ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আইনী পরামর্শ

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ১৬ মার্চ ২০১৮

আইনী পরামর্শ

প্রশ্ন : আমাদের বাড়ি সিরাজগঞ্জ। ১৯৬৯ সালে নতুন জেগে ওঠা চর সরকার থেকে রিসেটেলমেন্ট (Resettlement) নেই এবং তখন থেকেই দখলে আছি। শুরু থেকেই নদীর ওপারের লোকজন এসে দাবি করছে যে, এ জমি আদিকাল থেকেই তাদের পূর্ব-পুরুষের। এই স্থানেই তাদের জমি ছিল এবং এখানেই তারা বসবাস করত। নদী ভাঙ্গনের পরে ওপার চলে যায়। এখানেই যেহেতু আবার ফিরে এসেছে, তাই এখন এ জমি তাদের। তারা তাদের দাবির সমর্থনে একখানা দানপত্র দলিল প্রদর্শন করে এবং জমি দখল নেয়ার পাঁয়তারা করায় বহু বছর ধরে দু’পক্ষের মারামারি চলে আসছে। উভয় পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলা চলছে। আমার পরিবারের পক্ষ থেকে আমার আব্বা ওই জাল দলিলের বিষয়ে ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/১০৯ ধারার অধীনে একটি জালিয়াতির মামলা আদালতে দায়ের করেন। আদালত তদন্ত প্রতিবেদনের আদেশ দেয়। কিন্তু ঘটনার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি এই মর্মে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। ম্যাজিস্ট্রেট আমাদের মামলাটি ডিসমিস (Dismiss) করে দেয়। পরে দায়রা জজের নিকট রিভিশন (Revision) করি। সেটাও ৎবলবপঃ হয়। পরবর্তীতে বাদী ঈযধহমব (পরিবর্তন) করে, আমার ভাইকে বাদী করে, আমরা নতুনভাবে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করি। এবারও Magistrate তদন্তের আদেশ দেন। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে পুলিশী প্রতিবেদনের পর মামলাটি আদালত গ্রহণ করে। পরবর্তীতে অপর পক্ষ (বিবাদীরা) জজ কোর্টে রিভিশন করে। সেখানেও একই আদেশ হয় যে, মামলাটা চলতে পারে- কিন্তু আসামিরা হাই কোর্টে মামলা করে। এই বলে যে, ৪০৩ ধারা মতে, একই ঘটনা নিয়ে দ্বিতীয়বার বিচার হবে না। একটু বুঝিয়ে বলবেন কি? উত্তর : আপনাদের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চলমান দ্বিতীয় মামলাটি এখনও অনিষ্পত্তিকৃত। তাদের দাবির যে সিকস্তি-পয়স্তির জমি তা যদি ফিরে আসে, তবে তার মালিক হয় সরকার। আপনি সরকার থেকে রিসেটেলমেন্ট নিয়েছেন তা সঠিক। আর তাদের জমি নদী ভাঙ্গনের ফলে চলে যায় কিন্তু খতিয়ানে নাম থেকে যাওয়ায় সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দানপত্র দলিল রেজিস্ট্রি হতে পারে, যা জালিয়াতি হয়েছে বলা কঠিন। শেষ বিষয়টি হলো একই বিষয়ে দু’বার মামলা চলে না। যা বলা আছে, ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৪ এর ৪০৩ ধারায়। তবে এখানে Question তাদের কথা অনুযায়ী একই মামলার একই বিষয়বস্তু এবং বাদী-বিবাদী এক হলে, সে বিষয়ে দু’বার বিচার হবে না। আবার ৪০৩ ধারা অনুযায়ী যদি একই ঘটনায় সাক্ষ্য-প্রমাণ গ্রহণান্তে বিচারিক সিদ্ধান্তে কেউ যদি Acquitted (খালাস) বা ঈড়হারপঃবফ (দায়ী) সাব্যস্ত হয়, তবে দ্বিতীয়বার মামলা চলবে না। সে মোতাবেক উক্ত আসামি খালাসও হয়নি, দোষীও সাব্যস্ত হয়নি। ফলে মামলাটি চলতে পারে। উভয় দিকেই যুক্তি রয়েছে। তবে নদী ভাঙ্গনের ফলে জমি নদীগর্ভে চলে যায়। আবার যদি ওই জমি ফিরে আসে, তাহলে সিকস্তি-পয়স্তির আইন অনুসারে, নদী ভাঙ্গনের আগে জমি যাদের ছিল, তারাই আবার ফিরে পাবে। আপনাদের মাননীয় আদালতের রায়ের জন্য আপেক্ষ করতে হবে। মাননীয় আদালত প্রমাণ সাপেক্ষে বিচার বিশ্লেষণ শেষে যে রায় দেবে, সেটি উভয় পক্ষকে মেনে নিতে হবে।
×