ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনীকে সদা জাগ্রত থাকতে হবে ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনীকে সদা জাগ্রত থাকতে হবে ॥ প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর, ২২ ফেব্রুয়ারি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “কোন অশুভ এবং স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি যেন আমাদের কোন ক্ষতি করতে না পারে, সেজন্য সকলকে সজাগ থাকতে হবে”। তিনি বলেন, পবিত্র সংবিধান ও দেশের সার্বভৈৗমত্ব রক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক যে কোন ধরনের হুমকি মোকাবেলায় সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আধুনিক, উন্নত, সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সেনাবাহিনাীকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নাটোরের কাদিরাবাদ সেনানিবাসে কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের ৬ষ্ঠ কোর পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাসদস্যের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা দেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন দেশকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সমগ্র জাতিকে নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেছিলেন। বাংলাদেশের জন্য একটি উন্নত, পেশাদার এবং প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে একটি প্রতিরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করেন। জাতির পিতার প্রণীত নীতিমালার আলোকে আমরা “আর্মড ফোর্সেস গোল-২০৩০” প্রণয়ন করে সেনাবাহিনীর উজ্জ্বল ও আধুনিকায়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছি। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৯৯৬-২০০০ মেয়াদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ৯ বছরে আমরা সেনাবাহিনীর অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেনাবাহিনীতে নতুন নতুন ডিভিশন ও ব্রিগেড প্রতিষ্ঠাসহ অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও সরঞ্জামাদিতে সজ্জিত করা হয়েছে। এছাড়া, আর্মড ব্রিগেড, কম্পোজিট ব্রিগেড ও প্যারা কমান্ডো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়া, বাংলাদেশ ইনফেন্ট্রি রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই বাহিনীকে আধুনিক, যুগোপযোগী করতে আরও অনেক আধুনিক যানবাহন, হেলিকপ্টার, সমরাস্ত্র ও সরঞ্জামাদি সংযোজন করা হয়েছে। যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা ও দুর্ঘটনায় দুর্গতদের সাহায্য ও সহযোগিতা করে সশস্ত্র বাহিনী অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সুদৃঢ় বন্ধন রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার দুই ভাই, শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ও শহীদ লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। শেখ জামাল ১৯৭৫ সালে রয়েল মিলিটারি একাডেমি স্যান্ডহার্স্টস থেকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ শেষে কমিশন লাভ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকেরা সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বিগত ৯ বছরে বর্তমান সরকারের আমলে দেশের যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধিত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। মানুষ এখন এর সুফল ভোগ করছে। দেশের উন্নয়নে এখন ৯০ ভাগ কাজই নিজস্ব অর্থায়নে করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার ৭.২৮ শতাংশ। দারিদ্র্যের হার ২০১৫ সালের পর থেকে ৪১ শতাংশ থেকে নেমে ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। মাথাপিছু আয় ২০০৫ সালের ৫৪৩ থেকে ১ হাজার ৬১০ ডলারে উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া দেশের রফতানি ও বিদেশ থেকে প্রেরিত রেমিটেন্সের পরিমাণও তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৯ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৩.৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন থ্রিজির পর ফোরজির যুগে প্রবেশ করেছে। প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার চালু করা হয়েছে। বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে ১৬ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, সারাদেশে একশটি অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান হবে। স্বাস্থ্যসেবা আজ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। মেট্রোরেল, পায়রা বন্দর, কর্ণফুলি নদীর তলদেশে টানেল এবং এলএনজি নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। খুব শীঘ্রই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পরিশেষে, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করা হবে বলে তিনি জোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বৃহস্পতিবার দুপুরে বৃহস্পতিবার নাটোরের কাদিরাবাদ সেনানিবাসে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার্স কোরের ৬ষ্ঠ পুনর্মিলনী ও অধিনায়ক সম্মেলন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি বেলা ১১টার দিকে আকাশ পথে ঢাকা থেকে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার দয়ারামপুরের কাদিরাবাদ সেনানিবাসে এসে উপস্থিত হন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অবঃ) তারিক আহম্মেদ সিদ্দিক, নৌ-বাহিনীর প্রধান এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ ও বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল আবু এসরার। এছাড়াও অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য, ঊর্ধ্বতন সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দসহ ইঞ্জিনিয়ার সেন্টার এ্যান্ড স্কুল অব মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং এর অবসরপ্রাপ্ত ও চাকরিরত কর্মকর্তা এবং অন্যান্য পদবির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী পুনঃমিলনী এক প্রীতিভোজে অংশ নেন।
×