ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

গাইবান্ধায় ৪৬ বছরেও নির্মিত হয়নি স্মৃতিসৌধ

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭

গাইবান্ধায় ৪৬ বছরেও নির্মিত হয়নি স্মৃতিসৌধ

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাক হানাদার বাহিনী তৎকালীন গাইবান্ধা মহকুমার বিভিন্ন স্থানে পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়ে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে। এছাড়া, বোনারপাড়া লোকোশেডে কয়লার ইঞ্জিনের চুল্লিতে জীবন্ত মানুষ ঢুকিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে মারারও বহু ঘটনা ঘটেছে। গাইবান্ধা জেলায় ৩০টিরও বেশি বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে। যেখানে মুক্তিযোদ্ধাসহ নিরীহ নারী-পুরুষকে নির্মমভাবে নির্যাতনের পর হত্যা করে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়। এসব বধ্যভূমির মধ্যে গাইবান্ধা স্টেডিয়াম (তৎকালীন হেলালপার্ক) সংলগ্ন কফিল শাহর নির্মাণাধীন গুদাম, পলাশবাড়ীর সড়ক ও জনপদ বিভাগের রেস্ট হাউসের পেছনে ও কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর, গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালী এবং ফুলছড়ির সাবেক উপজেলা সদরের বধ্যভূমি উল্লেখযোগ্য। এসব বধ্যভূমিতে শত শত মানুষকে হত্যা করে পুঁতে রাখা হয়। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও ওইসব বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়নি। এদিকে পাকিস্তানী বাহিনী তৎকালীন হেলালপার্ক প্যাভিলিয়নে ক্যাম্প স্থাপন করে পার্শ্ববর্তী কফিল শাহর নির্মাণাধীন গুদাম ঘরকে নির্যাতন সেল হিসেবে ব্যবহার করতে থাকে। প্রতি রাতেই বিভিন্ন স্থান থেকে নিরীহ লোকজন ধরে এনে পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা নৃশংসভাবে তাদের হত্যা করে মাটি চাপা দিয়ে রাখত। বিভিন্ন স্থান থেকে মেয়েদের ধরে এনে তাদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হতো। অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে আটক করে নির্যাতন চালিয়ে তাদের হত্যা করা হয়। কফিল শাহর নির্মাণাধীন গুদাম চত্বর, স্টেডিয়ামের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে এবং হেলাল পার্ক সংলগ্ন লাইনের ধারে শত শত নারী-পুরুষকে গুলি অথবা বেয়োনেট চার্জ করে হত্যার পর মাটি চাপা দিয়ে পুঁতে রাখা হয়। সাবেক ফুলছড়ি উপজেলা হেড কোয়াটারের পাশেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের আরেক বধ্যভূমি। যেখানে কয়েকশ, স্বাধীনতাকামী নারী-পুরুষকে হত্যা করে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়। পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে সড়ক ও জনপদ বিভাগের রেস্ট হাউসে ক্যাম্প স্থাপন করে বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য বাঙালী নারী-পুরুষকে ধরে এনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। পলাশবাড়ীর মুংলিশপুর-জাফর গ্রামে ১৮ জুন ১১ জনকে পাক সৈন্যরা নৃশংসভাবে হত্যা করে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সদরে বর্তমান শহীদ মিনার সংলগ্ন এলাকায় ১৮ জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বারসহ শতাধিক লোককে হত্যা করে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়। এখনও সেখানে মাটি খুঁড়লে মানুষের হাড়গোর পাওয়া যায়। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের পাখেয়া গ্রামে ’৭১-এর ১৮ অক্টোবর রাজাকাররা সাত গ্রামবাসীকে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। সেই বধ্যভূমিটি সংরক্ষণ না করায় এখন নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। -আবু জাফর সাবু, গাইবান্ধা থেকে
×