ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশাসক নিয়োগ না কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধি?

এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন স্থগিত

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২৩ মার্চ ২০১৭

এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন স্থগিত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন দুই মাসের জন্য স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। ময়মনসিংহ চেম্বারের সভাপতির এক আবেদনের প্রেক্ষিতে বুধবার বিচারপতি মোঃ আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই স্থগিতাদেশ দেন। আগামী ১৪ মে এই নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠানের কথা ছিল। নির্বাচন স্থগিতের ফলে ব্যবসায়ীদের এই শীর্ষ সংগঠনটির সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আগামী ২৩ মে শেষ হয়ে যাচ্ছে সংগঠনটির বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ। ফলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মেয়াদ শেষে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসক নিয়োগ করতে হবে। তবে, চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তার ক্ষমতাবলে বর্তমান কমিটির মেয়াদও বৃদ্ধি করে দিতে পারে। কে হচ্ছেন এই প্রশাসকÑ এ নিয়ে ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই প্রশাসকের তালিকায় সংগঠনটির সাবেক সভাপতি এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ এগিয়ে আছেন। নীতিনির্ধারণী মহল তার বিষয়টিই জোরালভাবে বিবেচনা করছেন বলে জানা গেছে। তবে সরকার সরকার প্রশাসক নিয়োগ করবে না, বর্তমান কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধি করবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। নির্বাচন স্থগিতের ব্যাপারে আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল। তিনি সাংবাদিকদের জানান, নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক বিভাগ থেকে পরিচালক মনোনয়ন করতে হবে। কিন্তু নবগঠিত ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে কোন পরিচালক মনোনয়ন দেয়া হয়নি। এই বাদ পড়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেন ময়মনসিংহ চেম্বারের সভাপতি আমিনুল হক। তখন এই রিটের প্রেক্ষিতে আদালত রুল জারি করে। ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে পরিচালক নিয়োগে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। এর মধ্যেই এফবিসিসিআই নির্বাচন তফসিল ঘোষণা করলে সে নির্বাচন স্থগিতে হাইকোর্টে আরেকটি সম্পূরক আবেদন করা হয়। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত বুধবার নির্বাচন দুই মাসের জন্য স্থগিত করে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী সংগঠনটির পরিচালক পদে নির্বাচনের লক্ষ্যে ১০ এপ্রিলের মধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে। ১৪ মের ভোটে নির্বাচিত পরিচালকরা ১৬ মে অনুষ্ঠিত পর্ষদের বৈঠকে সভাপতি, প্রথম সহ-সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচন করবেন। এবারের নির্বাচনে দুটি প্যানেল নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এর একটির নেতৃত্বে রয়েছেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ জসিমউদ্দিন এবং অপর প্যানেলের নেতৃত্বে রয়েছেন বর্তমান প্রথম সহ-সভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। ইতোমধ্যে এই দুই ব্যবসায়ীই এফবিসিসিআইয়ের পরবর্তী সভাপতি হতে চান বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এই দুই প্রার্থীর পেছনেও রয়েছেন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। মূলত তারাই এই দুই প্যানেলকে নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। এর মধ্যে মহিউদ্দিনের পেছনে রয়েছেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র আনিসুল হক। অন্যদিকে জসিম উদ্দিনের পেছনে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারী খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমাল এফ রহমান। এই দুই প্রভাবশালী ব্যবসায়ীই এবারের নির্বাচনে কলকাঠি নাড়ছিলেন। প্রতিবছরই দেখা যায়, নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে সরকারের পক্ষ থেকে হস্তক্ষেপ করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয় কোন নেতার ওপর সরকারের ‘ব্লেসিং’ রয়েছে। অর্থাৎ সরকার কাকে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনটির সভাপতি হিসেবে দেখতে চায়। তবে এবারের নির্বাচনে ইতোমধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, সরকার এ বছর এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচনে কোন হস্তক্ষেপ করবে না। অর্থাৎ এই দুই প্রার্থীর মধ্যে সরকার কাউকে সরকারের পক্ষ থেকে সমর্থন দেয়া হবে না। নির্বাচনে যিনিই বিজয়ী হবেন সরকার তার সঙ্গেই কাজ করবে। সরকারের কোন পছন্দের প্রার্থী নেই। ফলে আশা করা হচ্ছিল, এবারের নির্বাচন বেশ জমজমাট হবে। নির্বাচন স্থগিতে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্যানেলের সদস্যরা মনক্ষুণœ হলেও সাধারণ ব্যবসায়ীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, সংস্কার কাজ সম্পন্ন করেই এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন হওয়া উচিত। তাতে সত্যিকার অর্থে, এফবিসিসিআইয়ে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব প্রতিফলিত হবে। উল্লেখ্য, সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে গঠিত এফবিসিসিআইয়ের সংস্কার কমিটি ইতোমধ্যে তাদের রিপোর্ট বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের কাছে জমা দিয়েছে।
×