ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেহাল নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ২৬ মে ২০১৭

বেহাল নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র

বাবুল হোসেন, ময়মনসিংহ ॥ মেরামত ও সংস্কারের অভাবে সৌন্দর্য হারাচ্ছে ত্রিশালে কবি নজরুলের স্মৃতিকেন্দ্রগুলো। স্মৃতিকেন্দ্রের ভেতরে বাইরের রং উঠে বিবর্ণ ও কালচে হয়ে গেছে। খসে পড়ছে দেয়ালের পলেস্তরা। বিনষ্ট হয়ে গেছে পাখাসহ বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি। বেহাল দশার কারণে স্থানীয় পাঠকেরাও আসছে না স্মৃতিকেন্দ্রের পাঠাগারে। পর্যটকদেরও টানতে পারছে না এখন স্মৃতিকেন্দ্রগুলো। ত্রিশালে কাজির শিমলা দারোগাবাড়ি ও নামাপাড়া গ্রামের বিচুতিয়া ব্যাপারী বাড়িতে নির্মিত কবি নজরুল স্মৃতিকেন্দ্রগুলোর এমন বেহাল দশায় ক্ষুব্ধ ও হতাশ নজরুলপ্রেমিক ভক্ত, অনুরাগীসহ স্থানীয় এলাকাবাসী। ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিকে ধরে রাখতে কাজির শিমলা গ্রামের দারোগা রফিজ উল্লাহ এবং নামাপাড়া গ্রামের বিচুতিয়া ব্যাপারীর বাড়িতে গত ২০০৮ সালে নির্মাণ করা হয় নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র কাম জাদুঘর। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নজরুল ইনস্টিটিউট এসব স্মৃতিকেন্দ্র নির্মাণ করে। কাজির শিমলা গ্রামের দারোগা রফিজ উল্লাহ কবি নজরুলকে ভারতের আসানসোলের রুটির দোকান থেকে নিজ বাড়িতে নিয়ে এসে ভর্তি করে দেন ত্রিশাল উপজেলা সদরের দরিরামপুর একাডেমিতে। পরে বর্ষাকালে যাতায়াতের সুবিধার্থে কবি নজরুলকে জায়গীর করে দেন নামাপাড়া গ্রামের আত্মীয় বিচুতিয়া ব্যাপারী বাড়িতে। কবির বাল্য স্মৃতিবিজড়িত কাজির শিমলা গ্রামের দারোগা বাড়ি ও নামাপাড়া গ্রামের বিচুতিয়া ব্যাপারী বাড়িতে কবির স্মৃতিকে চির অম্লান করে রাখতেই নির্মাণ করা হয় নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র। কাজির শিমলা গ্রামের দারোগা রফিজ উল্লাহর বাড়িতে নির্মিত স্মৃতিকেন্দ্র কাম জাদুঘরে কবির ব্যবহৃত একটি খাট রাখা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য। এছাড়া কবির কয়েকটি ছবিও আছে স্মৃতিকেন্দ্রে। আছে বেশকিছু বই। ক্যাসেট রেকর্ডার। দুতলার এই স্মৃতিকেন্দ্রটির নিচতলায় আছে ক্ষুদ্র মিলনায়তন। আর ওপরের দুতলায় আছে ক্ষুদ্র পরিসরের পাঠাগার। পর্যটকদের জন্য আলাদা দুটি রেস্টরুম। দারোগা রফিজ উল্লাহর বংশধর কাজী শাহাদাত হোসেন অভিযোগ করে জানান, নজরুলের শেকড় এই কাজির শিমলা গ্রামের দারোগা বাড়ির স্মৃতিকেন্দ্রটি গত ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর একবারের জন্যও সংস্কার কিংবা মেরামত করা হয়নি। করা হয়নি রং চুনের কাজ পর্যন্ত। দীর্ঘ এক দশকেও রঙের কাজ না করায় স্মৃতিকেন্দ্রের ভেতরে বাইরে রং উঠে বিবর্ণ ও কালচে হয়ে গেছে। সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলছে দৃষ্টিনন্দন এই স্মৃতিকেন্দ্রটি। পুরো স্থাপনার দেয়ালে ও ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ছে। ফাটল দেখা দিয়েছে স্থাপনার নানা জায়গায়। স্মৃতিকেন্দ্রের চারপাশের ড্রেনে ময়লা আবর্জনা জমে ভরাট হয়ে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশ দূষণ করছে। নানা আগাছা ভর করেছে স্মৃতিকেন্দ্রের চারপাশে। ইতোমধ্যে বিনষ্ট হয়ে গেছে পাখাসহ বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি। স্মৃতিকেন্দ্রের কর্মীরা জানিয়েছে, ২৬টি বৈদ্যুতিক পাখার ২৪টি বিকল হয়ে গেছে। জ্বলছে না অনেক বৈদ্যুতিক ভাল্ব। স্মৃতিকেন্দ্রের এমন বেহাল দশা ও সৌন্দর্য হারানোর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কবির নাতনি খিলখিল কাজী। কবির স্মৃতিকে অম্লান রাখতে স্মৃতিকেন্দ্র ও জাদুঘরের সৌন্দর্য বর্ধন করার দাবি জানিয়েছেন সরকারের কাছে। স্মৃতিকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান জানান, নজরুল স্মৃতিকেন্দ্রের মেরামত ও সংস্কারে বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে পত্র দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই মেরামত ও সংস্কার কাজ শুরু করা হবে। ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোঃ খলিলুর রহমান জানান, ময়মনসিংহকে পর্যটন নগরী করতে চাইলে ত্রিশালে নজরুল স্মৃতিকেন্দ্রের সৌন্দর্য বাড়াতে হবে।
×