিরে যান তিনি। বলেন, সেই ছোটবেলায় গ্রামে ঘুরে ঘুরে লটকন খেয়েছি। তখন কিনে খেতে হতো না। অন্যরকম মজা ছিল। আসলেই তো, একসময় গ্রামের বাড়িতে দু-একটা লটকন গাছ নিশ্চিত দেখা যেত। বুনো গাছ হিসেবে পরিচিত ছিল। জঙ্গল মতো জায়গায় হলেও, গাছ ভরা থাকত ফলে। পাড়ার ছেলে, মেয়েরা বিশেষত পেরে খেত। অন্য ফলের মতো এই ফল পেরে খাওয়ায় তেমন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতো না। তবে এখন একটি দুটি গাছ নয়, বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে লটকনের। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এর চাষ হয়। নরসিংদীতেই বেশি। এ ছাড়া গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, সিলেট, ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লটকনের চাষ হচ্ছে। সেসব এলাকা থেকে চলে আসছে ঢাকার বাজারে। বিদেশেও যাচ্ছে এই ফল। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ অবশ্য বাংলাদেশের মতোই চাষ করে বলে জানা যায়। লটকনের বৈজ্ঞানিক নাম ইধপপধঁৎবধ সড়ঃষবুধহধ. আরও কিছু নাম আছে। এই যেমন- হাড়াফাটা, ডুবি, বুবি, কানাইজু, লটকা, লটকাউ ও কিছুয়ান। ফলটির মোটা খোসা। এ খোসা সরালে দৃশ্যমান হয় নরম রসালো অংশ। এ অংশটি ২ থেকে ৫টি বীজ দ্বারা বিভক্ত কিন্তু একসঙ্গে মুখ গুঁজে থাকে। বীজগুলো মুখে নিয়ে সামান্য চাপ দিলেই রস ছড়িয়ে পড়ে। লটকন গাছ ৯ থেকে ১২ মিটার উঁচু হয়। এর আছে পুরুষ এবং স্ত্রী জাত। আলাদা আলাদা ফুলও হয়। হলুদ ফুলের সুন্দর ঘ্রাণ। লটকনের আছে নানা পুষ্টিগুণও। পুষ্টিবিদ সুস্মিতা খান জানান, ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। দিনে মাত্র দু’ থেকে তিনটি লটকন মুখে দিলে ভিটামিন সি’র চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। আছে ভিটামিন বি’র উপস্থিতি। খনিজ উপাদানও আছে। এসব উপাদান শরীরের নানা উপকার করে থাকে বলে জানান তিনি। সর্বোপরি এই গরমে তৃষ্ণা মেটাতে, মুখের রুচি বাড়াতে লটকন অতুলনীয়। আরও কিছুদিন বাজারে পাওয়া যাবে ফলটি। বুনো গাছের ফল ভেবে ছুঁড়ে ফেলবেন না যেন!। খান। স্বাদ নিন।
×