ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মোটরবাইক শোরুম

ঘরের দুয়ারে ঈদের কেনাকাটা

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ২০ জুন ২০১৭

ঘরের দুয়ারে ঈদের কেনাকাটা

সমুদ্র হক ॥ অভিনব। একটি মোটরবাইক। সেজেছে পোশাকের শোরুম। লোহার র‌্যাকে (তাকে) পোশাক। ব্যাগও ঝোলানো। ঘরের দুয়ারে ঈদের কেনাকাটা। সাশ্রয়ী দাম। গরিবের বলা হয়। তবে শুধু গরিবের নয়। গাঁয়ের লোক ভেঁপু ভেঁপু ভট ভট শব্দ শুনলেই ঘর থেকে বের হয়। গৃহস্থ বাড়ি কিষান বাড়ি কেউ বাদ যায় না। তরুণ-তরুণীরাও এগিয়ে আসে। র‌্যাক সেট করা বিশেষ ধরনের মোটরবাইকের চালক ক্ষুদ্র জনসমাগম দেখলেই ব্রেক করে। পণ্যের বর্ণনা দেন তিনি। তবে হকারের মতো নয়। সৃষ্টিশীল মেধার প্রকাশ মোবাইল ফোনের মেমোরি কার্ডে। পুরনো ‘নিলামবালা ছ’ আনা....’ গানের সুরে প্যারোডি করা আছে। সুরের বর্ণনায় মেয়েদের থ্রি পিস টুপিস, শাড়ি, ছেলেদের পাঞ্জাবি, ছোট্টমুনিদের বাহারী পোশাকের ডিজাইন ও দাম শোনে লোকজন। মজাও পায়। বয়স্করা কখনও ফোকলা দাঁতে ঠোঁটের কোনায় মিহিদানা হাসি দিয়ে বলে ‘ও দোকানদার তোমার দোকানত বুড়াগেরে কাপড় নাই। থাকে দ্যও তো।’ দোকানী মাথা নেড়ে বলে ‘আছে জ্যাঠা’। ঈদের এই সময়টায় বগুড়ার প্রত্যন্ত গ্রামে মোটরবাইক শোরুমে পোশাকের বেচাকেনা চলছে। লোকজন কিনছেও। এমন ভ্রাম্যমাণ মোটরবাইক চালক মোমিন। বাড়ি বগুড়ার সুখানপুকুর এলাকায়। জানালেন, নিজের মেধায় ভ্রাম্যমাণ দোকান দিয়েছেন মোটরসাইকেলে। প্রায় এক লাখ টাকা দিয়ে মাস কয়েক আগে বাজাজ সিটি-১০০ মোটরসাইকেল কিনেছেন। বসার আসনের সঙ্গেই বিশেষ ব্যবস্থায় লোহা দিয়ে কয়েকটি তাকের খাঁচা বানিয়ে নিয়েছেন। প্রতিটি তাকে (র‌্যাক) নানা ধরনের পোশাক রাখেন। মনে হবে শোরুম। পোশাক পাইকারি দরে বগুড়া শহরের হকার্স মার্কটে থেকে কেনেন। ঈদে যে নামে পোশাক চলে সেই নামে পরিচিতি করেন। গ্রামের পথে ঘুরে ঈদের পোশাক বেচে রোজগার ভালই হয়। প্রতিদিন কত থাকে! হেসে বলেন ‘এটা গোপন থাক না। বললে যদি আবার ট্যাক্স বসে...’। বললেন, শহরে ও উপজেলায় দোকান দিলে পজেশন নিতে হয়। ভাড়া দিতে হয়। কর্মচারী রাখতে হয়। চাঁদা দিতে হয়। চাতক পাখির মতো খদ্দেরের আশায় বসে থাকতে হয়। পথে প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে বিক্রিতে এসব ঝামেলা নেই। ঘরের দুয়ারে পণ্য পৌঁছে দেয়ায় গ্রামের লোকের সুবিধা হয়। বর্তমানে গ্রামের তরুণ-তরুণীরা অনেক ফরোয়ার্ড। শহুরে মেয়ের মতো। পোশাকের বাহারী নামও জানে। যেমন এখন বলে ‘বাহুবলী আছে।’ গ্রামের তরুণ-তরুণীরাও বাহুবলী ক্রেজে আক্রান্ত। ভাইরাস। মোটরবাইক সাজানো শোরুমের মোমিন এমন গ্রাম বেছে নেন যেখান থেকে বগুড়া নগরী ও উপজেলা সদর অপেক্ষাকৃত দূরে। চরগ্রামগুলোতেও যান তিনি। যদিও বর্তমানে বেশিরভাগ সড়ক পাকা। তারপরও কিছু কাঁচা সড়কও আছে। এসব গ্রামের লোকজনকে নগরীতে ও উপজেলা সদরে যেতে সময় লাগে। সোনাতলার বাঙালী তীরের হরিখালি, সুখানপুকুরের নওদাঁবগা. শিহিপুর গ্রামের কয়েকজন বললেন, প্রতিদিন নগরীতে যাওয়া হয় না। উপজেলা সদরে আজকাল নিউমার্কেটের মতো দোকান বসেছে। তারপরও ঘরের দুয়ারে যখন মোটরবাইক দোকান চলে আসে এবং চাহিদার পোশাক পাওয়া যায় তখন তাই কেনা ভাল। সোনাতলা এলাকার তরুণী মুন্নী বললো, সে থ্রি পিস কিনেছে। খুব সুন্দর। দামও কম। তার ফুপাত বোন বগুড়ায় যে থ্রি পিস কিনেছে এই থ্রি পিস একই রকম। মোটরবাইক দোকানী বললেন, তিনি বেছে বেছে কাপড় কেনেন। যাতে গ্রামের লোকের মনে হয় শহরের দোকানের চেয়ে কম নয়। ঠাকুরগাঁওয়ে উপচে পড়া ভিড় নিজস্ব সংবাদদাতা ঠাকুরগাঁও থেকে জানান, যতই এগিয়ে আসছে মুসলিম সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ও প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর। ততই জমে উঠছে ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদের কেনাকাটা এবং প্রতিটি মার্কেটে দেখা যাচ্ছে উপচে পড়া ভিড়। ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, সমস্যা হচ্ছে সময় অসময়ে লোডশেডিং। এবার ঈদের প্রধান আকর্ষণ নতুন পোশাক। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এবার কয়েকদিন আগে থেকেই ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়েছে। পরে অতিরিক্ত ভিড়ের চাপ এড়াতেই হয়ত ক্রেতারা আগেভাগেই প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন। মার্কেট ও বিপণিবিতানে গিয়ে দেখা যায়, নানা ডিজাইনের নতুন নতুন ঈদ পোশাকে ক্রেতা আকর্ষণের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে দোকানগুলোতে। কেনাকাটা করেছেন অনেকে। বিশেষ করে মেয়েদের কেনাকাটা চলছে বেশ জোরেশোরেই। বিক্রেতারাও আশায় বুক বেঁধে ঈদের নতুন পোশাক সাজিয়ে রেখেছেন দোকানে। ঠাকুরগাঁও ঘোমটা টুর মালিক বিপুল বলেন, রোজার প্রথম দিন থেকে ঈদ বাজার ধরে তারা এর ১৫ দিন আগেই নতুন পোশাক তুলেছেন। রোজার শুরু থেকেই বাজারে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। এরই মধ্যে নতুন মাস শুরু হয়েছে। চাকরিজীবীরা মে মাসের বেতন পেয়েই বাজারে ভিড় করছেন। দোকানীরা জানিয়েছেন, এবারও ঈদ উপলক্ষে বাজারে ভারতীয় পোশাকের আধিক্য। তবে এবার ভারতীয় নায়িকা ও সিরিয়ালের নামে তেমন কোন পোশাক আসেনি। এর বিপরীতে বাজার দখল করেছে বাহুবলী ও পাকিস্তানী পোশাক। আর শাড়ির চেয়ে এবার দেশীই বিক্রি হচ্ছে বেশি। সব পোশাকের দাম এখন পর্যন্ত সহনশীল আছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিক্রেতা আরমান জানান, এবার ঈদে মেয়েদের পোশাকের ক্ষেত্রে ভারতীয় ‘ওয়ান পিস’ এসেছে। এটি বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত। থ্রি-পিস ‘ফ্লোর টাচ’ বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। মেয়েদের প্লাজো পাজামা বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার থেকে আট হাজার টাকায়। এছাড়া পাকিস্তানী লোন আটশ’ থেকে দুই হাজার দুইশ’ এবং দেশী থ্রি-পিস ৬৫০ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এখানে নিজের জন্য পোশাক কিনতে গিয়ে ছাত্রী আইরিন বলেন, ‘সামনে ভিড় আরও বাড়বে, তখন দেখা যাবে একটা পোশাক ভাল করে দেখেও কেনার সুযোগ থাকবে না। তাই চাপ বাড়ার আগেই কেনাকাটা করতে আসলাম। অনেক দোকান ঘুরে কিছু কিনেছি, আরও কিছু কিনব। ব্যবসায়ী লালন জানান, তার দোকানে মেয়েদের ভারতীয় জিপসি আড়াই হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা, বাচ্চাদের ফ্রক ও টপস এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা, লং থ্রি-পিস এক হাজার থেকে সাত হাজার টাকা, ভারতীয় গ্রাউন্ড আট হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা এবং ছোট মেয়েদের বাহুবালি-২ বিক্রি হচ্ছে দেড় থেকে তিন হাজার টাকায়।
×