ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে

লাগেজের জন্য বিমান যাত্রীদের অপেক্ষার দিন শেষ হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৬ জুন ২০১৭

লাগেজের জন্য বিমান যাত্রীদের অপেক্ষার দিন শেষ হচ্ছে

আজাদ সুলায়মান ॥ বিমান যাত্রীদের লাগেজ ভোগান্তির অবসান ঘটাতে বহুল সমালোচিত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। নতুন কাঠামোতে খুব শীঘ্রই এ খাতের প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী সংস্থার সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিকে আগামী ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নতুন ব্যবস্থাপনায় লাগেজ ভোগান্তির অবসান ঘটবে। এতে প্লেন থেকে নামার পর যাত্রীকে লাগেজের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না, যাত্রীর জন্য লাগেজ অপেক্ষা করবে। জানতে চাইলে এর সত্যতা স্বীকার করে মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জনকণ্ঠকে বলেছেন, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। যাত্রীদের লাগেজ ডেলিভারি নিয়ে প্রতিনিয়ত সমালোচনা আর অভিযোগের শেষ নেই। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যেই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং খাতকে আইনী কাঠামোতে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেটার বাস্তবায়ন খুব দ্রুতই করা হবে। জানা যায়, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের সবগুলো বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং রেগুলেশন প্রণয়নের লক্ষ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম জিয়াউল হককে আহ্বায়ক করে আট সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়েছে। আগামী ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, কাস্টমস, এনবিআর, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, প্রাইভেট এয়ারলাইন্স, ও প্রাইভেট (কার্গো) এয়ারলাইন্সের প্রতিনিধিবৃন্দ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন। ইতোমধ্যে পাস হওয়া সিভিল কর্তৃপক্ষ আইনের আওতায় এ রেগুলেশন প্রণীত হবে। এদিকে রবিবার সচিবালয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং রেগুলেশন প্রণয়ন সংক্রান্ত সভায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়। সভায় নতুন রেগুলেশান প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত কিভাবে যাত্রীদের লাগেজ দ্রুত ডেলিভারি দেয়া যায়, সেটা খুঁজে বের করার নির্দেশ দেয়া হয়। এ সম্পর্কে জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, রেগুলেশন প্রণয়নের পর সেটা আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং করা হবে। তারপরই ঠিক করা হবে কিভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিচালনা করা হবে। মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, এই রেগুলেশন প্রণয়নের পর পরিস্থিতি কোন দিকে যায় সেটা বলা মুশকিল। এটি বিমানের হাতে থাকবে নাকি আরও কোন কৌশলগত পার্টনার তাতে সংযুক্ত হবে সেটাও বিবেচনা করা হবে। কেননা দুনিয়াব্যাপী বিমানবন্দরগুলোর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের নিয়ন্ত্রণভার থাকে সিভিল এভিয়েশনের ওপর। কিন্তু বাংলাদেশেই এর উল্টো। এখানে ১৯৭২ সালে বিমানের প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিমান নিজেই আন-অফিসিয়ালি এই কাজটা করে আসছে। এটা নিজের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য সিভিল এভিয়েশন বার বার আগ্রহ প্রকাশ করলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। উল্লেখ্য, বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দুরবস্থা নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। যখনই লাগেজ ডেলিভারি নিয়ে বড় ধরনের জটিলতা দেখা দেয়, তখনই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বেসরকারী ছেড়ে দেয়ার তাগিদ অনুভূত হয়। বছর তিনেক আগে ব্রিটিশ এমডি কেভিনের সময়েও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং জয়েন্ট ভেঞ্চারে ছেড়ে দেয়ার জন্য দরপত্রও ডাকা হয়। নানা জটিলতার দরুন ওই দরপত্রের আর কোন অগ্রগতি ঘটেনি। তবে বিমান এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য বরাবরই প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতির ঘাটতিকে দায়ী করে আসছ্।ে বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গ্রাউন্ড সার্ভিসের দুরবস্থার জন্য ম্যানেজমেন্টকে দায়ী করে আসছে। আইকাও রুলস অনুযায়ী উড়োজাহাজ অবতরণের প্রথম ১২ মিনিটের মধ্যে প্রথম লাগেজ ডেলিভারি দিতে হবে এবং ৩০ মিনিটের মধ্যে সব ডেলিভারি শেষ করতে হয়। কিন্তু শাহজালাল বিমানবন্দরে এ ধরনের লাগেজ সেবা পাওয়া কল্পনাতীত। এখানে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে লাগেজের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। কালেভদ্রে আধা ঘণ্টায় প্রথম লাগেজ ডেলিভারি দেয়া সম্ভব হয়। বিমান এ ব্যর্থতার জন্য বরাবরই দায়ী করে আসছে জনবল ও যন্ত্রপাতির অভাবকে। বিমানের কাস্টমার পরিচালক আতিক সোবহান জানিয়েছেন, এটা খুব কঠিন কিছু নয়। বেশি নয়Ñ মাত্র ১০০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা আর ৪-৫শ’ জনবল নিয়োগ দিলেই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং অনেকটাই উন্নত করা সম্ভব। জনবল আর যন্ত্রপাতি দেয়ার পরও যদি সঙ্কট না কাটে তখন বিমানকে দোষারোপ করা যেতে পাারে। এ সম্পর্কে বিমানের সিবিএ সভাপতি মশিকুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেছেন, বিমান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গ্রাউন্ড সার্ভিস দিয়ে আসছে। শত সীমাবদ্ধতার মাঝেও বিমান এটা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিমানের রাজস্ব আয়ের প্রধান এই খাতের ওপর স্বার্থান্বেষী মহলের দৃষ্টি ছিল শকুনের মতো। অথচ গ্রাউন্ড সার্ভিস গ্রহণযোগ্য মানে নেয়াটা বিমানের সদিচ্ছার ওপরই নির্ভর করছে। বিমান নিজের যাত্রী সবগুলো বিদেশী এয়ারলাইন্সের গ্রাউন্ড সার্ভিস দিচ্ছে। যত সংখ্যক জনবল আর যন্ত্রপাতি দরকার সেটা বছর বছর ধরে তাগিদ দেয়ার পরও পাওয়া যাচ্ছে না।
×