নিজস্ব সংবাদদাতা, ভোলা, ৮ আগস্ট ॥ লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের পূর্ব কচুয়াখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কথিত জিনের আছরে এক শিক্ষিকাসহ এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন দুপুর ১২টা বাজলেই অসুস্থ হয়ে পড়ে শুধু ছাত্রীরা। এদের মধ্যে গুরুতর অনেককেই হাসপাতালেও চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। প্রতিদিনই ওই বিদ্যালয়ে কথিত জিনের আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার শিক্ষিকাসহ ১৩ জন অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই বিদ্যালয়টি আগামী ৭ দিনের জন্য প্রশাসন বন্ধ ঘোষণা করেন। এদিকে মেডিক্যাল টিমের ডাক্তাররা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, এটা কোন জিন নয়। মানসিক রোগে তারা আক্রান্ত হচ্ছে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন ভোলার সিভিল সার্জন।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের পূর্ব কচুয়াখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৩শ’ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। গত এক সপ্তাহ আগে স্কুল চলাকালে দুপুর ১টা বাজলেই ওই স্কুলের শুধু ছাত্রীদের মাথা ব্যথা শুরু হয়। এর পর শরীরে খিচুনি দেখা দেয়। আবার অনেকে উল্টাপাল্টা আচারণ করে শিক্ষকদের সঙ্গে অশোভন কথাবার্তা বলে। আবার কেউ কেউ শিক্ষকদের স্কুল থেকে বের হয়ে যেতে বলে, স্কুল তাদের দখলে থাকবে বলতে থাকে। আবার শিক্ষদের মারতেও যায়। গত কয়েক দিন আগে একসঙ্গে ১৯ জন অসুস্থ হয়ে পড়ে। স্থানীয়রা এ ঘটনাকে জিনের আছর বলে প্রকাশ করে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও অসুস্থদের জন্য খনকার (কবিরাজ) ডেকে আনে। তারা বিদ্যালয়ে জিনের আছর আছে বলে উদ্ভট খবর প্রকাশ করে বিদ্যালয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। সোমবার ৭ জন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের লালমোহন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদ সিকদার জানান, গত এক মাস ধরে দু’একজনের মধ্যে এ ধরনের আচরণ শুরু হলেও চলতি সপ্তাহে তা বেড়েছে। কী কারণে এমন ঘটনা ঘটছে এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, স্কুল ভালই চলছিল। প্রায় ২৭০ ছাত্রছাত্রী নিয়ে স্কুলে পাঠদান চলে। এ বছর বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টেও এই স্কুল উপজেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। স্কুলে পিয়ন নিয়োগ নিয়ে একটা চক্রান্ত চলছে। স্কুলকে ধ্বংস করার জন্য কোন এক শিক্ষকের সহায়তায় স্থানীয় কেউ এ কাজ করছে বলে খনকার তদ্বীর করে জানিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে লামোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুল আরিফ মঙ্গলবার থেকে ওই স্কুল ৭ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সন্তোষ কুমার সরকার জানান, তারা ধারণা করছে ওই বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা মাছ সাইকোজেনিক ইলনেস নামক এক ধরনের মানসিক রোগে তারা আক্রান্ত।
গত ২ বছর আগে আফ্রিকার স্কুলে এ ধরনের রোগ দেখা দিয়েছিল। এ বিষয়ে ভোলা সিভিল সার্জন ডাঃ রথিন্দ্র নাথ মজুমদার বলেন, মনের ভয় থেকে মাস সাইকোজেনিক ইলনেস রোগ হয়। আমরা ঢাকায় রোগ তথ্য বিভাগের সঙ্গে কথা বলেছি। ওই বিদ্যালয়ের যেসব ছাত্রী অসুস্থ তাদের অভিভাবকদের বুঝানো হচ্ছে এটা কোন রোগ নয়।
স্কুল বন্ধ ঘোষণা ॥ মেডিক্যাল টিমের পরিদর্শন
ভোলায় কথিত জিনের আছরে ৭ দিনে অসুস্থ ৫০ শিক্ষার্থী
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: