ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংগ্রামী নারীর পাহাড় জয়

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সংগ্রামী নারীর পাহাড় জয়

লুয়ো ডেনপিং। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাসকারী মিয়াও জনগোষ্ঠীর এক নারী। দুই সন্তানের জননী এই নারীকে সংসারের ভার বইতে প্রতিদিন দুবার খাড়া পাহাড়ে চড়তে হয়। এটি তাকে করতে হয় পাহাড়ে চড়ার আনুষঙ্গিক যন্ত্র বা রশি ছাড়া শুধু হাত এবং পায়ের সাহায্যে। কোন কিছুর সাহায্য ছাড়াই উঁচু বিল্ডিং বা পাহাড়ে ওঠার নজির পৃথিবীতে অনেক থাকলেও চীনে একমাত্র লুয়ো ডেনপিং এ কাজটি করেন। লুয়ো ডেনপিং যখন মাকড়সার মতো খাড়া পাহাড়ে উঠে তখন পাহাড়ের পাদদেশে বেড়াতে আসা পর্যটকরা বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে থাকেন। পর্যটকদের আনন্দ দিতেই তাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন দুবার কয়েক শ’ ফুট উঁচু পাহাড়ে উঠতে হয়। বিনিময়ে তিনি মাসে বেতন পান মাত্র তিন হাজার ইউয়ান। এটাই তার জীবিকা, স্বামী-সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকার অবলম্বন। কিন্তু, এত এত কাজ থাকতে কেন তিনি এই ঝুঁকিপূর্ণ পেশা বেছে নিলেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আপনাকে ঘড়ির কাঁটা ঘুরিয়ে ফিরে যেতে হবে কয়েক শতাব্দী পূর্বে। তখনও আধুনিক চিকিৎসা সেবার কোন কিছুই আবিষ্কার হয়নি। পৃথিবীতে বাসকারী আদিম মানুষ চিকিৎসার জন্য ভেষজ উপাদানের ওপর নির্ভরশীল ছিল। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের বিশ্বাস পাহাড়ের শীর্ষদেশ থেকে ভেষজ উদ্ভিদ এনে খাওয়ালে অসুখ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তাই তারা মিয়াও জনগোষ্ঠীর লোকেদের অর্থের বিনিময়ে পাহাড় থেকে ভেষজ উদ্ভিদ আনার জন্য অনুরোধ করত। কারণ খালি হাত এবং পায়ের সাহায্যে উঁচু উঁচু সব পাহাড়ে চড়তে পারার অবিশ্বাস্য দক্ষতা ছিল তাদের। কালের পরিক্রমায় চিকিৎসা বিজ্ঞান অবিশ্বাস্য গতিতে এগিয়েছে। এখন আর মানুষ চিকিৎসার জন্য ভেষজ উপাদানের ওপর অতটা নির্ভরশীল নয়। ফলে মিয়াওদের কদর আগের মতো নেই। অনেকে পূর্বপুরুষের এই ঝুঁকিপূর্ণ পেশা ছেড়ে দিয়ে নতুন পেশায় যোগ দিয়েছেন। তবে কিছু মিয়াও বংশপরম্পরায় এখনও পাহাড়ে চড়ার এই অভ্যাস ধরে রেখেছেন। লুয়ো ডেনপিং তাদেরই একজন। তবে তিনিই মিয়াও সম্প্রদায়ের কয়েক শ’ বছরে পাহাড়ে চড়ার ইতিহাসে একমাত্র নারী যিনি এই পেশায় এসেছেন। পনেরো বছর বয়স থেকে লুয়ো ডেনপিং এই পেশায় নিয়োজিত। এখন যেহেতু উঁচু পাহাড় থেকে ভেষজ উদ্ভিদ আনতে হয় না তাই তিনি পাহাড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা দর্শনার্থীকে নিজের এই অবিশ্বাস্য দক্ষতা দেখিয়ে আনন্দ দেন। ওয়েবসাইট
×