ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দাফতরিক দায়বদ্ধতা

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ১০ জুলাই ২০১৭

দাফতরিক দায়বদ্ধতা

দায়বদ্ধতার গুরুত্ব অপরিসীম। কর্মক্ষেত্রে দায়-দায়িত্ব পালন যথাযথভাবে করা না হলে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা যেমন প্রকটিত হয়ে ওঠে, তেমনি দায়িত্বহীনতার মাত্রা প্রসারিত হয়। কর্মসম্পাদনের জন্য স্রেফ আন্তরিকতা যথেষ্ট নয়, তার সঙ্গে কাজের প্রতি গুরুত্ব প্রদান আবশ্যকীয়। জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজে স্বচ্ছতা ও গতিময়তা এবং কর্মকুশলতা প্রদর্শন করা না গেলে স্থবিরতা, অস্বচ্ছতা ও অযোগ্যতা ক্রমশ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চালিকাশক্তি যারা, তাদের কর্মের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। অদক্ষ, অযোগ্য, অথর্ব, অকর্মা আর আলস্যপ্রিয়তা কোনভাবেই দাফতরিক বা প্রাতিষ্ঠানিক কর্মের সহায়ক নয়। বরং ক্ষতির পরিমাণই বাড়ায়। যার মাশুল দিতে হয় দেশ এবং জনগণকেই। দেশের উন্নয়ন মানে জনগণের উন্নয়ন। অবশ্য উন্নয়ন বলতে শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন বোঝায় না, রাজনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নও বোঝায়। রাজনৈতিক উন্নয়ন মানেই গণতন্ত্রের উন্নয়ন এবং যদি তা স্বচ্ছতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে সম্পাদন করা হয়, তবে দেশ ও জাতির এগিয়ে যাওয়ার পথ হয় সুগম এবং মসৃণ। উন্নয়নের বড় লক্ষ্যই হচ্ছে আয় বৈষম্য দূরীভূতকরণ। ধনী ও গরিবের বৈষম্য হ্রাস করা না গেলে উন্নয়নের সুফল সর্বত্র বিতরিত হতে পারে না। এই বৈষম্য সমাজকে বিড়ম্বিত করে, হিংসা ও সংঘাতের মাত্রা বাড়ায়। শ্রেণীভেদ প্রকট হয়ে দাঁড়ায়। দরিদ্র শ্রেণীর উন্নয়ন ঘটানো গেলে বৈষম্যের মাত্রা হ্রাস পায়। তাই উন্নয়ন শুধু শহরকেন্দ্রিক হলেই হবে না, একেবারে গ্রাম থেকে শুরু করতে হবে। কারণ গ্রামীণ জীবন ও জনপদের উন্নয়ন হলে তার প্রভাব সারাদেশেই সঞ্চারিত হবে। বঞ্চনাকে জিইয়ে রেখে নগরের উন্নয়ন কোন কাজে আসে না। প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণ, সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার দায়িত্ব রাষ্ট্র এবং সরকারের। সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। কাজেই সেই জনগণের কাছে জবাবদিহি করা বাঞ্ছনীয়। নতুবা গণবিরোধী এক সরকার ব্যবস্থা কায়েম হতে বাধ্য। সরকার যেহেতু জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়, তাই জনগণের কাছেই তার দায়বদ্ধতা এবং জবাবদিহিতা। সরকারের কর্মসূচী বাস্তবায়নের দায়িত্ব প্রশাসনের। সংবিধানের তেত্রিশ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের (কর্মকর্তা বলে কিছু নেই) দায়বদ্ধতা সংবিধান ও জনগণের কাছে। জনগণ কঠিন-কঠোর শ্রমের বিনিময়ে যা রোজগার করে তা দিয়ে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা হয়। জনগণের শ্রমের ফসল যারা ভোগ করে তারা যদি সেই জনগণের ওপর ছড়ি ঘোরায় তবে ঘোর অন্ধকারই নামে। বঙ্গবন্ধু আমলাতান্ত্রিক মনোভাব ছেড়ে কর্মচারীদের জনগণের খাদেম বা সেবক হিসেবে নিজেদের বিবেচনা করার জন্য বলেছিলেন। কিন্তু আজকের বাস্তবতায় সেই সেবক আর মেলে না। যাদের অর্থে সংসার চলে তাদের প্রতি করুণাঘন আচরণ, শোষণ-নিপীড়ন পরিলক্ষিত হয় প্রায়শই। সরকারের প্রশাসনযন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা হলেন সচিব, জনপ্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ। স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ের যাবতীয় কাজের ভার এবং প্রধান জবাবদিহিতাও তার ওপরই ন্যস্ত। মন্ত্রীকে সব সময় সবক্ষেত্রে সাহায্য ও সহযোগিতা করাও তার অন্যতম কাজ। এক্ষেত্রে দক্ষতা, কর্মকুশলতা, যোগ্যতা, শ্রম ও কর্মনিষ্ঠার ঘাটতি হলে বিপর্যয় ঘটতে বাধ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সরকারী সম্পদের সদ্ব্যবহার এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চুক্তির বিধিবিধান চালু করেছেন চার বছর আগে। আগামী এক বছর মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কি কাজ করবে সেই কাজের একটি অঙ্গীকারনামা সম্পাদনকেই বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বলা হচ্ছে। এটি প্রশাসনের একটি অভ্যন্তরীণ কর্মকৌশল, যা দেশের জনগণের কল্যাণে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়ন কর্মকা-কে নিয়ে যেতে সরকারী কর্মচারীদের জন্য একটি দাফতরিক দায়বদ্ধতার স্মারক। চতুর্থবারের মতো সম্পাদিত এই চুক্তি সই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সতর্ক করে দিয়েছেন দাফতরিক দায়িত্বপ্রাপ্তদের, যেন দায়িত্বগুলো কার্যকর হয় তার ব্যবস্থা করা। যাদের অর্থে সংসার চলে তাদের সেবা করা, দুর্ভোগ লাঘব এবং কষ্টমুক্ত রাখার জন্য বলেছেন। অর্থাৎ জনগণের জন্যই সব করতে হবে। হুঁশিয়ারিও দিয়েছেনÑ ‘সাবধান একটা নিরপরাধ লোকের ওপর যেন অত্যাচার না হয়। এই উচ্চারণের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও বলতে চাই, জনগণকে বঞ্চিত করার অর্থ দেশের প্রতি অবিচার করা। তা যেন আর না হয় সেই প্রত্যাশা দেশবাসীরও।
×