ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিপাকে দুই তরুণ উদ্যোক্তা ॥ এক মাসের বিল প্রায় দুই লাখ টাকা

রাজশাহীতে বিদ্যুত বিভ্রাট ॥ নগরবাসী ক্ষুব্ধ

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২৯ জুন ২০১৮

রাজশাহীতে বিদ্যুত বিভ্রাট ॥ নগরবাসী ক্ষুব্ধ

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহীতে বিদ্যুতের চাহিদার অনুপাতে সরবরাহের কোন কমতি না থাকলেও চরম আকার ধারণ করেছে বিদ্যুত বিভ্রাট। গত তিনদিন ধরে নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থা। কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদার বিপরীতে সরবরাহের কমতি নাই তবে সঞ্চালন লাইনে ত্রুটির কারণে বিদ্যুত বিভ্রাট ঘটছে। অনেক সময় বিদ্যুতের লাইনে ত্রুটি চিহ্নিত করা যাচ্ছে না বলে দাবি রাজশাহী বিদ্যুত বিভাগের। গত তিনদিন ধরে এ অবস্থা চলছে রাজশাহী মহানগর জুড়ে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবারও সকাল থেকে বিদ্যুতের ভেল্কিবাজি শুরু হয়েছে। কখনও টানা ২০ মিনিট স্থায়ী হচ্ছে না বিদ্যুত সরবরাহ। ফলে নগরবাসী চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। অনেকে বলছেন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিদ্যুত বিভাগে ঘাপটি মেরে থাকা জামায়াত বিএনপির কর্মকর্তারা ইচ্ছে করেই এমন কা- ঘটাতে পারেন। এদিকে সারাদিনই বিদ্যুতের যাওয়া আসার খেলায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মানুষ। বিদ্যুত না থাকার পাশাপাশি ভ্যাপসা গরমে চরম অতিষ্ঠ মানুষ ও প্রাণিকূল। অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলাকালীন বিদ্যুত বিভ্রাটে সমস্যাটা আরও বেশি প্রকট হয়ে ওঠে। বিদ্যুত অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুত সরবরাহ ঠিক আছে। কিন্তু অতিরিক্ত লোডের কারণে বিদ্যুত সরঞ্জাম নষ্ট হচ্ছে। এতে করে নগরীতে বিদ্যুত বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। অনেক সময় বিদ্যুতের ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। একদিকে ভ্যাপসা গরম, অন্যদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের সঙ্গে পানি সঙ্কটে চরম দুর্ভোগ নেমে আসে মানুষের মাঝে। বিশেষ করে স্কুলের শিক্ষার্থী, পরীক্ষার্থী, শিশু, বৃদ্ধ এবং রোগীদের নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গত তিনদিন ধরে বিদ্যুতের আশা-যাওয়ার খেলাই চলছে সারা দিনরাত। ফলে ঘরে থাকা বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নষ্ট হচ্ছে। ভয়াবহ বিদ্যুত পরিস্থিতির কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছে নগরবাসী। সবচেয়ে বেশি কষ্ট নেমে আসে বিদ্যুতবিহীন নগরীর বাড়িতে থাকা মানুষের। গরমে দিনের বেলা ঠিকমতো কাজ করতে ব্যাপক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। বিদ্যুত অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গরম মৌসুমে চাহিদা বেড়ে গেলে সঞ্চালন ও বিতরণ পর্যায়ে ধারণ ক্ষমতার বেশি বিদ্যুত সরবরাহের পর সাবস্টেশন এবং ট্রান্সফরমারগুলো ওভারলোডেড হয়ে পড়ে। ওভারলোডেড সাবস্টেশন ও ট্রান্সফরমারগুলো এ কারণে বিকল হয়ে পড়ছে। এতে বিদ্যুত সরবরাহের সমস্যাগুলো হচ্ছে। অতিরিক্ত লোডের কারণে লাইনে বিভিন্ন জায়গায় ত্রুটি দেখা যাচ্ছে। এতে করে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুত সমস্যা দেখা দিয়েছে। এদিকে বিদ্যুত বিভাগের কর্মীদের ত্রুটিগুলো সমাধান করতে গিয়ে বেগ পেতে হচ্ছে। কোথাও খুঁজতে অনেক সময় লাগছে। রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাজশাহীতে বিদ্যুত পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। কখনও বিদ্যুত ২০ মিনিটের বেশি স্থায়ী হচ্ছে না। একবার বিদ্যুত গেলে ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও আসছে না। এ অবস্থায় বিদ্যুতের আপডাউনেও কখনও কখনও ভোল্টেজ উঠানামার কারণে ঘরের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার বিদ্যুত সরবরাহ ঠিক রেখেছেন। তবে বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তাদের খামখেয়ালিপনার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কর্মকর্তারা ফোনও রিসিভ করেন না। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নর্থ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (নেসকো) রাজশাহীর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাসিনা দিলরুবা জানান, প্রচ- গরমের কারণে বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়ে গেছে। সে কারণে লাইনগুলোতে চাপ বেড়েছে। বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিল ॥ বিদ্যুত বিভাগের বিলে চরম বিপাকে পড়েছেন দুই তরুণ উদ্যোক্তা। এক বছরেরও বেশি সময় আগে চালু করা তাদের একটি ফার্স্টফুডের দোকান এখন বন্ধের উপক্রম। হঠাৎ করে অস্বাভাবিক বিল আসায় নগরীর রানীবাজার এলাকার ক্রিম এন্ড স্পাইস ফাস্টফুডের দোকানটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এই প্রতিষ্ঠানে অন্যান্য সময় গড়ে ১০-১২ হাজার টাকা বিদ্যুত বিল এলেও এবার একমাসের বিল এসেছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ১৫৫ টাকা। অস্বাভাবিক বিল নিয়ে বেকায়দায় পড়া গ্রাহক তিনটি আবেদন করেছেন বিদ্যুত বিভাগে। কিন্তু উদাসীন বিদ্যুত বিভাগের কোন কর্মকর্তার সময় হচ্ছে না সমাধানের। রাজশাহী নগরীর রানীবাজার এলাকায় আসাদুজ্জামান হৃদয় ও বন্ধু মিজানুর রহমান মিলে ক্রিম এ্যান্ড স্পাইস রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করেন। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা এটি চালিয়ে আসছেন। এই রেস্টুরেন্টের বিদ্যুত সংযোগ রয়েছে মোকাদ্দার হোসেনের নামে। গত বছরের নবেম্বরে এই প্রতিষ্ঠানের বিল আসে ১২ হাজার ৭৭৪ টাকা, ডিসেম্বরে বিল আসে ৫ হাজার ৮৮০ টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারির বিল ছিল ৮ হাজার ৪৩ টাকা আর ফেবব্রুয়ারির বিল আসে ২২ হাজার ৪৮৬ টাকা। কিন্তু মাথায় বাজ পড়া বিল আসে মার্চ মাসে। এ মাসের বিল আসে ১ লাখ ১৪ হাজার ৬৫২ টাকা। এই বিল দেখে বেকায়দায় পড়ে যান ফাস্টফুডের মালিকরা। প্রতিষ্ঠানের অংশীদার আসাদুজ্জামান হৃদয় জানান, অস্বাভাবিক বিল দেখার পরই তারা বিদ্যুত অফিসে যান। সেখান থেকে পরামর্শ দেয়া হয় কিছু টাকা পরিশোধ করেন, সামনের মাসে স্বাভাবিক বিল আসবে। এই কথায় তারা ৩০ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করেন। কিন্তু পরের মাসে বিল আসে ১ লাখ ৪২ হাজার ৭৮ টাকা। আবারও তারা যান বিদ্যুত বিভাগে (নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড)। আবারও পরামর্শ দেয়া হয় আরও কিছু টাকা শোধ করেন সামনের মাসে ঠিক হয়ে যাবে। এই পরামর্শ পেয়ে এপ্রিল মাসে আবারও পরিশোধ করা হয় ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। মে মাসের বিল এসেছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ১৫৫ টাকা। তিনি জানান, রেস্টুরেন্টে তিনটি ফ্রিজ, দুটি এসি, একটি ওভেন এবং কয়েকটা লাইট জ্বলে। সেই অনুযায়ী ২০ হাজার টাকা বিল আসলেও মেনে নেয়া যায়। কিন্তু এক লাখের উপরে বিল আসায় তারা এখন চরম বেকায়দায় রয়েছেন। প্রতিমাসেই বিল বাড়ছে। আর যে বিল এসেছে এটা আমাদের পক্ষে শোধ করা কোনভাবেই সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দেয়ার কোন বিকল্প নেই। তিনি আরও জানান, বিল বেশি আসার পর থেকে তিনটি আবেদন করা হয়েছে। সহকারী প্রকৌশলী মাইনুল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ শাহীনের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেছি কিন্তু কোন সমাধান হয়নি। তবে নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লি. এর সহকারী প্রকৌশলী মাইনুল ইসলাম জানান, এমন অভিযোগ তিনি পেয়েছেন।
×