ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

উত্তরের সঙ্গে সংলাপ চান দঃ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২৪ মে ২০১৭

উত্তরের সঙ্গে সংলাপ চান দঃ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট

দঃ কোরিয়ার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন এমন এক সময় ক্ষমতায় এলেন যখন কোরীয় উপদ্বীপে যুদ্ধের ছায়া বিরাজ করছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন হাই দুর্নীতি কেলেঙ্কারির কারণে অভিশংসিত ও অপসারিত হওয়ার পর গত ৯ মের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মুন ক্ষমতায় আসেন। ৬৪ বছর বয়স্ক এই সাবেক মানবাধিকার আইনজীবীকে যুদ্ধের ছায়া মোকাবেলা করা ছাড়াও দেশের কিছু সমস্যার সমাধান করতে হবে। আয়ের ক্ষেত্রে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অসাম্য বিরাজ করে দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটির যুব শক্তির বেকারত্ব ক্রমবর্ধমান। তা ছাড়া অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চেহারা রুগ্ন ব্যক্তির মতো। এর ওপর আছে যুদ্ধংদেহী উত্তর কোরিয়ার দিক থেকে আক্রমণের আশঙ্কা। তদুপরি পিয়ংইয়ং ওয়াশিংটন উত্তেজনা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে কিছুদিন আগে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন যে কোন মুহূর্তে সংঘাত বেধে যেতে পারে। অবশ্য মধ্য বাম ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী মুন বলেছেন তার লক্ষ্য হবে সাত দশক পরস্পর থেকে বিছিন্ন থাকা দুই কোরিয়ার পুনরেকএীকরণ ঘটানো। তিনি বলেন ‘উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ এক জনগোষ্ঠী। পাঁচ হাজার বছর ধরে তারা এক ভাষা এক সংস্কৃতির অধিকারী। শেষ পর্যন্ত আমরা একত্রিত হব।’ পুনরেকত্রীকরণ যে দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর এক বিশাল অর্থনৈতিক বোঝা হিসেবে চেপে বসবে সে ব্যাপারে মুন সচেতন। সে কারণেই তিনি মনে করেন যে, দুই দেশকে একত্রিত করার প্রথম পদক্ষেপ অবশ্যই হতে হবে অর্থনৈতিক সহযোগিতা। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানিগুলোকে উত্তর কোরিয়ার সস্তা শ্রমের সুযোগ গ্রহণ করতে দিতে চান। তেমনি চান সীমান্তের উভয় অংশে নতুন করে সাংস্কৃতিক বিনিময়। মুন বলেন, অর্থনৈতিক একীভবনে শুধু যে উত্তর কোরিয়াই লাভবান হবে তা নয়, দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতিরও পুনরুজ্জীবন ঘটবে। কিন্তু ক্রমান্বয়ে পুনরেকত্রীকরণের মধ্যে অস্তিত্ব এবং অর্থনীতিগত দুটো চ্যালেঞ্জই আছে। আজকের সীমান্ত দুটি অসম রাষ্ট্রকে পৃথক করেই শুধু রাখেনি, দুটি আলাদা ব্যবস্থাকেও বিভাজিত করে রেখেছে। দক্ষিণ কোরিয়া মুক্ত অর্থনীতির সমৃদ্ধ দেশ আর উত্তর কোরিয়া স্ট্যালিনবাদী একনায়কতন্ত্রের অধীন পরিকল্পিত অর্থনীতির দরিদ্র দেশ। খুব কম জোড়া রাষ্ট্রই এত কাছাকাছি অথচ তাদের মধ্যে এত বিশাল ব্যবধান। দুই কোরিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক খারাপ বললে কমই বলা হবে। আসলে তাদের মধ্যে কোন সম্পর্কই নেই। এক দশক আগে সিউল ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে সর্বশেষ শীর্ষ বৈঠক হয়েছিল। এমনকি সৈন্যমুক্ত সীমান্ত অঞ্চলটিতেও ২০১৩ সাল থেকে দু’পক্ষের মধ্যে কোন আলোচনা হয়নি। অনেকে যুক্তি দেখান উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান কিম জং উন তো উন্মাদ এবং একজন উন্মাদের সঙ্গে আবার আলোচনার কি আছে। কিন্তু মুনের কাছে এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। তার মতে ‘উন একজন যুক্তিবিবর্জিত নেতা হলেও এই বাস্তবতা মানতে হবে যে তিনি উত্তর কোরিয়ার শাসক। তাই তার সঙ্গে আমাদের কথা বলতে হবে।’ এদিকে একনায়ক উন যে তার বজ্রকঠিন শাসন শিথিল করতে শুরু করেছেন তার কিছু কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ভিন্নমত এখনও নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হলেও তিনি মুক্তবাজারকে শিকড় গড়ার অনুমতি দিয়েছেন। ২০১৫ সালে নববর্ষের ভাষণে উনও বলেছিলেন যে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি। তবে মূল সমস্যাটা বরাবরই সেই একই রয়ে গেছে এবং সেটা হলো পারমাণবিক ইস্যু। উনের সেই একই গো-পরমাণু অস্ত্র নিয়ে আলোচনা করা যাবে না। অন্যদিকে মনের বক্তব্য হচ্ছে আলোচনা তখনই অর্থবহ হবে যদি এই গ্যারান্টি থাকে যে পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচী স্থগিত রাখা বা গুটিয়ে নেয়ার মতো দৃশ্যমান ফল পাওয়া যাবে। মুন আগেও এ ধরনের সংলাপ দেখেছেন এবং বিশ্বাস করেন যে এমন সংলাপে আবারও কাজ হতে পারে। সাবেক প্রেসিডেন্ট রোহ মু হাইউনের চীফ অব স্টাফ হিসেবে তিনি ২০০৭ সালে উনের পিতা কিম জং ইলের সঙ্গে বোহের ঐতিহাসিক শীর্ষ বৈঠক এবং পরে পরমাণু অস্ত্র বিলুপ্তি প্রশ্নে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও জাপানের ৬ পক্ষীয় আলোচনার পরিকল্পনা প্রণয়নে সাহায্য করেছিলেন। ২০০৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এই আলোচনা চলে। এ সময়ে পর্যায়ক্রমে উত্তর কোরিয়াকে ৪৫০ কোটি ডলার সাহায্যও দেয়া হয়। পরে উত্তর কোরিয়ার একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকে কেন্দ্র করে আলোচনা ভেস্তে যায়। সমালোচকরা তখন বলেছিল যে এ সাহায্য প্রকৃতপক্ষে অস্ত্র কর্মসূচী ত্বরান্বিত করতে পিয়ংইয়ংকে সাহায্য করেছে। কিন্তু মুন মনে করেন যে, উত্তর কোরিয়াকে একঘরে করে রাখার ও নিষেধাজ্ঞা দেয়ার বর্তমান নীতির তুলনায় সেই সাহায্য সহায়তা দিয়ে আলোচনায় নিয়োজিত রাখার নীতিটা বরং ভাল ছিল। উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক চুল্লির কুলিং টাওয়ারটা ধ্বংস পর্যন্ত করে দিয়েছিল। সেই ধাপে ধাপে এগোনোর কৌশল এখনও অর্থবহ এবং এখনও অনুসরণ করা সম্ভব বলে মনে করেন মুন। তিনি বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে, দুই পক্ষ আলোচনায় বসতে, ধ্যান-ধারণা আরও বেশি আদান-প্রদান করতে এবং বিনা সমস্যায় ঐকমত্যে পৌঁছতে পারে। সূত্র : টাইম
×