ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শিশু-প্রতিভা বিকাশে প্রশিক্ষণ

প্রকাশিত: ০৩:২৬, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

শিশু-প্রতিভা বিকাশে প্রশিক্ষণ

শিশুরা থাকে নিষ্কলুষ এবং নতুন কিছু গ্রহণে সক্ষম ও আগ্রহী। শিশুদের অনেক সময় নরম মাটির সঙ্গে তুলনা করা হয়। নরম মাটিকে ইচ্ছেমতো রূপ ও আকৃতি দিতে পারেন কারিগর। তেমনি শিক্ষকও শিশুদের গড়ে তুলতে পারেন তার পরিকল্পনামতো। সেজন্যে শিশুদের শিক্ষা কে দিচ্ছেন, শিশুরা কী শিক্ষা পাচ্ছে সেসব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের সহজাত প্রতিভা কাজে লাগিয়ে তাকে সৃজনশীল ও শিল্প সফলতার দিকে নেয়া যায়। তবে শিশু-প্রতিভা বিকাশে প্রশিক্ষণও যে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে তার দৃষ্টান্তও রয়েছে। সম্প্রতি দেশের একদল শিশু চীন থেকে এ্যাক্রোবেটিক বা শারীরিক কসরৎ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে। সেই শিশুশিল্পীরা শিল্পকলা একাডেমি মঞ্চে পরিবেশন করল তাদের উপস্থাপনা। চমকপ্রদ ভঙ্গিমার নানা শরীরী কসরত দর্শকের মধ্যে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। বিশিষ্টজনরা তাদের বাহবা দিয়েছেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এবং চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও ঢাকার চীনা দূতাবাসের সহযোগিতায় বেজিং ইন্টারন্যাশনাল আর্টস স্কুলে প্রথম দফায় ২০জন শিশুশিল্পীকে এ্যাক্রোবেটিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এর মধ্যে প্রথম দল হিসেবে দশ শিশু এ্যাক্রোবেটিক শিল্পী ও একজন দলপ্রধানসহ মোট ১১ জন ২০১৬ সালে চীনে সফলভাবে প্রশিক্ষণ শেষ করে দু’মাস আগে দেশে ফিরেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী মাসে আরও দশ শিশু প্রশিক্ষণের জন্য চীনে যাচ্ছে। বিষয়টি সুখকর, সন্দেহ নেই। এ্যাক্রোবেটিক পারফরমেন্সে দেহের ওপর নিয়ন্ত্রণ, ভারসাম্য রক্ষার সামর্থ্য এবং দর্শনযোগ্য সৌন্দর্য এসব বিষয় বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখে। এই পরিবেশনায় যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জনের জন্য অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম দেশ চীন। উভয় দেশের মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচী। এর আওতায় দেশের একঝাঁক শিশু চীনে গিয়ে এ্যাক্রোবেটিক পরিবেশনার ওপর প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি সংশ্লিষ্ট শিশুদের ভেতরে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জাগাবে। তাদের আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হবে এবং ভবিষ্যতে অন্য কোন শিল্পনৈপুণ্য প্রদর্শনের জন্য আগ্রহ তৈরি হবে। শিশুদের কৌতূহল অপরিসীম, তাদের গ্রহণ করার শক্তিও অনেক। আমরা আশা করব দেশের প্রতিভাবান শিশুদের জন্য বহির্বিশ্বে আরও প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গেই কাজ করে যাবে। তাছাড়া শুধু বিদেশ কেন, দেশের ভেতরেই যোগ্য প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকা- এবং খেলাধুলায় শিশুদের নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হলে এখান থেকেই আগামীতে অনেক প্রতিভা বিকশিত হবে। এরাই একদিন দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে বহির্বিশ্বে স্বদেশের সংস্কৃতির পরিচয় চমৎকারভাবে তুলে ধরার মাধ্যমে। প্রসঙ্গত আমরা ভারতেশ্বরী হোমসসহ দেশের বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের দর্শনীয় ক্রীড়াশৈলীর কথা স্মরণ করতে পারি। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে তাদের বিচিত্র পরিবেশনা দেশের সাধারণ মানুষকে প্রভূত আনন্দ দিয়ে থাকে। শুধু জাতীয় দিবস উপলক্ষেই নয়, বিভিন্ন উৎসব আয়োজনে এসব শিশুর প্রতিভা প্রদর্শনের সুযোগ করে দেয়া চাই। পড়ালেখার পাশাপাশি শিশুদের বিশেষ আগ্রহ কোন দিকে সেটি শনাক্ত করতে পারেন শিশুদের শিক্ষক ও অভিভাবক। যদি কারও ভেতর বিশেষ প্রতিভার স্ফুরণ দেখা যায়, তাহলে তার সেই প্রতিভা লালন ও বিকাশের পথ করে দেয়া সমাজেরই দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনে আরও সদিচ্ছা ও সচেতনতা জরুরী।
×