ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাহরাইনে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশীর ভাগ্য অনিশ্চিত

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭

বাহরাইনে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশীর ভাগ্য অনিশ্চিত

ফিরোজ মান্না ॥ বছর শেষে শ্রম বাজারে আরও একটি দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছে। বাহরাইন থেকে অবৈধ ২০ হাজারের বেশি কর্মীকে দেশে ফিরতে হবে। বৈধ হওয়ার জন্য দু’দফা সময় পেয়েও তারা বৈধ হতে পারেননি। দালালের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার আবেদন করতে গিয়ে তারা প্রতারণার শিকার হন। অনেকে আবার নিজেরাই বৈধ হওয়ার জন্য আবেদন জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই সব আবেদন যথাযথ প্রক্রিয়ায় না হওয়ায় বিপুলসংখ্যক কর্মীর ভাগ্য এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এখন তাদের দেশে ফিরতে হবে। বর্তমানে দেশটিতে ৫৩ হাজারের বেশি বাংলাদেশী কর্মী বিভিন্ন পেশায় কাজ করছেন। গতবছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈধ হওয়ার সময় দিয়েছিল বাহারাইন কর্তৃপক্ষ। পরে এই সময় বাড়িয়ে এ বছরের ৩ মার্চ পর্যন্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তাতেও তারা বৈধতার সুযোগ নিতে পারেনি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে দেশটির কর্তৃপক্ষ অবৈধ বাংলাদেশীদের বৈধ করার আশ্বাস দিয়েছিল। ওই আশ্বাসের পর বাহরাইন লেবার মার্কেট রেগুলেটরি অথরিটি (এলএমআরএ) বাংলাদেশের অনুরোধে অবৈধদের বৈধ করার দু’দফা সুযোগ দেয়। একই সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বন্ধ শ্রমবাজার বাহারাইনে নতুন করে কর্মী নিয়োগের জন্য আলাপ আলোচনা শুরু করে। দীর্ঘ চার বছর ধরে বাজারটি বন্ধ রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের এই বাজারটি খুলে গেলে অনেক কর্মী চাকরি নিয়ে যেতে পারবেন। শেষ পর্যন্ত বাহারাইন সরকার অবৈধ কর্মীদের বৈধতাও দেয়নি ও নতুন করে কর্মী নিয়োগের কোন উদ্যোগও নেয়নি। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও বাহারাইনের এলএমআরএ’র সঙ্গে অবৈধ কর্মীদের বৈধ করার বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে কয়েক দফা বাহরাইনের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। ওই সময় বাংলাদেশ থেকেও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল কয়েক দফা দেশটি সফর করেছেন। এরপরই এলএমআরএ বিষয়টি নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেয়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবৈধ বাংলাদেশীদের বৈধ করার কাজ শুরু করে এলএমআরএ। একই সঙ্গে বাহরাইন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের বিষয়েও আগ্রহ দেখায়। তবে তারা বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দেয়। এই শর্ত পূরণ করার পর কর্মী নেয়ার কথা ছিল। মন্ত্রণালয় বলছে বাহারাইনের দেয়া সব শর্ত পূরণ করার পরও নতুন করে কর্মী নেয়ার কোন উদ্যোগ নেয়নি। বরং যারা দেশটিতে অবৈধ হয়ে পড়েছে তাদের বৈধতা না দিয়ে দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি ঘোষণা করেছে কোন বিদেশী কর্মী চাকরির মেয়াদের বেশি সময় থাকতে পারবে না। গত মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যেসব কর্মী অবৈধভাবে দেশটিতে অবস্থান করছেন তাদের দেশে পাঠানোর সব প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। যে কোন দিন কর্মীদের দেশে পাঠানোর কাজ শুরু করবে বাহারাইন কর্তৃপক্ষ। এলএমআরএ‘র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওসামা আবদুলা আল আবছি সম্প্রতি এ ঘোষণা দেন। এই ঘোষণাটি অক্টোবর থেকে শুরু করে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈধ হওয়ার সুযোগ থাকবে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালযের এক কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন বাংলাদেশের এই শ্রমবাজারটি বন্ধ রয়েছে। এ কারণে সেখানে থাকা হাজার হাজার বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের কর্মীরা অবৈধ হয়ে পড়েন। কেউ কেউ ৭ থেকে ৮ বছর ধরে দেশটিতে অবৈধভাবে বসবাস করে আসছেন। সাধারণ ক্ষমার মাধ্যমে অনেকে বৈধ হতে পেরেছেন। আবার অনেকে হতে পারেননি। এখন কেউ যদি সুযোগ হাত ছাড়া করে, তার জন্য দায়ী তারাই হবে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যথাযথ চেষ্টা করা হয়েছে। চার বছরের চেষ্টার ফলে বাহারাইনে অবৈধ কর্মীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ তৈরি হলেও অনেকেই তা কাজে লাগাতে পারেনি। মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদল একাধিকবার দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করেছেন। বাহরাইনের শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা লেবার মার্কেট রেগুলেটরি অথরিটির (এলএমআরএ) তথ্যানুযায়ী দেশটিতে বিভিন্ন দেশের ৭১ হাজারের মতো অবৈধ অভিবাসী আছেন দেশটিতে। এরমধ্যে প্রায় ৫৩ হাজারই বাংলাদেশী নাগরিক। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বাহারাইন সরকার দুই দফা সুযোগ দেয়ার পরে যারা বৈধ হতে পারেনি তাদের নিয়ে এখন আলোচনার সুযোগ নেই। তবে বাহারাইনে নতুন করে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। বাজারটি চালু করতে বাহারাইনের দেয়া শর্ত পুরন করা হয়েছে অনেক আগেই। এ বিষয়টি বাহারাইন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও দেয়া হয়েছে।
×