ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

২ কোটি ১০ লাখ মানুষকে আইনী সহায়তা দেয়া হবে

গ্রাম আদালতের দ্বিতীয় পর্যায়ের কার্যক্রম বাস্তবায়ন চলছে

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ২৪ মার্চ ২০১৮

গ্রাম আদালতের দ্বিতীয় পর্যায়ের কার্যক্রম বাস্তবায়ন চলছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তৃণমূল পর্যায়ে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সুফল পৌঁছে দিতে দেশে গ্রাম আদালত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ের মেয়াদ শেষে এখন দ্বিতীয় পর্যায়ের কার্যক্রম বাস্তবায়ন চলছে। ইউএনডিপি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে এক হাজার ৮০টি ইউনিয়নে গ্রাম আদালত কাজ করে যাচ্ছে। এই আদালতের মাধ্যমে গত ৮ বছরে ৭০ লাখের বেশি গ্রামীণ জনগোষ্ঠী বিচারিক সহায়তা পেয়েছেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২ কোটি ১০ লাখ গ্রামীণ ও দরিদ্র জনগণকে উন্নত আইনী সহায়তা দেয়ার টার্গেট নেয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পটির ২য় পর্যায়ের কার্যক্রম চলছে। দেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ পাইলট প্রকল্প ২০০৯-২০১৫ সাল মেয়াদে ১৪টি জেলার ৫৭টি উপজেলার ৩৫১টি ইউনিয়নে বাস্তবায়িত হয়েছে। এখন দ্বিতীয় পর্যায়ে ইউএনডিপি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) ও বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের অর্থায়নে জানুয়ারি ২০১৬ থেকে দেশের ৮টি বিভাগের ২৭টি জেলার ১২৮টি উপজেলার এক হাজার ৮০টি ইউনিয়নে কাজ শুরু করা হয়েছে। গত ৮ বছরে ৭০ লাখের বেশি গ্রামীণ জনগোষ্ঠী বিচারিক সহায়তা পেয়েছেন এই আদালতের মাধ্যমে। বিপুলসংখ্যক বিরোধ নিষ্পত্তির কারণে প্রকল্পটি দেশে-বিদেশের স্টেকহোল্ডারদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে দাতা সংস্থা গ্রাম আদালতের দ্বিতীয় ধাপের কার্যক্রম চালু করেছে। প্রথম পর্যায়ের চেয়ে দ্বিতীয় ধাপে কার্যক্রমের এলাকা আরও অনেক বেশি। এলজিআরডি সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার তৃণমূলে স্থনীয় সরকার ব্যবস্থার সুফল পৌঁছে দিতে গ্রাম আদালত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। স্থানীয় সরকারের শেষ ধাপ হিসেবে গ্রাম আদালতকেই ধরা হচ্ছে। এখান থেকে বিরোধ নিষ্পত্তি হলে দেশে মামলা মোকদ্দমার হার বহু গুণে কমে যাবে। এতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত কম হবে। নানা ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবেন। দ্বিতীয় পর্যায়ের কার্যক্রম চালু হওয়ায় উপকার ভোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে। বর্তমান সরকার বিভিন্ন সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছে। গ্রাম আদালত এমন একটি সেবা যা জনগণের জীবনযাত্রার মানকে উন্নত করতে পারে। এটি বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে শান্তি ও সম্প্রীতি বাড়াতে কাজ করছে। গ্রাম আদালতের মাধ্যমে গ্রামের হাজার হাজার বিরোধ নিষ্পত্তি হচ্ছে। যদি এই আদালত কাজ না করত তাহলে হাজার হাজার মামলা হতো। এতে মামলা জট আরও বেড়ে যেত। গ্রাম আদালতের সুফল জনগণ পেয়েছে বলেই দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ প্রকল্পের প্রথম ও ২য় পর্যায় বাস্তবায়নের জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ৪০ মিলিয়ন ইউরোর বেশি অর্থ সহায়তা দিয়েছে। এর সঙ্গে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগণের কাছে বিচারিক সুবিধা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার আরও ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা করেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২ কোটি ১০ লাখ গ্রামীণ ও দরিদ্র জনগণকে উন্নত আইনী সহায়তা দেয়ার টার্গেট নেয়া হয়েছে। গ্রাম আদালতকে সাহায্য করতে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৯১৪ ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিনিধি ও কর্মকর্তাবৃন্দ এবং ৩ হাজার ৫২৯ গ্রাম পুলিশ প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। এ প্রকল্পের প্রথম ছয় বছরে ৮৭ হাজার ২ শ’ মামলার মধ্যে ৬৯ হাজার ২ শ’ টি মামলা সাফল্যের সঙ্গে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে। জেলা আদালত থেকে বিচারযোগ্য ৬ হাজার মামলা গ্রাম আদালতে পাঠান হয়েছিল। ওই মামলাগুলো গ্রাম আদালতে নিষ্পত্তি হয়েছে। মাত্র ২৮ দিনের মধ্যে মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হয়। গ্রাম আদালতে বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২৯ দশমিক ৩ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ৭৯ মার্কিন ডলার আদায় করা সম্ভব হয়েছে। এই টাকা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে দেয়া হয়। কিছু টাকা সরকারের কোষাগারে চলে এসেছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে গ্রাম আদালতগুলো কাজ করে যাচ্ছে। এ আদালতে যাতে কোন পক্ষপাতিত্ব না হয় এ বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়েছে। গ্রাম আদালতগুলোকে পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে।
×