ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শাহজালালে হঠাৎ আগুন

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১২ আগস্ট ২০১৭

শাহজালালে হঠাৎ আগুন

আজাদ সুলায়মান ॥ চারদিকে অগ্নিনির্বাপণ টুলস। অফিসের স্টাফ ছাড়া কারও নেই প্রবেশাধিকার। আছে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাকর্মী। রয়েছে কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। এমন পরিবেশেই কিনা শুক্রবার দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মূল ভবনের তিনতলার একটি কক্ষে লেগে যায় আগুন। হঠাৎ আগুনে পুড়ে ছাই একটি রুমের সব কিছু। আগুনের ভয়াবহতা তেমন না হলেও প্রকা- ধোঁয়ার কু-লীতে গোটা বিমানবন্দর আচ্ছন্ন হয়ে করে দিয়েছে সব। যার মাসুুল দিতে হয়েছে দেশী-বিদেশী যাত্রী, দর্শক, নিরাপত্তাকর্মী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে। কোন হতাহত না হলেও ধোঁয়ার জ্বালায় ভুগতে হয়েছে অনেককেই। মিনিট বিশেকের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও এতে কাজকর্ম স্বাভাবিক হতে সময় লেগেছে ঘণ্টা তিনেক। এ সময়টাতে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ থাকায় কোন ফ্লাইট বাতিল না হলেও বিলম্বের শিকার হয়েছে অন্তত ৪টি। এর মধ্যে দুটি ছিল হজ ফ্লাইট। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাতদিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে তাৎক্ষণিক কিছুই জানাতে পারেননি বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন ইকবাল করিম। এমন নিñিদ্র নিরাপদ পরিবেশে আগুন লাগার ঘটনায় তিনি নিজেই বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, এটা আমার নিজের কাছে অবিশ্বাস্য লাগছে। এত নিরাপত্তা ও নিরাপদ পরিবেশেও কি করে আগুন লাগল সেটা অবশ্যই তদন্তে বের হয়ে আসবে। তার আগে কিছুই বলা যাচ্ছে না। বিকাল চারটায় অকুস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পরিবেশ ছিল চরম অসহ্যের। ধোঁয়া আচ্ছন্ন গোটা এয়ারপোর্ট। তিনতলার একটি ছোট্ট একটি কক্ষে আগুন লাগলেও এত বেশি ধোঁয়া ছড়িয়েছে, তা ছিল অবিশ্বাস্য। আগুন নিভে যাওয়ার পরও ধোঁয়া বন্ধ হতে সময় লেগেছে অন্তত তিন ঘণ্টা। বিকেল পাঁচটার সময়েও দেখা গেছে, ধোঁয়ার কারণে অনেকেই মুখে মাস্ক লাগিয়ে ডিউটি করার সময় কাশতে থাকেন। চোখ মুছতে দেখা গেছে তাদের। বার বার বাথরুমে গিয়ে চোখমুখে পানি দিয়ে ফ্রেশ হতে দেখা যায় তাদের। আগুন লাগার সঠিক কারণ সম্পর্কে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কিছু না নিশ্চিত করতে না পারলেও প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এয়ার ইন্ডিয়ার ওই রুমে থাকা ইউপিএস থেকে অথবা শট সার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে। আগুনের ঘটনায় পৃথক পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি সিভিল এভিয়েশনের পরিচালক প্রশাসন, যুগ্ম সচিব সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে ৫টি সদস্যের কমিটি। অপরটি ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ৩ সদস্যের কমিটি। ওই কার্যালয়ের ডিউটি অফিসার পলাশ চন্দ্র মোদক তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির বিষয়ে জানান, কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেনÑ ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (ঢাকা) দেবাশিষ বর্ধন, সহকারী পরিচালক (ঢাকা) মামুন মাহমুদ ও কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবদুল মান্নান। জানা গেছে, আগুন লাগার পনের মিনিটের মধ্যেই সেখানে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যান সিভিল এভিয়েশনের সদস্য এয়ার কমোডর মুস্তাফিজুর রহমান, বিমানবন্দর পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কাজী ইকবাল করিম ও প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা রাশেদা সুলতানাসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা। তারা রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে অবস্থান করে সার্বিক বিষয়ে নজরদারি ও তদারকি করেন। এ সম্পর্কে বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, আগুন লাগার পর দ্রুততম সময়ে মাত্র মিনিট বিশেকের মধ্যে সেটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় সিভিল এভিয়েশনের নিজস্ব ফায়ার ইউনিট ও দমকল বাহিনী। এতে বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছে বিমানবন্দর। এটা অবশ্যই একটা অবিশ্বাস্য দক্ষতা বলে দাবি করছেন দমকল কর্মীরা। আগুন লাগার সঠিক কারণ সম্পর্কে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কিছু না নিশ্চিত করতে না পারলেও প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এয়ার ইন্ডিয়ার ওই রুমে থাকা ইউপিএস থেকে অথবা শট সার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে। আগুনের ঘটনায় পৃথক পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি সিভিল এভিয়েশনের পরিচালক প্রশাসন, যুগ্ম সচিব সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে ৫টি সদস্যের কমিটি। অপরটি ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ৩ সদস্যের কমিটি। ওই কার্যালয়ের ডিউটি অফিসার পলাশ চন্দ্র মোদক তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির বিষয়ে জানান, কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেনÑ ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (ঢাকা) দেবাশিষ বর্ধন, সহকারী পরিচালক (ঢাকা) মামুন মাহমুদ ও কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবদুল মান্নান। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগুন কিভাবে কখন লেগেছে তা কেউ দেখেনি। শুধু ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে ওই রুম থেকে। তারপর নিরাপত্তাকর্মীদের দৌড়াদৌড়ি। তিনতলা কেউ আগুন দেখেনি, সবাই শুধু ধোঁয়াই দেখেছে। ধোঁয়া দেখেই দুইতলার চেকইন কাউন্টারের যাত্রীরা আতঙ্কে নিরাপদ দূরত্বে আশ্রয় নেয়। হারুন নামের এক হজযাত্রী চেকইন কাউন্টারে পাসপোর্ট ফেলেই দৌড়ে বের হয়ে আসেন টার্মিনাল থেকে। তিনি জানিয়েছেন, বেলা ঠিক ১টা ২৫ মিনিটে এয়ার ইন্ডিয়ার অফিস থেকে অগ্নিকা-ের সূত্রপাত। তারপরই হুইসেল বেজে ওঠে। মিনিট কয়েকের মধ্যেই প্রথম আসে সিভিল এভিয়েশনের নিজস্ব ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট। তারা আগুন নেভানোর কাজ শুরুর পর এসে যোগ দেয় দমকল বাহিনীর একাধিক ইউনিট। এতে ১০টি ইউনিট সক্রিয় না হলেও দ্রত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। সাড়ে চারটার দিকে শুরু হয় সব ধরনের ফ্লাইট চলাচলের প্রক্রিয়া। তবে কয়েকটি ফ্লাইট কিছুটা বিলম্বের শিকার হতে পারে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বিমানবন্দরের পরিচালক কাজী ইকবাল করিম। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে কিভাবে আগুনের সূত্রপাত হলো। কারা এর প্রথম প্রত্যক্ষদর্র্শী। এ সম্পর্কে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সুস্পষ্ট তেমন কিছু বলতে পারেনি। ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুমের ইন্সপেক্টর পলাশ চন্দ্র মোদক বলেন, আমরা খবর পেয়েছি বেশ ধোঁয়া বের হচ্ছে। কোথা থেকে আগুন লেগেছে তা এখনও জানা যায়নি। এ সম্পর্কে জানা এএপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার তারিক আহমেদ উস সাদিক বলেন, ‘দুপুর ১টা ২৫ মিনিটের দিকে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পরও ধোঁয়া থামেনি। কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। বেলা সাড়ে তিনটায় তিনতলায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, তখনও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেখানে কাজ করছেন। ধোঁয়ার কারণে তারাও টিকতে পারছিলেন না। সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, তিনতলার ওই রুমের পাশেই আরও বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্স, যেমনÑ সৌদিয়া, এমিরেটস, ইতিহাদ টার্কিশসহ বেশ কয়েকটির অফিস পাশাপাশি একই সারিতে। এগুলোর আকার-আয়তন খুব বেশি নয়Ñ গড়পড়তায় এক থেকে দেড় ¯কয়ারফুট। এপিবিএন অধিনায়ক রাশেদুল ইসলাম খান জনকণ্ঠকে বলেন, এয়ার ইন্ডিয়ার অফিস ওই সময় বন্ধ ছিল। ভেতরে কোন লোকজন ছিল না। ওদের ফ্লাইট রাতে শুরু হওয়ার ঘণ্টা চারেক আগে সাধারণত অফিস খোলা হয়। দুপুরে হঠাৎ কর্তব্যরত এপিবিএন সদস্যরাই প্রথম ওই রুম থেকে ধোঁয়া বের হয়ে আসতে দেখেন। তারা তাৎক্ষণিক খবর দেয় সিভিল এভিয়েশন নিরাপত্তা বিভাগের ডিউটি অফিসে। একই সময় আমাদের এপিবিএন সদস্যরাও আমাদের নোটিসে আনার পর সেখানে তাদের তৎপর হতে নির্দেশ দেয়া হয়। একই সময় এয়ারপোর্ট ফায়ার এ্যালার্মিং সিস্টেমেও সাইরেন বেজে ওঠায় ছুটে আসে বিমানবন্দরেরর নিজস্ব ফায়ার ইউনিটের সদস্যরা। তবে প্রথম এপিবিএন সদস্যরাই ওই রুমে গিয়ে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। এ বিষয়ে একটি এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, বেলা দেড়টার দিকে ফায়ার এ্যালার্ম শুনে বেরিয়ে এসে তিনি দেখতে পান, তৃতীয়তলা ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে। বিমানবন্দরের অটো ফায়ার ডিটেকটরের ডিসপ্লেতে তখন লেখা দেখাচ্ছিল, ফায়ার অন এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লোর। বিমানবন্দরের ভেতরের একটি দোকানের এক কর্মচারী জানান, চারদিকে ধোঁয়ায় ছেয়ে গেলে যাত্রী আর কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। পরে নিরাপত্তা কর্মীরা সবাইকে বেরিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর বিকেল চারটার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তখন তো ধোঁয়া আর ধোঁয়া। রুমটির সামনে পানি জমে আছে। রুমের ভেতরের সব পুড়ে ছাই। কম্পিউটার, প্রিন্টার, কাগজপত্র, চেয়ার, টেবিল ও অন্যান্য আসবাবপত্র সবই ভস্মীভূত। পাশের রুম সৌদিয়ার অফিসও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত। তবে ওই সময়ে সৌদিয়ার অফিসেও কোন স্টাফ ছিল না। সময়টা জুমার নামাজের হওয়ায় আগুন লাগার আধা ঘণ্টা আগে সবাই অফিস বন্ধ করে মসজিদে ছুটে যান। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর এয়ার ইন্ডিয়ার কাস্টমার সার্ভিসের কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের পুরো অফিস পুড়ে গেছে। লকার, কাগজপত্র ও টাকাপয়সা যা ছিল, সব পুড়ে গেছে। আমাদের পাশে কাতার এয়ারের একটি কক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তবে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল, সে বিষয়ে কোন ধারণা দিতে পারেননি এয়ার ইন্ডিয়ার এই কর্মকর্তা। ভোগান্তিতে যাত্রীরা এদিকে আগুন লাগার ঘটনায় চরম ভোগান্তির শিকার হন যাত্রী সাধারণ। এতে বিমানবন্দরে আটকা পড়েন হাজারো যাত্রী। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হলেও তারা তখনও নিশ্চিত হতে পারেননি গন্তব্যের উদ্দেশে কখন রওনা হতে পারবেন। বিমানবন্দরে আসা হজযাত্রী শহীদুল হক খান এবং ফরিদা সিদ্দিকী বলেন, আমরা চেকইন করছিলাম, তখনই ধোঁয়া দেখতে পাই ভেতরে। আমরা ভেবেছিলাম ছোট-খাটো কিছু, কিন্তু সেটা চোখের সামনেই বড় হয়ে গেল। হঠাৎ করে ভেতরে ছোটাছুটি হলো। চেকইন প্রক্রিয়া ওই অবস্থায় রেখেই আমরা বাইরে চলে এসেছি। ফ্লাইটের কী হবে জানি না। অপরদিকে, মুহিদুল হক খান বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন দুপুর ২টা থেকে। বাইরেই বসেছিলাম। হঠাৎ করে ছোটাছুটি আর ধোঁয়ার গন্ধে চারপাশ ভরে যায়। বিকেল ৫টায় আমার ফ্লাইট ছিল, সেটার কী হবে, সে বিষয়ে কিছুই জানি না। কর্তৃপক্ষ এখনও আমাদের কিছুই জানায়নি। এ সময় রাশিয়ার ব্যবসায়ী সার্গেই বিমানবন্দরের টার্মিনালে সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছিলেন। দুপুরে ফ্লাইটে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এসে বিমানবন্দরেই বসে ছিলেন তিনি। বলেছেন, সন্ধ্যার ফ্লাইটে ঢাকা ছাড়ার কথা ছিল, এখন কী হবে গড নওজ। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, শুক্রবার জুমার নামাজের পরপর বেলা দেড়টার দিকে বিমানবন্দরের মূল ভবনের তৃতীয়তলায় এয়ার ইন্ডিয়ার অফিস কক্ষে আগুনের সূত্রপাত হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুরো বিমানবন্দরের বিদ্যুত সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। ধোঁয়ায় চারদিক আচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন ফ্লোরের অধিকাংশ কর্মী বাইরে। এ বিষয়ে কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র অফিসার আবদুল মান্নান জানান, ফায়ার সার্ভিসের দশটি ইউনিট বেলা ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর বিদ্যুত সরবরাহ আবার চালু করে দেয়া হয়েছে। আমাদের এ্যারাইভাল খোলাই ছিল। ডিপারচারও এখন খুলে দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি আয়ত্তেই রয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, বেলা ১টা ২৫ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট জেদ্দার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। এরপর বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত থাই এয়ার, চায়না ইস্টার্ন, হংকং এয়ারলাইন্স, মালডিভিয়ান এয়ারলাইন্স ও টার্কিশ এয়ারলাইন্সের আরও পাঁচটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ঢাকা ত্যাগ করার কথা ছিল। কিন্তু বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত কোনটিই যায়নি। তবে বিলম্বে হলেও সন্ধ্যার দিকে এসব ফ্লাইট ঢাকা ত্যাগ করেছে। এ সময় চায়না ইস্টার্নের স্টেশন সুপারভাইজার আবু হানিফ বলেন, বেলা ২টা ৩৫-এ আমাদের একটি ফ্লাইটের কুনমিং যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিদ্যুত বন্ধ থাকায় সেটা বিলম্বিত হয়েছে। সব এয়ারলাইন্সেরই এক অবস্থা। আশা করছি, সন্ধ্যার মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়, বেলা ১টা ২৫ মিনিটে তাদের জেদ্দাগামী বিজি ৭০৫৭ ফ্লাইটটি বাতিল হয়েছে। অগ্নিকা-ের কারণে অন্য কোন ফ্লাইট বাতিল না হলেও অভ্যন্তরীণ রুটের কয়েকটি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। সর্বশেষ জানা যায়, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে ফ্লাইট অপারেশন কার্যক্রম শুরু হয় বিকেল পাঁচটায়। তখন চলে চেকইন। তবে এখনও কোন ফ্লাইট শাহজালাল ছেড়ে যায়নি। বিকেলে সেখানে হাজির হন হজ অফিসের পরিচালক সাইফুল ইসলাম ও হাব মহাসচিব শাহাদত হোসেন তসলিম। সাইফুল জানান, পূর্ব নির্ধারিত সিডিউল অনুযায়ী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৪১৯ জন যাত্রী নিয়ে সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি হজ ফ্লাইট ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এখনও ফ্লাইট বাতিলের কোন তথ্য জানায়নি। হজযাত্রীরা সুস্থ ও অক্ষত রয়েছেন।
×