ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনীতিকরা সৎ থাকলে দেশের দুর্নীতি অর্ধেক কমে যাবে ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৬ নভেম্বর ২০১৭

রাজনীতিকরা সৎ থাকলে দেশের দুর্নীতি অর্ধেক কমে যাবে ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, রাজনীতিকরা দুর্নীতিমুক্ত থাকলে দেশের দুর্নীতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্ধেক কমে যাবে। তবে যারা রাজনীতি করেন তাদের মধ্যে ক’জন বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন আমি সৎ, আমি শতভাগ সৎ মানুষ। এখানেই সমস্যা। শনিবার সকালে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতা রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণকে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দেয়ায় ‘৭ মার্চ : আলোকের ঝরনাধারা’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটি। বঙ্গবন্ধুকে সততার আদর্শ হিসেবে অভিহিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সততা ও সাহসিকতার বিরল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন বঙ্গবন্ধু। আমরা যারা রাজনীতি করি এখান থেকে অনেক শিক্ষা নিতে পারি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শিখিয়েছেন সততার আদর্শ, সততার আদর্শ বড় সম্পদ। একজন রাজনীতিকের জীবনের মানুষের ভালবাসার চেয়ে বড় আর কিছু নেই। আর মানুষের ভালবাসা পেতে হলে সৎ হতে হবে, মানুষকে ভালবাসতে হবে, মানুষের কাছে থাকতে হবে, মাটির কাছে থাকতে হবে, এই শিক্ষা বঙ্গবন্ধু রাজনীতিকদের দিয়ে গেছেন। নিজ দলের তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির অনুষ্ঠানে মন্ত্রীদের না আনার পরামর্শ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মন্ত্রী না আসলে ক্যামেরা আসে না, এই থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এরপরে আমরা ইন্ট্রোডিউস করি, দেখি কয়টা ক্যামেরা আসে। না আসলে কী হবে? সব না আসুক, কেউ না কেউ তো আসবে; তাতে কী হবে, আস্তে আস্তে হবে। মন্ত্রী ছাড়া অনুষ্ঠান কেন হবে না। এতগুলো বিজ্ঞ মানুষ, এত ভাল কথা বলেন। এরপরও বারবার মন্ত্রী কেন?’ বেশি বেশি বক্তব্য দিতে গিয়ে একই কথার পুনরাবৃত্তিতে মানুষের কাছে ‘ফালতু’ হিসেবে পরিচিতি গড়ে উঠতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক- সারাদিন বক্তব্য দিতে দিতে, একই রকম বক্তব্য; বক্তব্য দিতে ইনপুট তো লাগে, নতুন ইনপুট না হলে আমাকে বারবার পুরনো কথা বলতে হয়, এতে তো আমি ফালতু হয়ে যাব। বারবার যে বেশি কথা বলে, সে বেশি বাজে কথা বলে, বারবার এক কথা বলে। আমি মনে করি আমাদের এই ধারাটা বদলাতে হবে। বঙ্গবন্ধুর কাছে ফিরতে চাইলে মূল্যবোধের কাছে ফিরতে হবে।’ কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে ভূমি, জমি দখল কিংবা চাঁদাবাজি করে এ ধরনের সংগঠন আমাদের দরকার নেই। আমরা এদের ঘৃণা করি। এদের তিরস্কার করি। বঙ্গবন্ধুর সততা ও সাহস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। যারা বঙ্গবন্ধুর নামে সাইনবোর্ড লাগিয়ে সংগঠন করে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং এদের সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখা যাবে না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর পরিবার সততা, যোগ্যতা ও মেধার দিক থেকে বিশ্বের কাছে রোল মডেল। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন বিশ্বস্বীকৃত সৎ, দক্ষ ও যোগ্য রাজনীতিবিদ। সততার দিক থেকে তিনি বিশ্বের তৃতীয় প্রধান নেতা। পরিশ্রমের দিক থেকে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের পঞ্চম প্রধান নেতা। সৎ রাজনীতিবিদদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন জার্মানির এঞ্জেলা মেরকেল ও সিঙ্গাপুরের লি। তারা দু’জন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেয়ে এগিয়ে থাকলেও পয়েন্ট ব্যবধান খুবই সামান্য। সততাই আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় সম্পদ জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনার সততা ও দক্ষতার ওপর আস্থাশীল। সততা, যোগ্যতা ও দক্ষতাকে পুঁজি করে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত অবস্থানের কথা তুলে ধরে সেতুমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কোন হাওয়া ভবন গড়ে উঠেনি এবং কারও বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ নেই। বঙ্গবন্ধুর পরিবার থেকে সততা, সাহস ও দক্ষতার ওপর শিক্ষা নেয়ার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ক্ষমতা দখলের জন্য মানুষকে পুড়িয়ে মারা ছাড়া বিএনপি এমন কোন কাজ করতে পারেনি যাতে দেশের মানুষ তাদের ভোট দেবে। আসন্ন রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মতো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে রংপুরেও। সরকার কোন হস্তক্ষেপ করবে না। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকার সব রকমের সহযোগিতা করবে। তিনি বলেন, জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। সরকার কোন নির্বাচনে কখনও হস্তক্ষেপ করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং দলের তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর সাইদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেনের পরিচালনায় সেমিনারে আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. কাজী খলীকুজ্জমান, অধ্যাপক ড. কবি আব্দুস সামাদ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী বুলবুল মহলানবিশ, আবৃত্তিকার হাসান আরিফ ও ইউনেস্কোর কান্ট্রি ডিরেক্টর বিয়েট্রিস খলদুন।
×