ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এবার বাঘাইছড়িতে ব্রাশফায়ারে হত ৩

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৯ মে ২০১৮

এবার বাঘাইছড়িতে ব্রাশফায়ারে হত ৩

মোয়াজ্জেমুল হক/মোহাম্মদ আলী ॥ পার্বত্য জেলার রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ী দুর্বৃত্তরা আবারও ব্রাশফায়ারে প্রতিপক্ষের ৩ জনকে হত্যা করেছে। নানিয়ারচরে ঘটনার পর সোমবার ভোরে জেলার সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা দুর্গম বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক এর গঙ্গারামের করালছড়িতে হত্যাকা-ের এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছে ১ জন। নিহতরা সকলেই আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের (প্রসিত গ্রুপ) কর্মী বলে নিশ্চিত করা গেছে। ইউপিডিএফ এ ঘটনার জন্য তাদের প্রতিপক্ষ ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও জেএসএসকে (জনসংহতি সমিতি-এমএন লারমা গ্রুপ) যুগপৎভাবে দায়ী করেছে। নিহতরা হলেন, ইউপিডিএফের স্মৃতি বিকাশ চাকমা (৫০), সুশীল ওরফে সঞ্জিত চাকমা (৩০) ও অতল চাকমা (৩০)। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন কানন চাকমা। নিহত ৩ জনের বাড়ি বাঘাইছড়ি উপজেলায়। এর মধ্যে স্মৃতি বিকাশের বাড়ি সাজেকের গঙ্গারাম মুখে। তিনি ইউপিডিএফের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। অপরদিকে নিহত সুশীল চাকমার বাড়ি সাজেকের বালুঘাট এলাকায়। আর অতল চাকমার বাড়ি মারিশ্যার বালুখালি এলাকায়। এলাকাবাসী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সাজেকের দক্ষিণ করল্যাছড়ির বেজাইল্যা কারবারির বাসা সংলগ্ন সড়কে হঠাৎ ব্রাশফায়ার শুরু করে পাহাড়ী দুর্বৃত্তরা। নিহতরা এ সময় ছিলেন সড়ক সংলগ্ন একটি বাড়িতে। প্রায় ২০ মিনিট ধরে ব্রাশফায়ারের গর্জন চলার পর তিনজনের মৃত্যু নিশ্চিত করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এদিকে ঘটনার জন্য ইউপিডিএফ প্রসিদ গ্রুপ প্রতিপক্ষ অর্থাৎ ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক ও জেএসএসের লারমা গ্রুপকে দায়ী করলেও দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে। ইউপিডিএফ প্রসিদ গ্রুপের রাঙ্গামাটি জেলা ইউনিটের সংগঠন সচল চাকমা সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, এ ঘটনায় একটি মহলের যোগসাজশ রয়েছে। মহল বলতে তিনি কাদের বুঝিয়েছেন তা স্পষ্ট করেননি। বলেছেন, গত রবিবার রাতে একটি বাহিনীর নিরাপত্তায় মাইক্রোবাসযোগে জেএসএস লারমা গ্রুপের প্রায় ১২ সশস্ত্র ক্যাডারকে গঙ্গারামের করইল্যাছড়ি এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। ভোর রাতে একটি নির্দিষ্ট বাড়িকে টার্গেট করে শুরু হয় ব্রাশফায়ার। তখন ওই ঘরে অবস্থান করছিলেন স্মৃতি চাকমা, অতল চাকমা ও সঞ্চয় চাকমা। ঘটনাস্থলেই তারা প্রাণ হারান। ইউপিডিএফের ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও দাবি করা হয়েছে, সংস্কারবাদী জেএসএসের বিপদগামী অংশকে একটি মহল তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য মাঠে নামিয়েছে। এতে আরও দাবি করা হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্র ও সন্ত্রাসী কর্মকা- চলছে এর প্রমাণ করতে পরিকল্পিতভাবে জেএসএসের সংস্কারবাদী গ্রুপের পেলে-সুদর্শন ও অংসুমান চক্রকে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে উক্ত তিনজনকে ওই মহলের খপ্পর থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বানও জানানো হয়েছে। পাশাপাশি হত্যায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচার দাবি করা হয়েছে। ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক গ্রুপের পক্ষে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তজিম চাকমা জানিয়েছেন, এ ঘটনার সঙ্গে ইউপিডিএফ জড়িত নয়। গত দুদিন আগে তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের হিসাবে রুবেল চাকমা নামে একজন সংগঠন থেকে বেরিয়ে যায়। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন বেরিয়ে যেতে চাইলেও তাতে তারা ব্যর্থ হন। বর্তমানে বিভক্ত ইউপিডিএফের প্রসিদ গ্রুপের রাজনৈতিক কর্মকা- দেউলিয়া হয়েছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই এ হত্যাকা- ঘটেছে বলে তজিম চাকমা দাবি করেছেন। ভোরে ব্রাশফায়ারে এ হত্যাকা-ের খবর পেয়ে সাজেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুলিশ ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। উদ্ধার করা হয় নিহত তিনজনকে। প্রসঙ্গত, ইউপিডিএফ গ্রুপ এবং জেএসএসের লারমা গ্রুপের ত্রিমুখী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে গত ২৫ দিনে নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমা ও ইউপিডিএফের আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমাসহ উভয় গ্রুপের ১০ নেতাকর্মীর প্রাণ ঝরে গেল। আর গত ছয় মাসে প্রাণ হারাল ২৪ নেতাকর্মী। গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন আরও ১২ জন। গেল বছরের ১৫ নব্বের ইউপিডিএফ ভেঙ্গে ইউপিডিএফ গণতন্ত্র নামে আলাদা গ্রুপ হওয়ার পর থেকে বিক্ষিপ্তভাবে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে পাহাড়ে যৌথ অভিযানও অব্যাহত রয়েছে। এরপরও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। গত ২২ মে খাগড়াছড়ি হরে ইউপিডিএফের বিভক্ত দুগ্রুপের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ২১ মে দীঘিনালায় হত্যা করা হয়েছে উজ্জল কান্তি নামের একজনকে। সাজেক থানার ওসি নুরুল আনোয়ার জানিয়েছেন, নিহতদের উদ্ধার করে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাাতলে পাঠানো হয়েছে।
×