ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ট্রাম্পের আশাবাদ ॥ উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তাদের যোগাযোগ

কোরিয়া যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটছে

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১৯ এপ্রিল ২০১৮

কোরিয়া যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটছে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে তার দেশের কর্মকর্তাদের যোগাযোগের কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে আসন্ন শীর্ষ বৈঠকের প্রতি তার আশীর্বাদ রয়েছে। কোরিয়া যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি ঘটানোই এর উদ্দেশ্য। কূটনৈতিক পর্যায়ে এ বিষয়ে আগে অনেক কথা শোনা গেলেও এই প্রথম ট্রাম্প বিষয়টি নিশ্চিত করলেন। এদিকে সিআইএ ডিরেক্টর মাইক পম্পেও চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে গোপনে উত্তর কোরিয়া সফর করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এএফপি। ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করার পর স্বাভাবিকভাবেই আসন্ন শীর্ষ বৈঠকগুলোর গুরুত্ব বেড়ে যাবে। বৈঠক থেকে ইতিবাচক ফল আসার ব্যাপারেও সবাই প্রত্যাশা করবে। ট্রাম্প বলেছেন, কোরিয়া উপদ্বীপকে ঘিরে ‘একটি বিশ্ব সমস্যা সমাধানের জন্য এটি বড় ধরনের সুযোগ’। ফ্লোরিডার পাম বিচে নিজস্ব রিসোর্টে সফররত জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে সঙ্গে নিয়ে ট্রাম্প বলেন, তার নিজের ‘আশীর্বাদে আগামী ১০ দিনের মধ্যে একটি বিরল আন্তঃকোরীয় শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্য দিয়ে ১৯৫০ থেকে ৫৩ সাল পর্যন্ত চলা কোরিয়া যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি ঘটানো সম্ভব হবে। দুই কোরিয়ার মধ্যে সংঘটিত ওই যুদ্ধ অস্ত্রবিরতি চুক্তি দিয়ে শেষ হয়েছিল। কোন আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ বিরতি চুক্তি হয়নি। ট্র্রাম্প বলেন, ‘সাধারণ মানুষ মনে করে কোরিয়া যুদ্ধ এখনও শেষ হয় নাই, যুদ্ধ এখনও চলছে। এই যুদ্ধ কবে শেষ হবে তা নিয়ে তাদের মনে প্রশ্ন আছে। এ ধরনের একটি চুক্তির প্রতি আমার আশীর্বাদ রয়েছে।’ ট্রাম্প এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের মধ্যে এ পর্যন্ত সরাসরি কথাবার্তা না হলেও হোয়াইট হাউস নিশ্চিত করেছে দুদেশের মধ্যে ঐতিহাসিক বৈঠকের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ হয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্ট খবর দিয়েছে, সিআইএ ডিরেক্টর মাইক পম্পেও চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে গোপনে উত্তর কোরিয়া সফর করেছেন। তিনি কিম উনের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। পম্পেও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে নিয়োগ পাওয়ার মাত্র কয়েকদিন পর উত্তর কোরিয়া সফর করেন। হোয়াইট হাউস বা সিআইএ রিপোর্টের বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে। ট্রাম্প-উন বৈঠকের জন্য পাঁচটি ভেন্যু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বিষয়টি ট্রাম্প নিজেও নিশ্চিত করেছেন। জুনের প্রথম সপ্তাহে বা তার আগেই এই বৈঠক হতে পারে। তবে এ থেকে কোন ইতিবাচক ফল না আসার সম্ভবনাও রয়েছে বলে ট্রাম্প জানিয়েছেন। বৈঠকের স্থান নির্ধারণের বিষয়টি চূড়ান্ত না হলেও কর্মকর্তারা কয়েকটি স্থানের কথা বলেছেন। যার মধ্যে রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে অসামরিকীকৃত অঞ্চল পানমুনজোম। ১৯৫৩ সালে সেখানে অস্ত্র বিরতি চুক্তি হয়েছিল। ২৭ এপ্রিল সেখানে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ ছাড়া ট্রাম্প-উন বৈঠকের সম্ভাব্য ভেন্যুর মধ্যে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়াও রয়েছে। অর্ধ শতাব্দীর বেশি পুরনো অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর পক্ষসমূহ ছিল মার্কিন নেতৃত্বাধীন জাতিসংঘ কমান্ড, চীন ও উত্তর কোরিয়া। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, দক্ষিণ কোরিয়া সম্ভবত পরবর্তী পর্যায়ের কোন একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে সই করেছে। যে চুক্তিতে সই করার আগে দুপক্ষের মধ্যে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। দুই কোরিয়ার শীর্ষ বৈঠক নিয়ে কর্মকর্তারা বুধবার সিউলে প্রস্তুতিমূলক আলোচনায় বসছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন ও কিম উনের মধ্যকার বৈঠকে একটি শান্তি চুক্তি সই হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতিমন্ত্রী উত্তর কোরিয়া সফরের সময় উনের সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলেন। ট্রাম্পের ঘোষণাটি ছিল আকস্মিক, এটি তার গলফ খেলার সঙ্গী ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে কিছুটা হলেও হতবাক করে থাকতে পারে। কারণ বাণিজ্য বিষয়ক আলোচনা ও উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার লক্ষ্য নিয়েই আবে এখন যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন। আবে অবশ্য উত্তর কোরিয়া সঙ্কট কূটনৈতিকভাবে সামাল দেয়ার জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। টোকিও ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে বিরোধের অন্যতম ইস্যু কিছু সংখ্যক জাপানী অপহরণ। ঘটনাটি পুরনো তবে ট্রাম্প বলেছেন বিষয়টি তিনি উনের সঙ্গে আলোচনাকালে উত্থাপন করবেন।
×