ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কারাগারের বাইরে চার স্তরে সেনা মোতায়েন, কারফিউ জারি

ভারতের ধর্ষক ধর্মগুরুর শাস্তি ঘোষণা হবে আজ

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২৮ আগস্ট ২০১৭

ভারতের ধর্ষক ধর্মগুরুর শাস্তি ঘোষণা হবে আজ

ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত ভারতের স্বঘোষিত আধ্যাত্মিক গুরু গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের (৫০) সোমবার শাস্তি ঘোষণার আগে সিরসায় নতুন করে কারফিউ জারি করা হয়েছে। ডেরার কেন্দ্রস্থলে শনিবার সাত স্তরে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে এবং এক হাজার একর জমিবেষ্টিত প্রাঙ্গণটিতে অবস্থান নেয়া রাম রহিম সিংয়ের ভক্তদের শীঘ্রই স্থানটি ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে। এদিকে শাস্তি ঘোষণার আগে রাম রহিম সিংয়ের কোন ভক্তকে রোহতকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। রোহতককে ঘিরে নেয়া হয়েছে বহুমুখী নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিñিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে পুরো এলাকা। খবর এনডিটিভি ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের। গত ২৪ আগস্টে বিধিনিষেধ আরোপের পর রবিবার সিরাসায় ডেরা সাচ্চা সৌদার কেন্দ্রস্থলগুলোতে মাত্র ৫ ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়। ওইসব এলাকাগুলোতে পেট্রোল পাম্প ও দোকানগুলোর মতো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান উন্মুক্ত রাখার অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে। রাম রহিম সিংয়ের ভক্তদের বের হতে সহায়তা করতে ডেরার কেন্দ্রস্থলের বাইরে প্যারামিলিটারি বাহিনী ও স্টেট পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শুক্রবারের মতো সংঘর্ষ এড়াতে রাম রহিম সিংকে কারাগারের চার পাশে অন্তত সাত স্তরে নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। ওইদিন সংঘর্ষে অন্তত ৩৬ জন নিহত ও ২৫০ জন আহত হয়। শুক্রবার হরিয়ানার যে শহরে রাম রহিমের মামলার রায় হয়েছে, সেই পাঁচকুলায় সবচেয়ে বেশি সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সহিংসতায় প্রাণহানি হয়েছে হরিয়ানার সিরসায় রাম রহিমের আশ্রম এলাকায়ও। রাম রহিমের প্রায় আড়াই হাজার অনুসারীকে গ্রেফতার করা হয়। এই মামলার রায় ঘোষণার দিন চ-ীগড়ের কাছের পাঁচকুলা শহরে চলে আসে রাম রহিমের দেড় লাখের বেশি ভক্ত। রায় ঘোষণার পর তারা তা-ব শুরু করলে পুলিশ লাঠিপেটার পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করলেও আদালতের আশপাশের এলাকা কার্যত বিক্ষোভকারীদের দখলে চলে যায়। পাঁচকুলায় থানা এবং বিভিন্ন সরকারী দফতরে রাম রহিম ভক্তরা আগুন দেয়। জ্বালিয়ে দেয়া হয় কয়েক ডজন গাড়ি, যার মধ্যে সংবাদমাধ্যমের গাড়িও রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে সেনা মোতায়েন করা হয়। এরপর হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল জানান, সম্ভাব্য সব উপায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু বিক্ষোভকারীরা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। রাম হরিমের আশ্রম ডেরা সাচ্চা সৌদার সদর দফতর সিরসায়ও পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সহিংসতা হয় তার ভক্তদের। সেখানে বেশ কয়েকটি ভবনে আগুন দেয়া হয়। রায় ঘোষণার পর পর পাঞ্জাবের বাথিন্ডা, মালুত ও বালুয়ানাসহ বিভিন্ন শহরে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এই রাজ্যে দুটি রেলস্টেশনে আগুন দেয়া হয়। সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, এটা খুবই বেদনাদায়ক। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ রাম রহিম সমর্থকদের শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। রাম রহিম নিজেও শান্তি চাইছেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। একাধারে ধর্মপ্রচারক, সমাজ সংস্কারক, গায়ক, চিত্রনায়ক ও পরিচালক বাবা রাম রহিমের মতো বর্ণময় চরিত্র ভারতের অজস্র ধর্মগুরুর মধ্যে বিরল। তার আশ্রম ডেরা সাচ্চা সৌদা গড়ে ওঠে শিখ, হিন্দু, মুসলিম- সব ধর্মের চেতনার মিশেলে। ভারতের গণমাধ্যমে অনেক সময় তাকে বলা হয় ‘রকস্টার বাবা’। হরিয়ানায় গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রতি সমর্থন দিয়েছিলেন রাম রহিম। লাখ লাখ ভক্ত থাকায় বড় ভোট ব্যাংক বিবেচনা করে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির অনেক নেতাই তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রাখেন। পনেরো বছর আগে নিজের আশ্রমেই দু’ভক্ত মহিলাকে ধর্ষণ করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর চিঠির সূত্র ধরে, ২০০২ সালে এই ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করে সিবিআই। ২০০৭ সালে শুনানি শুরুর পর দশ বছরের মাথায় মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে। বিচারের পুরোটা সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এসেছেন ডেরা সাচ্চা সৌদার প্রধান।
×