ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আন্দোলন স্থগিত ॥ কোটা ব্যবস্থা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে পদক্ষেপ- আশ্বাস সরকারের

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১০ এপ্রিল ২০১৮

আন্দোলন স্থগিত ॥ কোটা ব্যবস্থা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে পদক্ষেপ- আশ্বাস সরকারের

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ সরকারী চাকরিতে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পদেক্ষপ নেয়া হবে- সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া এমন আশ্বাসের পর কোটা সংস্কারের আন্দোলন এক মাস স্থগিত করেছেন আন্দোলনকারীরা। সোমবার বিকেলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সরকারের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পৌনে ২ ঘণ্টা বৈঠকের পর আন্দোলনকারীরা এ ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তার আগে রবিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের হামলা, ভাংচুর ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর সোমবারও দিনভর দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন। কোটা সংস্কারের দাবিতে চলা আন্দোলনে অচল ছিল প্রতিটি ভার্সিটি ক্যাম্পাস। সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সরকারের প্রতিনিধি ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের বৈঠক ফলপ্রসূ হলে অচলাবস্থা থেকে রক্ষা পায় শিক্ষাঙ্গন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সচিবালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে বসেন ওবায়দুল কাদের। বৈঠকে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আওয়ামী লীগ মৃণাল কান্তি দাশ প্রমুখ। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী ৭ মে পর্যন্ত সরকার কোটা ব্যবস্থার বিভিন্ন বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে। এরপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন স্থগিত করেছে। তিনি বলেন, যারা আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়েছে ভিডিও ফুটেজ দেখে তারে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলেছি- এ ঘটনায় যাতে কোন নিরীহ শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার না হয় তা দেখতে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন- তারা কোনভাবেই ঢাবি উপাচার্যের বাসভবন ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত নয়। বহিরাগত কেউ অনুপ্রবেশ করে এ হামলা চালিয়েছে। আন্দোলন চলাকালে অনেককে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে যারা ইনোসেন্ট (নির্দোষ) তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। আর যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার জন্যও সরকার কোন কার্পণ্য করবে না। আমরা তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ২০ সদস্যের ওই প্রতিনিধি দলে ছিলেন নিলয়, আল ইমরান, মামুন, সুমন, ফারুক, সোহেল, সন্ধান, সাথী, দীনা, আরজিনা, লুবনা, কানিজ, তিথী, উজ্জ্বল, তারেক, নূর, ইকবাল, লিটন, ইলিয়াস, সুমন নামের ২০ জন শিক্ষার্থী। কোটা সংস্কার দাবিতে শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল- কোটাব্যবস্থা সংস্কার করে ৫৬ থেকে ১০ শতাংশে নিয়ে আসা; কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদে মেধায় নিয়োগ দেয়া; নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা; কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেয়া এবং চাকরির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন কাটমার্ক ও বয়সসীমা নির্ধারণ করা। ঘটনা ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে চায় বিএনপি-জামায়াত। আন্দোলনকে আরও তীব্র করে বিশ^বিদ্যালয়ে এক ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায় বলে সকালেই ক্ষোভের কথা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। বলেন, বিশ^বিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল হতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে দেশকে অশান্ত করার ষড়যন্ত্র করছে একটা মহল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের স্বার্থেই নিজেরা এগিয়ে আসবে। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল হতে দিবে না। ভিডিও ফুটেজ দেখে নাশকতাকারীদের শাস্তি চান আন্দোলনকারীরা ॥ আটককৃত ছাত্রদের ছেড়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অধিকারের প্রশ্নে আন্দোলন বলে আখ্যা দিয়েছেন তারা। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আটক সব আন্দোলনকারীকে মুক্তি দিলে সারাদেশে দাবানল ছড়িয়ে পড়বে। সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা এই আন্দোলনে যুক্ত হবেন। সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ রাশেদ খান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) বলতে চাই, যারা আন্দোলন করছেন, তারা আপনার ভাই বা সন্তানের মতো। তারা কারও বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন না। তারা অধিকারের প্রশ্নে আন্দোলন করছেন। তাই আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দিন। উপাচার্যের বাসভবনে যারা ভাঙচুর করেছেন সিসি ক্যামেরার ছবি দেখে তাদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। হামলাকারীরা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যুক্ত কেউ নন দাবি করে তারা এ ঘটনার নিন্দাও জানিয়েছেন। যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ রাশেদ খান সাংবাদিকদের বলেন, উপাচার্য মোঃ আখতাররুজ্জামানের বাসভবনে হামলাকারীরা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নন। তাদের আমরা চিনি না। তিনি বলেন, একজনকে বাসভবনের বিভিন্ন স্থানে আগুন দিতে দেখা গেছে। যেহেতু উপাচার্যের বাসভবনে সিসি ক্যামেরা আছে, তাই সেখান থেকে ফুটেজ নিয়ে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়া উচিত। জগন্নাথে শিক্ষার্থীদের অবরোধ ॥ কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভে হামলার প্রতিবাদে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে রাস্তায় নেমেছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে ক্লাস বর্জন করে রায় সাহেব বাজার মোড়সহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে পুরান ঢাকার কবি নজরুল কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা। জাবিতে আন্দোলনকারী ওপর হামলায় আহত অর্ধশতাধিক ॥ জাবি সংবাদদাতা জানিয়েছেন, কোটা পদ্ধতি সংস্কার দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নেয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাঁদুনে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহত শিক্ষার্থীদের বিশ^বিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টার ও সাভারের একটি বেসরকারী মেডিক্যালে চিকিৎসা দেয়া হয়। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী। এদিকে বিকেল সাড়ে তিনটায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন জাবি উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলাম। আন্দোলনরত জাবি শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের ‘বর্বরোচিত’ হামলার নিন্দা জানিয়ে সরকারের কাছে এর জবাব চেয়েছেন উপাচার্য। এ সময় উপাচার্যের সঙ্গে উপ-উপাচার্য আমির হোসেন ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। আন্দোলন রাবিতে ॥ রাজশাহী থেকে স্টাফ রিপোর্টার ও রাবি সংবাদদাতা জানান, দাবি আদায়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা। সোমবার সব বিভাগের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে বেলা ১০টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাবির প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেয় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। এতে সড়কের দুই পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে বিক্ষোভ এলাকায় মোতায়েন করা হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের অবরোধ ছিলো। চবিতে অবরোধ, আন্দোলন ॥ চবি সংবাদদাতা জানান, মিছিল, বিক্ষোভ, পরীক্ষা বর্জন ও অবরোধের মধ্য দিয়ে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে যুক্ত হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। নগরীর ষোলশহর এলাকায় রেলপথ অবরোধের কারণে বন্ধ থাকে বিশ্ববিদ্যালয় শাটল। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে শাটল ট্রেন আটকে দেয় শহর থেকে ছাত্রছাত্রীরা যেতে পারেনি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীরা ক্যম্পাসের বিভিন্ন স্থানে আলাদা আলাদা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। আন্দোলনে যোগ দিতে পরীক্ষা না দিয়ে হল থেকে বেরিয়ে আসে রাজনীতিবিজ্ঞান ও বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কার করা উচিত - জাফর ইকবাল ॥ শাবি সংবাদদাতা জানিয়েছেন, সরকারী চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে যে কোটা রয়েছে তা অতিরিক্ত বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি বলেছেন, তা সংস্কারের মাধ্যমে বাস্তবসম্মত পর্যায়ে নিয়ে আসা দরকার। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কোটা প্রচলিত রয়েছে। কোন পার্টিকোলার গ্রুপ যদি পিছিয়ে পড়া থাকে, অবহেলিত থাকে তবে, সেই গোষ্ঠীকে সামনে নিয়ে আসার জন্য কোটার প্রচলন করা হয়। তবে তা অবশ্যই নিয়মের মধ্যে হতে হবে। এর পরিমাণ সমাঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে, যুক্তিপূর্ণ হতে হবে, লজিক্যালি হতে হবে, দেশের স্বার্থের সঙ্গে ডিপেন্ডেড হতে হবে। কিন্তু যদি মনে হয় এর পরিমাণ বেশি হয়ে গেছে তবে সেটা পরিবর্তন করা দরকার। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে এমন মন্তব্য করেন জাফর ইকবাল। মুক্তিযোদ্ধা কোটাও মাত্রাতিরিক্ত মন্তব্য করে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান অক্ষুণœ রাখতে কোটা সংস্কার করা জরুরী। দেশের মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের এত ভালবাসে, এত সম্মান করে; মুক্তিযোদ্ধা কোটা যদি একটা রিজনেভল পর্যায়ে থাকত তাহলে মুক্তিযোদ্ধারা অসম্মানিত হতেন না। বাস্তবসম্মত করে সব কোটা সংস্কার করা প্রয়োজন। মুক্তিযোদ্ধা কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা ও আদিবাসী কোটা ছাড়া অন্য যেসব কোটা রয়েছে সেসব কোটার পক্ষে নন বলেও জানান জাফর ইকবাল। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা ও আদিবাসী কোটার সংখ্যা খুবই কম। এগুলো ছাড়া অন্য যেসব কোটা রয়েছে সেসব কোটার পক্ষের মানুষ আমি না। তবে আমি একা বললে তো হবে না। এটা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেবে। কোটা যত কম ততই ভাল মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের দেশের কোটার মতো অন্য কোথাও এত সংখ্যক কোটা নেই। এই পরিমাণ কমিয়ে নেয়া উচিত। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশী হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, শিক্ষক হিসেবে যেকোন শিক্ষার্থী বা মানুষের ওপর পুলিশের হামলা আমাদের ভাল লাগে না। এটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। এই পর্যায়ে আসার আগেই এটা এড্রেস করা উচিত ছিল। আন্দোলকারী শিক্ষার্থীরা কোটার বিরুদ্ধে কথা বলছে না। তারা সংস্কার চাইছে। পৃথিবীর সব দেশেই প্রতিনিয়ত সংস্কার হয়। বাংলাদেশের কোটাও সংস্কার করা দরকার। সারাদেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা জানিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনে নামে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সোমবার সকাল ৭টায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা দিনব্যাপী কর্মসূচী পালন করে। কোটা সংস্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি), রংপুর সরকারী কলেজ, সরকারী বেগম রোকেয়া কলেজ ও কারমাইকেল কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে। সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রেখে মডার্ন মোড়ে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের সাত জেলার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের প্রবেশপথে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়ায় কোন বিভাগে ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়নি। বরিশালে অবরোধ ॥ কোটা পদ্ধতি সংস্কারসহ পাঁচ দফা দাবি ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার চেয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সড়ক অবরোধ করায় বরিশাল-পটুয়াখালী সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত। ফলে দুর্ভোগে পরে বরিশাল, বাকেরগঞ্জ, পটুয়াখালী, কুয়াকাটা, বরগুনা রুটের চলাচলরত যাত্রীরা। বাকৃবি শিক্ষার্থীদের রেললাইন অবরোধ ॥ বাকৃবি সংবাদদাতা জানান, কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেললাইন আবরোধ করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টার দিকে সংঘবদ্ধ বিপুলসংখ্যক সাধারণ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের রেল লাইন অবরোধ কর ঢাকার সঙ্গে বৃহত্তর ময়মনসিংহের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে। আন্দোলন, নাশকতা নিয়ে নানা সন্দেহ ॥ কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন নিয়ে তিন সন্দেহ বিরাজ করছে সরকারে। সন্দেহের তালিকায় আছে বিএনপি-জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির সাধারণ ছাত্রের বেশ ধরে এই আন্দোলনে মিলিত হয়ে উস্কানি দিয়েছে, যাতে বেকায়দায় ফেলা যায় সরকারকে। এছাড়া গত কয়েক বছরে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী ছাত্রশিবির ও ছাত্রদের ক্যাডাররা এই আন্দোলনে জড়িয়েছে সরকারের বিপক্ষে। ছাত্রলীগের আসন্ন সম্মেলন বানচাল করতে চায় এমন একটি অংশের ইন্ধন আছে এমন সন্দেহও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না বলে বলছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। রংপুরেও প্রতিবাদ ॥ কোটা সংস্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি), রংপুর সরকারী কলেজ, সরকারী বেগম রোকেয়া কলেজ ও কারমাইকেল কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে। সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রেখে মডার্ন মোড়ে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা।
×