ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুমন্ত গুপ্ত

তরুণ প্রজন্মের প্রতি বিল গেঁস

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ২৩ মে ২০১৭

তরুণ প্রজন্মের প্রতি বিল গেঁস

বিল গেটস, এই নামের পর তাঁকে আর পরিচয় করিয়ে দেয়ার দরকার হয় না। পৃথিবী বদলে দেয়া মানুষদের একজন তিনি। এই মানুষকে পুরো বিশ্ব চেনে বিজনেস ম্যাগনেট, কম্পিউটার প্রোগ্রামার, আবিষ্কারক, দানবীর, সোশ্যাল ওয়ার্কার হিসেবে। ১৯৭৫ সালে স্কুলের বন্ধু পল অ্যালেনকে নিয়ে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করেন বিল গেটস, যা পার্সোনাল কম্পিউটিংয়ে বিপ্লব ঘটিয়ে দেয় ও সফটওয়্যার বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে। নিজে বিশ্বের শীর্ষ ধনী হিসেবেও প্রতিষ্ঠা পান বিল গেটস। আমরা প্রত্যেকেই সফল হতে চাই। হতে চাই বিল গেটসের মতো সফল, কিন্তু সফলতার সংজ্ঞা কী? এই প্রশ্নের উত্তরে কেউ হয়তো বলবেন টাকা, কারও কাছে সফলতার মানে হলো ক্ষমতা। আবার খ্যাতির মাঝেও কেউ খুঁজে ফেরেন সফলতা। কিন্তু বিল গেটস সফলতা বলতে কী বোঝেন? তার মতে সফলতার নির্দেশক দুটি। একটি হলো এমন কিছু করা যার মাধ্যমে সবার মধ্যে নিজেকে আলাদা করা যায়। অপরটি হলো প্রিয়জনদের জন্য কিছু করতে পারা। বিল গেটস বলেন, ‘ওয়ারেন বাফেট সবসময় বলে থাকেন যে আপনাকে নিয়ে যদি আপনার প্রিয় মানুষরা আনন্দিত থাকে এবং আপনাকে ভালোবাসে, তাহলেই আপনি সফল।’ তিনি আরও বলেন, ‘আর আপনি যখন সবার থেকে আলাদা কিছু করবেন, তখনও আপনার কাছে আলাদা অনুভূতি হবে। সেটি হতে পারে নতুন কিছু উদ্ভাবন কিংবা কাউকে সাহায্য করা। এখন কার তরুণ প্রজন্মের যাদের পড়াশোনা শেষ এবার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পালা। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পালা কিন্তু ঐ সময়টাতে অনেকেই হোঁচট খান। বেশিরভাগই ভুল পথে পা বাড়ান। প্রজন্ম বুঝতে পারে না কোন পথটি তার জন্য সঠিক। কোন পথে গেলে সে সফল হতে পারবে। আবার একি অবস্থা দেখা যায় স্কুল ছেড়ে কলেজে পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীদের মাঝে। কোন কলেজে ভর্তি হবে, কোন বিষয় নিবে, কোন পথে হাঁটলে সফল হওয়া যাবে এমন হাজার প্রশ্ন দানা বাঁধতে থাকে মনে। আবার কেউ কেউ কেরিয়ার বেছে নেওয়ার পরেও আক্ষেপ করতে থাকেন। এবার তরুণ প্রজন্মের এই সব সমস্যার সমাধান দিলেন বিল গেটস। সম্প্রতি নিজের টুইটার এ্যাকাউন্টে ১৪টি টুইট করেছে বিজনেস টাইকুন, মাইক্রোসফট-এর কো-ফাউন্ডার গেটস। জীবনের এই কঠিন মুহূর্তগুলোয় দাঁড়িয়ে যাতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন ছাত্রছাত্রীরা সেই উদ্দেশ্যেই গেটসের এই টুইট বার্তা। কখনও বলেছেন, কেরিয়ারের জন্য এই মুহূর্তে বায়ো-সায়েন্স এবং এনার্জি বিষয় হিসেবে খুবই ভাল। কখনও আবার নিজের স্কুল কলেজের কথাও উদাহরণ হিসেবে শেয়ার করেছেন। কী ধরনের মানুষের সঙ্গে মেশা উচিত সে বিষয়েও উপদেশ দিয়েছেন। শেষ কয়েকটি টুইটে গেটসের মতো, এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল সময়। এই সময়েই আমরা বেঁচে রয়েছি। বন্ধুরা জেনে নেই সেই টুইট বার্তাগুলো কি ছিল ... কলেজের নতুন শিক্ষার্থীরা প্রায়ই আমাকে ক্যারিয়ারের উপদেশের কথা জিজ্ঞেস করে, তদের উদ্দেশে বলছি- এনার্জি ও বায়োসায়েন্স সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র যেখানে তোমার ব্যাপক কাজ করার সুযোগ পাবে। আমি যদি আজ কাজ শুরু করতাম তাহলে তাই করতাম। আমার কলেজ ছাড়ার আগেই যদি কিছু বিষয়ে জানতে পারতাম উদাহরণস্বরূপ বলা যায় – বুদ্ধির নানা রূপ নিতে পারে, এটি এক পাক্ষিক নয়। এবং অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয় যতটা আমি ভাবতাম। আমার জীবনে বড় একটা দুঃখ রয়েছে, যখন আমি স্কুল ছেড়েছিলাম তখন পৃথিবীর অন্যায়, অবিচার, পক্ষপাত সম্পর্কে অল্পই জানতাম। আর এগুলোই আমাকে জীবন সম্পর্কে শিখিয়েছে। তোমরা আমার থেকে বেশি জান যখন আমি তোমাদের বয়সী ছিলাম। তোমরা অন্যায়, অবিচার ও পক্ষপাতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দ্রুততার সঙ্গে করতে পার। এমন লোকদের সঙ্গে মিশো যারা তোমার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে, তোমাকে শেখাবে এবং তোমাকে শ্রেষ্ঠ হতে সাহায্য করবে। যেমন মেলিন্ডা গেইট আমার জন্য করেছে। ওয়ারেন বাফেটের মতই আমি সুখ পরিমাপ করি আমার কাছের মানুষদের সুখ এবং আমার প্রতি তাদের ভালবাসা দিয়ে। অন্যদের জন্য আমি যা করেছি তা দিয়ে। যদি আমি তোমাদের প্রত্যেককে স্নাতক অর্জনের উপহার দিতাম, এটাই হতো আমার জীবনের পড়া সর্বোচ্চ প্রেরণা দানকারী বই। এস. এ পিঙ্কার দেখিয়েছেন কিভাবে পৃথিবী দিনে দিনে ভালর দিকে যাচ্ছে। অবাক হলে এটাই সত্য। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এটাই শান্তিপূর্ণ সময়। যদি তুমি চিন্তা কর পৃথিবী ভাল০র দিকে যাচ্ছে, তুমি উন্নয়নের বিস্তার ঘটাতে চাও অধিক মানুষ ও জায়গা তাহলে তাই হবে। এর মানে এটা নয় যে, আমরা যে সব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি তা অবজ্ঞা করবে। এর অর্থ হলো তুমি বিশ্বাস করবে যে সমস্যার সমাধান করা যাবে। এটাই পৃথিবী সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি। এটাই আমাকে কঠিন সময় পার করতে সহায়তা করেছে। এর জন্য আমি আমার কাজকে ভালবাসি। আমি মনে করি তোমরাও তাই করতে পার। জীবিত থাকার জন্য এটি একটি বিস্ময়কর সময়। আশা করি তোমরা তা উপভোগ করবে।
×