ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের স্বদেশে না ফিরতে উস্কানি দিচ্ছে কিছু এনজিও

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৪ নভেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গাদের স্বদেশে না ফিরতে উস্কানি দিচ্ছে কিছু এনজিও

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে না যেতে উস্কানি দিচ্ছে কতিপয় এনজিও এবং মৌলবাদী গোষ্ঠী। মিয়ানমারে রাখাইনে সহিংসতার জের ধরে গত ২৭ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত নতুন করে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। ওসব রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পেছনে দেশী-বিদেশী এনজিও এবং রোহিঙ্গা বিদ্রোহী নেতাদের মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে অনুমোদন নেয়া মৌলবাদী গোষ্ঠীর এক শ্রেণীর নেতার পরিচালনাধীন এনজিও বর্তমানে রোহিঙ্গাদের সেবায় নিযুক্ত হয়েছে। অনুপ্রবেশের পর ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের স্থায়ীকরণের খেলায় মেতে ওঠেছে ওসব এনজিও কর্মীরা। এনজিও ব্যুরোর অনুমোদন নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কাজ করছে ৭০টিরও বেশি এনজিও। অথচ উস্কানিদাতা এনজিওগুলোর মধ্যে কয়েকটি এনজিও অনুমোদন লাভ করতে পারেনি এখনও। তারপরও তারা রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবার নামে ক্যাম্প অভ্যন্তরে ঢুকে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথাবার্তা এমনকি সুযোগ বুঝে উস্কানি ছড়াচ্ছে। রাখাইনে সংঘাত সৃষ্টির প্রায় তিন মাস পরও এনজিও প্রতিনিধিদের কারণে প্রতিদিন শত শত রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটছে। সরকার রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে বিভিন্ন ভাবে কূটনৈতিক আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গারা এনজিওগুলোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় মোবাইল ফোনে রাখাইনে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ডেকে আনছে তাদের স্বজনরা। কিছু কিছু এনজিওর বিরুদ্ধে তথ্য পেয়ে ইতোমধ্যে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। ওসব এনজিওর কার্যক্রম তদারকি শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। এদিকে কতিপয় এনজিওর কিছু কিছু কালো গ্লাসযুক্ত গাড়ি চলাচলে স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহের দানা বাঁধছে। ওইসব গাড়ির সম্মুখে এনজিওর স্টিকার লাগানো থাকায় সহজে চেকপোস্টগুলো অতিক্রম করে চলছে তারা। এক শ্রেণীর রোহিঙ্গা নেতাকে (আরএসও) ওসব গাড়িতে করে যাওয়া-আসা করতে দেখেছেন স্থানীয়রা। সচেতন মহল বলেন, এনজিও কর্মীদের যদি স্বচ্ছভাবে রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবা দেয়ার ইচ্ছে থাকে, তাহলে কালো গ্লাসযুক্ত গাড়ি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা কী? কেনইবা রোহিঙ্গা ক্যাডারদের ওইসব গাড়িতে করে এনজিওর নির্দিষ্ট স্থানে গোপন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? কী আলোচনা হচ্ছে টেরর রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে? এসব বিষয়ে ওইসব এনজিওর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা সংবাদকর্মীদের কোন তথ্য দিতে নারাজ। ওইসব গাড়িতে এনজিওর পরিচয় বহনকারী ওরা কারা? অনুমোদনবিহীন বিদেশী এনজিওগুলো খরচ করতে কার মাধ্যমে দেশে টাকা আনছে? স্থানীয়দের মনে এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। সূত্র জানায়, বিদেশী টাকা জায়েজ করতে এবং ক্যাম্পে এনজিওগুলোর কার্যক্রম দীর্ঘস্থায়ীকরণের নিমিত্তে তারা রোহিঙ্গাদের সহজে মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়ার উস্কানি দিচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। ওই এনজিওগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামের একজন সংসদ সদস্যের পরিচালনাধীন একটি এবং স্থায়ী বাসিন্দা বলে দাবিদার কতিপয় আরএসও নেতার পরিচালনাধীন একাধিক এনজিও রয়েছে। রয়েছে জামায়াত-বিএনপির এক শ্রেণীর নেতার পরিচালনাধীন এনজিও। আশ্রিত রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত তাদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সরকার ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে পদক্ষেপ নিয়েছে। কিছু কিছু এনজিও, আরএসও এবং মৌলবাদী গোষ্ঠী উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ভাসানচরেও না যেতে উস্কানি দেয়া শুরু করেছে। তারা রোহিঙ্গাদের শিখিয়ে দিয়ে বলছে, যে যেখানে আশ্রিত সেখানেই থাকতে একমত পোষণ করতে হবে। প্রয়োজনে এখানেই মরে যাব, তারপরও ভাসানচরে যাবনা বলতে শিখিয়ে দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ স্থানীয়দের কাছে জানতে চাইছে যে ভাসানচর নাকি সাগরের মাঝখানে, কোথাও যাওয়া-আসা এবং যোগাযোগ করা যায় না, বর্ষায় ওই চর নাকি ডুবে যায় ইত্যাদি। এ সব বিষয় তাদের কে বলেছে উল্টো প্রশ্ন করা হলে রোহিঙ্গারা মুখ বন্ধ করে থাকে। স্থানীয়রা জানান, নিবন্ধনবিহীন এনজিও কর্মীরা এবং ছদ্মবেশে দিনের বেলায় ক্যাম্পে ঢুকে প্রত্যেহ ঘোরাফেরাকারী কতিপয় মৌলবাদী গোষ্ঠীর উস্কানিদাতা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত এবং অন্যত্র স্থানান্তর করা কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে।
×