ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকল্প বাস্তবায়নে সব মন্ত্রণালয়ের পেছনে রেলপথ

রেলের উন্নয়নে এডিপির অর্থ খরচ করতে পারছে না রেল বিভাগ

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ৩ মে ২০১৮

রেলের উন্নয়নে এডিপির অর্থ খরচ করতে পারছে না রেল বিভাগ

মশিউর রহমান খান ॥ বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়নে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) রাখা সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয় করতে পারছে না যোগাযোগ খাতের সেবাদানকারী অন্যতম প্রতিষ্ঠানটি। সময়মতো অর্থ ব্যয় করতে না পারায় অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজই থমকে গেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প শেষ করার কথা থাকলেও কোনভাবেই তা শেষ করা হচ্ছে না। ফলে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক এডিপি বাস্তবায়নেও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে রেলপথ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত মোট নয় মাসে মোট বরাদ্দের মাত্র ১৯ দশমিক ২৩ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে পেরেছে মন্ত্রণালয়টি। সব মিলিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় ব্যয় করেছে ২ হাজার ৮০ কোটি টাকা। অপরদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দাবি শুধুমাত্র পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ স্থাপনে চীনের সঙ্গে চুক্তি না হওয়ায় এডিপি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। তবে সম্প্রতি চুক্তি সম্পন্ন হওয়ায় নির্ধারিত সময়েই এডিপির শতভাগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব। বাংলাদেশ রেলওয়ের বর্তমানে যেসব বৃহৎ প্রকল্প রয়েছে, তার অন্যতম হচ্ছে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প ও চট্টগ্রামের দোহাজারী-ঘুমদুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প। এ ছাড়া সত্তরটি মিটারগেজ ডিজেল ইলেক্ট্রিক লোকোমোটিভ সংগ্রহ প্রকল্প, সৈয়দপুর ওয়ার্কশপ আধুনিকায়ন প্রকল্প, পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ উন্নয়ন প্রকল্প (প্রথম সংশোধিত), আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন ও বিদ্যমান রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর, লাকসাম-চাঁদপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্প, ত্রিশটি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ সংগ্রহ প্রকল্প, ১০ সেট ডিজেল ইলেক্ট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডেমু) সংগ্রহ প্রকল্প, ঢাকা-চট্টগ্রাম সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের পাশাপাশি একটি সমান্তরাল ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ, ৫০ বিজি ও ৫০ এমজি ক্যারেজ পুনর্বাসন, ১০০ এমজি যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন প্রকল্প উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া রেলের একাধিক ট্র্যাক পুনর্বাসন ও কম্পিউটার বেজড ইন্টার লকিং সিস্টেম প্রকল্প বাস্তবায়নের গতিও অত্যন্ত ধীর। এর বাইরেও নানা যুক্তিযুক্ত কারণেও প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি থমকে আছে। এর অন্যতম কারণ সঠিক সময়ে অর্থায়ন নিশ্চিত না হওয়াকে দায়ী করছে তারা। রেলওয়ের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে তার মধ্যে দোহাজারী-ঘুমদুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটির অগ্রগতি কম। প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলেও যথাসময়ে কাজ শুরু না হওয়ায় এ নিয়ে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে। প্রকল্প সূত্র জানায়, সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে কক্সবাজারের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বাড়াতে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে মিয়ানমারের ঘুমদুম সীমান্ত পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের প্রকল্পটি একনেকে পাস হয় ২০১০ সালের ৬ জুলাই। শুরুতে সিঙ্গেল লাইন মিটারগেজ রেললাইন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮শ’ ৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর একনেক সভায় ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণের নির্দেশনা দেয়া হয়। এরপর ২০১৬ সালে পরিচালিত এক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্পের সংশোধিত প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১২ হাজার কোটি টাকা অর্থায়ন করছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। বাকি ৬ হাজার ৩৪ কোটি টাকার অর্থায়ন করছে সরকার।
×