ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এক দশকেও নতুন জোট হয়নি

ড. কামালসহ ছয় নেতার ঐক্যের হাঁকডাক চলছেই

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ড. কামালসহ ছয় নেতার ঐক্যের হাঁকডাক চলছেই

রাজন ভট্টাচার্য ॥ রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে ছয় দলের ছয় নেতার জাতীয় ঐক্যের আহ্বান প্রায় এক দশকের বেশি সময়ের। নির্বাচন আসে যায়। কিন্তু ঐক্য সুদৃঢ় হয় না কখনই। ঐক্য ভেঙ্গে যায় তাসের ঘরের মতো। দ্রুত সময়ের মধ্যে অপমৃত্যু হয় ‘ঐক্য’ নামক সেই স্বপ্নের। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফের সেই দল ও নেতাদের ঐক্যের হাঁকডাক চলছে। কিন্তু আদৌ কি ঐক্য হবে। পূরণ হবে কি সেই স্বপ্নের। এ নিয়ে রাজনীতিতে রয়েছে বিস্তর আলোচনা। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, ছয় দলের বেশিরভাগ নেতাই এক সময় বড়-বড় দলে ছিলেন। বঞ্চিত নেতারা এখন খণ্ড-খণ্ড অংশে বিভক্ত। তাই জনসমর্থন না থাকায় ঐক্য গড়ে তোলা কঠিন বিষয়। সবচেয়ে বড় বাস্তবতা হলো, নিজেদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব। তাছাড়া সবাইকে নিয়ে ঐক্য গড়ে তোলার কথা বললেও নিজেদের মধ্যে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে কোন প্রকার চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করতে পারেননি প্রক্রিয়ায় সঙ্গে যুক্ত দলের নেতারা। সাম্প্রতিক সময়ে জনমত যাচাই করতে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও একটিও বাস্তবায়ন হয়নি। এমন অবস্থায় ঐক্য প্রক্রিয়ার ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ২০০৬ সালের নির্বাচনের আগে থেকেই মূলত সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার বিষয়টি আলোচনায় আনেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। পর্যায়ক্রমে তার ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি-রব), বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ নাগরিক ঐক্য। এরমধ্যে তিনটি নির্বাচন পেরিয়ে গেছে। চলতি বছরের শেষ দিকে ফের সংসদ নির্বাচন। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারও ঐক্য জোটের তৎপরতা। সম্প্রতি একাধিক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও হয়েছে জোটের। কিন্তু কোন ফল বলার মতো কিছু নয়। জোট গঠনের জন্য গণফোরাম ও বিকল্পধারা মিলে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছিল গণমাধ্যমে! সোমবার ফের তৎপরতা দেখা গেল জোটের নেতাদের। জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তারা। এতে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, কোন রাজনৈতিক দলের ঐক্যের চেয়ে সর্বস্তরের জনগণের ঐক্য বর্তমান অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে। তিনি বলেন, জনগণই এদেশের মালিক। কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্র বেদখল হয়ে গেছে। জনগণ এখন পরিবর্তন চায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসনে যা চলছে- তা থেকে তারা মুক্তি চায়। তবে এ মুক্তির জন্য জনগণেরই ঐক্য দরকার। কোন রাজনৈতিক দলের ঐক্যের চেয়ে সর্বস্তরে জনগণের ঐক্য এ থেকে মুক্তি দিতে পারে। সভায় লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন গণফোরাম নেতা আওম শফি উল্লাহ। তিনি বলেন, একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের তীব্র আকাক্সক্ষা জনমনে এখনও প্রত্যাশিত। আশাকরি সরকার সকল রাজনৈতিক দল ও শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হবেন। এ সময় স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল রাজনৈতিক দল ও শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সমাজের গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও কর্মসূচীভিত্তিক জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি। জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্য করতে হবে। দেশের এখন যে অবস্থা তাতে সব দলকে নিয়ে ঐক্য করতে হবে। কারো ব্যাপারে কোন ধরনের রিজার্ভেশন থাকলে ঐক্য হবে না। সে ধরনের ঐক্যে তিনি নেই বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। সিপিবির সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান বলেন, দেশের পরিস্থিতি ক্রমেই ফ্যাসিবাদের দিকে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে না দাঁড়ালে পরিণতি ভয়াবহ। তিনি দলমত নির্বিশেষে স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির ঐক্যই পারে এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে একটি জাতিকে রক্ষা করতে হবে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, জনগণের বুকে লাথি মেরে, গলাটিপে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বলেন, দেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়। তারা একবেলা মাটির থালায় খাবে তবু আত্মমার্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। তারা ভোটারবিহীন গণতন্ত্র চায় না। দুই কোটি টাকার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে জেলে যাওয়ার বিষয়টি আমার মন কেন জানি সমর্থন দেয় না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, বারবার ঐক্যের মাধ্যমে তৃতীয় বৃহৎ রাজনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টা হলেও নিজেদের মধ্যে মতবিরোধে তা ভেস্তে যায়।
×