ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক

মন্ত্রীর আশ্বাসে প্রাথমিক শিক্ষকদের অনশন কর্মসূচী স্থগিত

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭

মন্ত্রীর আশ্বাসে প্রাথমিক শিক্ষকদের অনশন কর্মসূচী স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের দাবি বিবেচনার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আমরণ অনশন কর্মসূচী স্থগিত করেছেন সরকারী প্রাথমিক শিক্ষকরা। অনশনের তৃতীয় দিন সোমবার বেলা তিনটায় মিন্টো রোডে মন্ত্রীর বাসভবনে শিক্ষক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর শিক্ষকরা শর্তসাপেক্ষে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন। শিক্ষকরা বলেছেন, মাননীয় মন্ত্রী আমাদের বলেছেন তিনি আমাদের দাবি-দাওয়াগুলো বিবেচনা করবেন। আমরা অপেক্ষা করব। দাবি পূরণ না হলে আবার আন্দোলন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, না খেয়ে দাবি আদায় করা সম্ভব না। দাবি-দাওয়া পূরণ করতে হলে আলাপ-আলোচনা করতে হয়। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দাবি আদায় করা যায়। প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা আমাদের ওপর আস্থা রেখেছেন। আমি তাদের আস্থার প্রতিদান দিব। এই সরকারের মেয়াদে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেডে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। সন্ধ্যায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামান, প্রাথমিক অধিদফতরের মহাপরিচালকের উপস্থিতিতে আন্দোলনরত প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা শরবত খেয়ে অনশন ভাঙ্গেন। প্রাথমিকের শিক্ষক প্রতিনিধি দলের নেতা তপন কুমার ম-ল বলেছেন, মন্ত্রী মহোদয় আমাদের বলেছেন তিনি আমাদের দাবি-দাওয়াগুলো বিবেচনা করবেন। শনিবার সকাল ১০টায় বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মহাজোটের উদ্যাগে এ অনশন কর্মসূচী চলছে। মহাজোটের অধীনে সহকারী শিক্ষকদের ১০টি সংগঠনের কয়েক হাজার শিক্ষক দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে যোগ দিয়েছেন অনশন কর্মসূচীতে। তাদের দাবি, আগের বেতন স্কেলগুলোতে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা বেতন পেতেন। কিন্তু ২০১৫ সালের বেতন কাঠামোতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের ব্যবধান তিন ধাপ। এখন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা ১৪তম গ্রেডে (মূল বেতন ১০ হাজার ২০০) বেতন পাচ্ছেন। আর প্রধান শিক্ষকরা পাচ্ছেন ১০তম গ্রেডে (মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা)। সহকারী শিক্ষকরা এ বৈষম্য নিরসনে প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে ১১তম গ্রেডে (১২ হাজার ৫০০) বেতন চান। এদিকে আন্দোলনরত সহকারী শিক্ষকরা চার শর্তে আন্দোলন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছে প্রাথমিকের শিক্ষক প্রতিনিধি দল। যেসব শর্তে আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে বলে দাবি করছেন শিক্ষকরা তা হলো-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ১০ গ্রেড স্থগিত। নতুনভাবে একসঙ্গে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড নির্ধারণ করা হবে, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের গ্রেডের মধ্যে যে বৈষম্য ছিল তা দূরীকরণ করা হবে, প্রাথমিকের শিক্ষক প্রতিনিধিদলের একটি কমিটি দফতরে দফতরে (প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ও প্রাথমিক অধিদফতরের মহাপরিচালক) গিয়ে শিক্ষকদের সমস্যাগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করবেন। ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের মঞ্চে উঠতেই দেননি শিক্ষকরা ॥ শহীদ মিনারে অনশন কর্মসূচীতে কমিউনিস্ট পার্টির নেতার বক্তব্য দেয়ার সময় মঞ্চে উঠতেই পারলেন না চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলনের নেতারা। সোমবার দুপুর ১টার দিকে ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম-মহাসচিব অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল শিক্ষকদের দাবির প্রতি একাত্মতা জানাতে শহীদ মিনারে আসেন। ওই সময় বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স মঞ্চে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। প্রতিনিধিদলটি বক্তব্য দেয়ার স্থানের কাছাকাছি এলে শিক্ষক নেতারা তাদের আটকে দেন। এই সময় হেমায়েত উদ্দিন বলেন, আমরা চরমোনাই পীরের নির্দেশে আপনাদের দাবির প্রতি একাত্মতা জানাতে এসেছি। আমরা মঞ্চে গিয়ে শিক্ষকদের সালাম জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানাব। কয়েক শিক্ষক নেতা বলেন, আপনাদের যা বলার আমাদের বলুন আমরা মাইকে জানিয়ে দেব। ওই সময় হেমায়েত উদ্দিন বলেন, আমি দেখছি কমিউনিস্ট পার্টির রুহিন হোসেন প্রিন্স ভাই বক্তব্য দিচ্ছেন। অন্যরা বক্তব্য দিয়েছেন বলে জেনেছি। আমরা দিলে ক্ষতি কী? আপনারা বিমাতা সুলভ আচরণ করছেন। কাউকে বক্তব্য দিতে দিচ্ছেন, আবার কাউকে দিচ্ছেন না। আমরা তো আপনাদের পক্ষে কথা বলতে এসেছি।’ কিন্তু কোন কথাই শুনছিলেন না শিক্ষকরা। একজন শিক্ষক বলেন, আপনারা মঞ্চে গেলে আমাদের ক্ষতি হয়ে যাবে। আপনারা যেতে পারবেন না।’ এ সময় শিক্ষকরা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দেয়াল তৈরি করেন যাতে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা আর এগোতে না পারেন। এ পর্যায়ে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মী ও শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক বাগবিত-া হয়। তবে মাইকে ইসলামী আন্দোলনের শিক্ষকদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশের বিষয়টি ঘোষণা দেন শিক্ষক নেতারা। পরে দেড়টার দিকে ইসলামী আন্দোলনের নেতারা শহীদ মিনার ত্যাগ করেন। কমিউনিস্ট পার্টিসহ অন্যান্য দলের নেতাদের বক্তব্য দিতে দেয়া হলেও ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের কেন দেয়া হলো না- জানতে চাইলে জাতীয় প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ফাউন্ডেশনের সভাপতি শাহীনুর আক্তার বলেন, বলা হচ্ছে এই আন্দোলনে জামায়াত ঢুকে পড়েছে। এজন্য আমরা সতর্কতা অবলম্বন করছি। আমাদের ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে ইতোমধ্যে কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তি বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন থেকে আমরা আর কোন রাজনৈতিক দলের নেতাকে মঞ্চে উঠতে ও বক্তব্য দিতে দেব না।
×