ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর কালশী মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭

রাজধানীর কালশী মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ

আনোয়ার রোজেন ॥ রাজধানীর যানজট নিরসনে গত সাড়ে আট বছরে নির্মাণ করা হয়েছে ছয়টি ফ্লাইওভার। এবার নতুন আরও একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। রাজধানীর মিরপুর ইসিবি চত্বর হতে সহজে যাতায়াতের জন্য কালশী মোড়ে নির্মিতব্য এ ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য হবে ৮৪৪ মিটার। সেই সঙ্গে বিদ্যমান সড়কটিও সম্প্রসারণ করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে মিরপুর, পল্লবী, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, উত্তরা, মহাখালী ও রামপুরার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে। তাছাড়া সড়কে যানবাহন ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় যানজট কমে আসবে। এ জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রায় ৬১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত করা হয়েছে প্রকল্পটির অনুমোদনের প্রক্রিয়া। ‘ইসিবি চত্বর হতে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন এবং কালশী মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, একনেকে অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০১৯ সালে জুনের মধ্যে ফ্লাইওভার নির্মাণ ও সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শেষ করা হবে। প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকা (ডিএনসিসি) এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এসডব্লিউ ও পশ্চিম বিভাগ। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য জুয়েনা আজিজ বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে মিরপুরসহ ঢাকা সিটির পশ্চিমাঞ্চলের সাথে, টঙ্গী, বিমানবন্দর, গুলশান, বনানী ও অন্যান্য এলাকার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। এছাড়া মিরপুর ডিওএইচএস এর কাছাকাছি এলাকায় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ফ্ল্যাট নির্মাণের কাজ চলছে। তাই ফ্ল্যাট হস্তান্তরের পরে ভবিষ্যতে যানজট কমানোও সম্ভব হবে। এজন্য প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর দুই মেয়াদে যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, কুড়িল বহুমুখী ফ্লাইওভার, বিমানবন্দর-মিরপুর রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার, মিরপুর-বনানী ফ্লাইওভার এবং বনানী ওভারপাস, বিজয় সরণি-তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল সংযোগ সড়ক ও রেলওয়ে ওভারপাস এবং তেজগাঁও-মগবাজার-মৌচাক-শান্তিনগর ফ্লাইওভার প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) অধীনে এসব ফ্লাইওভার প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। এসব ফ্লাইওভার এবং ওভারপাসের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২৯ কিলোমিটার। এগুলো নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার মহানগরীর সবচেয়ে দীর্ঘ ফ্লাইওভার। দৈর্ঘ্যরে দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ৯ কিলোমিটারের মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ২১৯ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত ফ্লাইওভারের নির্মাণের যৌক্তিকতা ব্যাখা করে প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, মিরপুর থেকে বিমানবন্দর, উত্তরা ও টঙ্গী হয়ে উত্তর দিকে যাওয়ার জন্য কালশী হয়ে জিয়া কলোনি রাস্তা দিয়ে নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ওপর দিয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছিল। রাস্তা ও ফ্লাইওভার নির্মাণের পর থেকে মিরপুর এলাকা থেকে এ রাস্তার ব্যবহার অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে প্রায় প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ হাজার যানবাহন এই রাস্তা ব্যবহার করছে। তাছাড়া রাস্তার দুই পাশে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন, হাসপাতাল, ক্লিনিক গড়ে উঠছে। মিরপুর-১২ এলাকায় অবস্থিত মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি), ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি), স্টাফ কলেজ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এবং মিরপুর ক্যান্ট. পাবলিস স্কুল এর বহুসংখ্যক ছাত্রছাত্রী যাতায়াত করে। এছাড়া এখানে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হাউজিং অথরিটির মাধ্যমে প্রায় ৫-৬ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এগুলো সম্পন্ন হলে এ এলাকায় যান চলাচল আরও বেড়ে যাবে। উত্তরা হতে মিরপুর পর্যন্ত পূর্ব-পশ্চিম সংযোগকারী সড়কের অপ্রতুলতার জন্য উত্তরা, রামপুরা বা মহাখালীর অধিবাসীরা মিরপুর যাওয়ার জন্য এ সড়ক ব্যবহার করে। এই প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যৎ ট্রাফিক বিবেচনায় এনে প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে- ১১ দশমিক ১৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ, তিন লাখ ৮৮ হাজার ২৪৪ দশমিক ৬১ ঘনমিটার মাটি কাটা, মাটি ভরাট করা, তিন হাজার ৭০০ মিটার পেভমেন্ট নির্মাণ, তিন হাজার ৭০০ মিটার ভিত্তি নির্মাণ, পরামর্শক নিয়োগ, ৬০৯ বর্গমিটার পিছি গার্ডার ব্রিজ সম্প্রসারণ, ৫০০ মিটার আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল, ৭ হাজার ৪০০ মিটার ফুটপাথ নির্মাণ এবং ৩ হাজার ৭০০ মিটার মিডিয়ান নির্মাণ।
×