ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন স্বাস্থ্যঝুঁকি ই-বর্জ্য

প্রকাশিত: ০৩:২৫, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

নতুন স্বাস্থ্যঝুঁকি ই-বর্জ্য

দেশে বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার দ্রুতগতিতে বাড়ছে। বিশেষ করে বিদ্যুতসাশ্রয়ী বাতি, টিভি, রেফ্রিজারেটর, কম্পিউটার, প্রিন্টার, মুঠোফোন, বিচিত্র ধরনের ইলেকট্রনিক খেলনা এখন আধুনিক মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহার্য যন্ত্রপাতি। এসব পণ্য ব্যবহারের পর এক সময় নষ্ট হয়ে যায়। বিক্রি করা হয় পরিত্যক্ত জিনিসের ভ্রাম্যমাণ ক্রেতাদের কাছে। কখনও ফেলে দেয়া হয় বাড়ির আশপাশে। কখনও বছরের পর বছর পড়ে থাকে পণ্য মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান ও ভাঙ্গাড়ির দোকানে। এসব বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট কোন ডাস্টবিন কিংবা ভাগাড় নেই। এই বর্জ্যরে নামকরণ হয়েছে ই-ওয়েস্ট বা ই-বর্জ্য। এগুলোর ব্যবস্থাপনার বিষয়ে এদেশের ব্যবহারকারীদের ধারণা ও সচেতনতা খুবই সীমিত। তবে আশঙ্কার বিষয়, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ই-বর্জ্য একটা বড় ধরনের সমস্যা হয়ে উঠছে, যা সমাধানের লক্ষ্যে এখন থেকেই ব্যবস্থা নেয়া দরকার। পরিবেশবিদদের ধারণা, এই বর্জ্য একবিংশ শতকে জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দেখা দেবে। জানা গেছে, এসব যন্ত্রপাতিতে মানবস্বাস্থ্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য বহু ক্ষতিকর উপাদান থাকে। সিসা, পারদ, ক্যাডমিয়াম, বেরিলিয়াম, লিড অক্সাইড প্রভৃতি ধাতব ও রাসায়নিক উপাদান মানুষের স্নায়ুতন্ত্র, যকৃৎ, হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, মস্তিষ্ক, ত্বক ইত্যাদির জন্য ক্ষতিকর। আমাদের দেশে এসব বর্জ্য পরিশোধনের সে রকম কোন ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি। এমনকি বছরে কী পরিমাণ ই-বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে তারও নির্ভরযোগ্য কোন তথ্য নেই। তাই ই-বর্জ্যরে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরী। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রথমেই প্রয়োজন ই-বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ নিরূপণের ব্যবস্থা করা। এগুলোর জন্য স্থায়ী ভাগাড় ও রিসাইক্লিং কারখানা স্থাপন করা দরকার। জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগও নিতে হবে। এ বিষয়ে ভারত, চীনসহ অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতাও কাজে লাগানো যায়। তবে সবার আগে দরকার ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি উৎপাদন, আমদানি, বিপণন, ব্যবহার এবং ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন। দীর্ঘদিন ধরে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ‘ডিসপোজাল ম্যানেজমেন্ট রুল’ নামে একটি বিধিমালার কথা শোনা গেলেও কার্যত তার অবস্থান এখন কোন পর্যায়ে তা জানা নেই। পরিবেশবিদরা বলছেন, ই-বর্জ্যরে মধ্যে অনেক বিষাক্ত পদার্থ ও রাসায়নিক যৌগ আছে, যা রোদে ও তাপে নানাভাবে বিক্রিয়া করে। অনেক সময় রোদে ফেলে দেয়া ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (আইসি) থেকে নির্গত হয় ক্ষতিকর বিকিরণ। এই ই-বর্জ্য পানিতে ফেলে দিলে ও মাটিতে পুঁতে রেখে দেয়ার পরও বিষাক্ত থাবা বন্ধ থাকে না। পলিব্যাগ যেমন মাটির নিচেও বিক্রিয়া করে, এসব ই-বর্জ্য তার চেয়ে কয়েক হাজারগুণ বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে বিক্রিয়া করে। যা মাটি, মানুষ ও প্রকৃতির জন্য বিপজ্জনক। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এই ই-বর্জ্যরে প্লাস্টিকের অংশটি আলাদা করে রিসাইক্লিং করছে। বাকি বর্জ্য বিশেষায়িত ভাগাড়ে ফেলে দিচ্ছে। এমন কি উন্নত বিশ্বে কোন ইলেকট্রনিক্স পণ্য সামান্য নষ্ট হলে বাড়ির বাইরে কোন নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে রাখে। তৃতীয় বিশ্বের গরিব দেশগুলোর লোকজন তা সংগ্রহ করে তাদের দেশে পাঠায়। এভাবেও উন্নত বিশ্বের লোকজন ই-বর্জ্য কৌশলে পার করে দিচ্ছে। বাংলাদেশে রিসাইক্লিং ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি। ই-বর্জ্য নিয়ে সরকারী বেসরকারী কোন সংস্থার যেন মাথাব্যথা নেই। নেই কোন পদক্ষেপও। প্রায় ১৭ কোটি মানুষের দেশ আমাদের। এখানকার প্রায় ১৪ কোটি মানুষের হাতে মুঠোফোন। বিশাল জনগোষ্ঠীর কারণে অন্যান্য ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির ব্যবহারও বাড়ছে দ্রুতগতিতে। এগুলোর ৩০/৩৫ শতাংশই প্রতিবছর ই-বর্জ্যে পরিণত হচ্ছে, যা আমাদের দেশের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকির অন্যতম কারণ। এই ঝুঁকি থেকে উত্তরণের পথ আমাদের দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে।
×