ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গণতন্ত্র ও খালেদার মুক্তির জন্য জাতীয় ঐক্য চাই ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ৩১ মে ২০১৮

গণতন্ত্র ও খালেদার মুক্তির জন্য জাতীয় ঐক্য চাই ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের মধ্য দিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছে বিএনপি। এ উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০টায় শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা দরকার। তিনি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় নির্বাচন দেয়ার দাবি জানান। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশান বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়। উত্তোলন করা হয়েছে কালো পতাকা। দিবসটি পালন উপলক্ষে সকাল থেকেই দলের নেতাকর্মীরা বুকে কালো ব্যাজ পড়েন। সকাল ১০টায় নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচ তলায় ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)-এর উদ্যোগে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প খোলা হয়। এর উদ্বোধন করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ সময় তিনি বলেন, রাজপথে নামতেই হবে, রাজপথে না নামা পর্যন্ত গণতন্ত্রের মুক্তি নেই। ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শে রোগীদের মধ্যে বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করা হয়। ছাত্রদলের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয় জিয়াউর রহমানের ওপর আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এ ছাড়া রাজধানীর খিলগাঁও, কমলাপুর, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে দুস্থদের মধ্যে বস্ত্র ও ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথমে জিয়ার মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন ও ফাতেহা পাঠ করেন। এরপর মাজার প্রাঙ্গণে ওলামা দল আয়োজিত দোয়া মাহফিল ও মোনাজাতে অংশ নেন। জিয়ার মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, কবীর মুরাদ, সিরাজউদ্দিন আহমেদ, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, দলের কেন্দ্রীয় নেতা দেওয়ান মোঃ সালাউদ্দিন, মীর সরফত আলী সপু, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, কাজী আবুল বাশার, সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করীম বাদরু, আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, আবদুল কাদের ভুইয়া জুয়েল, আনোয়ার হোসাইন, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, তকদীর মোঃ জসিম, হাফেজ আবদুল মালেক, শাহ নেসারুল হক, সাবেক সাংসদ মেজর (অব) আখতারুজ্জামান প্রমুখ। মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সরকার সারা দেশটাকে কারাগারে পরিণত করেছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দী করে রেখেছে। আজকের দিনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করে শপথ নিয়েছি যে, আমরা গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনব এবং দেশনেত্রীকে মুক্ত করব। তিনি বলেন, একটা কথা আমরা সব সময় বলে আসছি, এই দেশে গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে আগামী দিনে যে নির্বাচন হবে সেই নির্বাচন অবশ্যই একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। এদিকে দুপুর ১টায় নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীতে ত্রাণবিতরণে বাধা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ১০ দিনের কর্মসূচীর মধ্যে মাজার জিয়ারতের পর ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় দুস্থদের মধ্যে ত্রাণবিতরণ কমসূচী ছিল। এ জন্য অনেকগুলো স্পটও নির্ধারণ করা হয়েছিল। ফখরুল বলেন, ত্রাণবিতরণ করতে আমরা প্রথমে যাওয়ার কথা ছিল টিএ্যান্ডটি স্কুলে। সেখানে যাওয়ার আগেই পুলিশ অস্থায়ী মঞ্চ ও চেয়ার টেবিল ভেঙ্গে দিয়েছে। তারপরও আমি গিয়ে কিছু ত্রাণবিতরণ করতে পেরেছি। এরপর ছিল মোহম্মদপুর টাউন হল ও মোহম্মদপুর শহীদপার্কে। সেখানের সমস্ত আয়োজন তারা ভেঙ্গে দিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। কলাবাগানের আয়োজনও ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর বিএনপি ২৫টি স্পট নির্ধারণ করেছিল, একটি পয়েন্টেও ত্রাণবিতরণ করতে দেয়নি পুলিশ। অথচ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে আমাদের অফিস থেকে চিঠি দেয়া হয়েছিল ৩ দিন আগে। মির্জা ফখরুল বলেন, কারাগারে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে ন্যূনতম মানবিক আচরণও করা হচ্ছে না। পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে যেখানে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে, সেখানে কোন জেনারেটর নেই। প্রায়ই বিদ্যুত চলে যায়। বিদ্যুত চলে গেলে মোমবাতি ও হাতপাখা দিয়ে চলতে হয় খালেদা জিয়াকে। এ ছাড়া মাঝে মধ্যে পানিও থাকে না। এই যে অমানবিকতা ও হৃদয়হীন আচরণ এর কোন তুলনা নেই। তিনি বলেন, মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা দেখা করেছেন। তারা দেখেছেন তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। এমন অসুস্থ যে তিনি ঠিকমতো হাঁটতে পারছেন না। প্রতি রাতে তার জ্বর আসছে। এটা যেকোন সুস্থ মানুষের জন্য সঙ্কটাপন্ন অবস্থা। ফখরুল বলেন, আমরা যখন কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলাম, সেখানে কখনও বিদ্যুত যেত না। কারণ, সেখানে সার্বক্ষণিক জেনারেটরের ব্যবস্থা ছিল। এখন খালেদা জিয়াকে যেখানে রাখা হয়েছে সেটা কোন দিক দিয়ে কারাগারের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। সাধারণত প্রথম শ্রেণীর বন্দী হিসেবে খালেদা জিয়ার যে প্রাপ্য অধিকার, সেইটুকুও তিনি পাচ্ছেন না। ডিভিশন প্রাপ্ত বন্দীরা কারাগারের সুবিধার বাইরে নিজের খরচে অনেক সুবিধা ভোগ করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরাও সেই সুবিধা ভোগ করেছি। কিন্তু খালেদা জিয়াকে তা করতে দেয়া হচ্ছে না। খালেদা জিয়ার জন্য পরিবারের সদস্যরা বাইরে থেকে কোন কিছু নিয়ে যেতে পারছেন না। ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য কারাকর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠিয়েছিল। সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সেই বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত দেননি। দেশ-বিদেশ থেকে অনেক অনুরোধ এসেছে খালেদা জিয়ার জামিন ও চিকিৎসার যেন ব্যবস্থা করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী কিছুই করেননি। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যেন আগামী নির্বাচনের আগে কারাগার থেকে বের হতে না পারে সেটা নিশ্চিত করছে সরকার। এজন্য বারবার তার জামিন আটকে দেয়া হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, ড্যাব নেতা ডাঃ রফিকুল ইসলাম বাচ্চু প্রমুখ।
×