ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে দুই হাজার কোটি টাকা

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫৭ খাল উদ্ধার করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫৭ খাল উদ্ধার করা হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চট্টগ্রামের ‘দুঃখ’ জলাবদ্ধতা নিরসনে নেয়া সর্ববৃহৎ প্রকল্পে পরিবর্তন করা হয়েছে। ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পে পূর্বে নগরীর ৩৬টি খাল উদ্ধার, পরিষ্কার ও পুনঃখনন কাজ করার কথা থাকলেও তা পাল্টে ৫৭টি করা হচ্ছে। প্রকল্পের ব্যয় ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হচ্ছে ৭ হাজার কোটি টাকা। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নেয়া এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোর। আগামী জানুয়ারি মাসের শুরুতে এ সর্ববৃহৎ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এর আগে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। পরবর্তীতে একনেকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে আহ্বায়ক, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী এবং পানিসম্পদমন্ত্রীকে সদস্য করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক), সিডিএ, চট্টগ্রাম ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি নিয়ে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়। টেকনিক্যাল কমিটির প্রতিনিধিরা এরই মধ্যে কয়েকবার সভা করেছেন জানিয়ে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম জানান, ১৯৯৫ সালের সিডিএর মাস্টারপ্ল্যান ও ২০১৬ সালের ওয়াসার মাস্টারপ্ল্যানকে ভিত্তি করে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে এ মেগা প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়া হয়। ‘এ প্রকল্পের গুরুত্ব অনুধাবন করে চলতি বছরের ৯ আগস্ট একনেক সভায় ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার অনুমোদন দেয়া হয়। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্পের সমন্বয়ের জন্য চসিক, চট্টগ্রাম ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে সংযুক্ত করা হয় এবং সমন্বয়ের জন্য একটি টেকনিক্যাল কমিটিও গঠন করা হয়।’ তিনি বলেন, যেহেতু এটি বড় প্রকল্প তাই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরামর্শে ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় প্রকল্পে বেশকিছু সংশোধন আনা হচ্ছে। আগের প্রকল্পে ৩০২ কিলোমিটারে রোড সাইড ড্রেন পরিষ্কার ও মেরামতের কথা বলা থাকলেও তা সংশোধন করে ৫০০ কিলোমিটার করা হয়েছে। ১০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার নতুন সাইড ড্রেন নির্মাণের কথা থাকলেও তা সংশোধন করে ১০০ কিলোমিটার ধরা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পে আরও কিছু সংশোধন, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে প্রকল্প বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিডিএ চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আগামী বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারিতে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। প্রকল্পটির পরিচালক প্রকৌশলী আহম্মদ মাঈনুদ্দীন বলেন, ‘টেকনিক্যাল কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী প্রকল্পে বেশকিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। এর মধ্যে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ প্রকল্পের অধীনে থাকা বেশকিছু সাইড ড্রেন ইতোমধ্যে টেন্ডার দিয়েছে। যা প্রকল্পে আগে ছিল না। এসব আবার নতুন করে সংযুক্ত করা হচ্ছে। এছাড়া প্রকল্পের স্বার্থে আরও বেশকিছু পরিবর্তন করা হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নগরবাসী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে।’ জানা যায়, এই প্রকল্প ২০২০ সালের জুনে বাস্তবায়ন করা হবে। নগরীর জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণের প্রকল্পে সর্বমোট ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ের মধ্যে জমি অধিগ্রহণে ১ হাজার ৭২৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, নতুন রাস্তা নির্মাণে ৩১৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। এর মধ্যে ৩৬টি খালের মাটি অপসারণে ২৮ কোটি ৮৫ লাখ ও মাটি খননে ২৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এছাড়া ১৭৬ কিলোমিটার আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের জন্য ২ হাজার ৬৪০ কোটি, ৪৮টি পিসি গার্ডার ব্রিজ প্রতিস্থাপনে ২৯৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। বন্যার পানি সংরক্ষণে ৩টি জলাধার, ৬টি আরসিসি কালভার্ট প্রতিস্থাপন, ৫টি টাইডাল রেগুলেটর, ১২টি পাম্প স্থাপন, ৪২টি সিল্ট স্ট্র্যাম্প স্থাপন, ২০০টি ক্রস ড্রেনকালভার্ট নির্মাণ করা হবে। ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার রোড সাইড ড্রেনের সম্প্রসারণ, ২০০০টি বৈদ্যুতিক পুল স্থানান্তর, ৮৮০টি স্ট্রিট লাইট স্থাপন এবং ৯২টি ইউটিলিটি স্থানান্তর করা হবে এ প্রকল্পের আওতায়।
×