ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার

ঋণসীমা সমন্বয় ॥ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় পাচ্ছে ব্যাংকগুলো

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ঋণসীমা সমন্বয় ॥ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় পাচ্ছে ব্যাংকগুলো

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংকগুলোর আমানতের তুলনায় ঋণ বিতরণের সীমা সমন্বয়ের সময় বাড়িয়ে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এক সার্কুলারে সংস্থাটির পক্ষ থেকে গত মঙ্গলবার জানানো হয়, ব্যাংকগুলো ঋণসীমা সমন্বয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় পাবে, যা আগে ছিল জুন পর্যন্ত। এর আগে ঋণসীমা কমিয়ে দেয়া ও জুনের মধ্যে তা সমন্বয় করার নির্দেশনার কারণে বেশকিছু ব্যাংকে অর্থের টানাটানি পড়ে যায়। সুদের হার বাড়িয়ে আমানত সংগ্রহে নেমে পড়ে ব্যাংকগুলো। বেড়ে যায় ঋণের সুদের হারও। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা আপত্তি করেন। অবশেষে কড়াকড়ি আরোপের ২১ দিনের মাথায় বিতরণের সীমা সমন্বয়ের সময় বাড়িয়ে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। অবশ্য ঋণসীমা রাখা হয়েছে আগের মতোই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারি করা সার্কুলারে বলা হয়েছে, নতুন ঋণসীমা পরিপালনের সময়সীমা ৩০ জুনের পরিবর্তে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পুনঃনিধারণ করা হলো। এ ক্ষেত্রে গত ৩০ জানুয়ারি বা তার আগে গ্রাহককে দেয়া কোন প্রতিশ্রুতি (কমিটমেন্ট) ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সরাসরি ঋণে (ফান্ডেড) পরিণত হওয়ার কারণে ঋণসীমা বেড়ে গেলেও তা নির্দেশনার লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য করা হবে না। তবে এ ক্ষেত্রেও ঋণ আমানত হার ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনতে হবে। প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো ১০০ টাকা আমানত সংগ্রহ করলে ৮৫ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারত। গত ৩০ জানুয়ারি এক সার্কুলারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, আমানতের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৮৩ টাকা ৫০ পয়সা ঋণ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। ইসলামী ধারার ব্যাংক আগে ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ৯০ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারত, নতুন নির্দেশনায় যা ৮৯ টাকা করা হয়। যেসব ব্যাংকের ঋণ নতুন সীমার বেশি রয়েছে, তারা তা সমন্বয় করতে পাঁচ মাসের মতো সময় পেয়েছিল। এই অল্প সময়ের কারণে ঋণ আদায় ও নতুন আমানত সংগ্রহের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো অর্থ সংগ্রহে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিছু ব্যাংক আমানতের সুদের হার ৯ শতাংশে উন্নীত করে। এতে অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। সরকারী অনেক সংস্থাও বেসরকারী ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নেয়া শুরু করে। এর আগে সম্প্রতি অগ্রণী ব্যাংকের এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির বলেন, একটি বেসরকারী ব্যাংক (ফারমার্স) খারাপ অবস্থায় পড়ে গেছে। বেসরকারী ব্যাংক থেকে সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আমানত সরিয়ে নিতে চাইছে। একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এ আতঙ্ক আগে শেয়ারবাজারে ছিল, এখন ব্যাংকে চলে আসছে। বিষয়টি নিয়ে উপস্থিত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হস্তক্ষেপ চান গবর্নর। গবর্নর বলেন, আমদানি যে হারে বাড়ছে, রফতানি ও প্রবাসী আয় সে হারে আসছে না। এতে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ বেড়েছে। দাম বেড়ে গেছে। চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় ১৫০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। এর মাধ্যমে বাজার থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে এসেছে। পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে গবর্নর বলেন, ৫৭ ব্যাংকের মধ্যে ৩৮ ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) সীমার নিচেই আছে। অযথাই বলা হচ্ছে, ঋণসীমা সমন্বয়ের কারণে বড় প্রভাব পড়বে। নতুন নিয়মের ফলে ১১ হাজার কোটি টাকার আমানত লাগবে। এর মধ্যে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন, বাংলাদেশ কৃষি, বেসিক ও ফারমার্স ব্যাংকেরই ৬ হাজার কোটি টাকা। বাকি বেসরকারী ১৫ ব্যাংকের লাগবে ৫ হাজার কোটি টাকা। আগ্রাসী ঋণ বিতরণ বন্ধ, ঋণের মান ভাল ও ঋণশৃঙ্খলা নিশ্চিতে ঋণসীমা কমানো হয়েছে। আমানতের সুদ হার বাড়তে শুরু করেছে, এটা আমানতকারীদের জন্য ভাল। তবে ঋণের সুদহার বাড়াটা ভাল নয়। এটা স্বল্প সময়েই ঠিক হয়ে যাবে। পরিস্থিতি সামলাতে অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বক্তব্য দেয়ায় এ নিয়ে পুরো খাতে এক ধরনের আতঙ্ক ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এরপর আগের অবস্থান থেকে পিছু হটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
×