ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ অশনি সঙ্কেত আকাশে, সামাল দিতে হবে এখনই

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ১২ মার্চ ২০১৭

সিডনির মেলব্যাগ ॥ অশনি সঙ্কেত আকাশে, সামাল দিতে হবে এখনই

দেশ শাসনে যারা থাকেন তাদের কাছে মানুষের মুখ্য চাওয়া নিরাপত্তা। শেখ হাসিনার আমলে যত উন্নয়ন আর অগ্রগতি তার ভাল ফল জনগণ ভোগ করছেন। আজ দেশে অভাব কম। মানুষের হাতে টাকা। কাল খবরে দেখলাম ধনী দেশের তালিকায়ও আমাদের জায়গা করে নিয়েছেন কেউ কেউ। সেটা নিশ্চয়ই ভাল খবর। ধনী হতে পারাটা আনন্দের বিষয়। এতে নিজের পাশাপাশি দেশ ও জনগণের উপকার করা যায়। বেশিরভাগ ধনীরা সেটা না করলেও দেশে তার সুপ্রভাব পড়ে বৈকি। এত সব আনন্দের পাশাপাশি উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠাও যেন নিত্যসঙ্গী। খুব বেশিদিনের কথা নয়, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় আমরা মাতম দেখেছি। একবার নয় বেশ কয়েকবার সেখানে জনজীবনে অশান্তি নেমে এসেছে। একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী হেফাজতের পেছনে থেকে দেশকে, দেশের শাসন ও জীবনব্যবস্থাকে নড়বড়ে করে তুলতে চাইছে। সেখানকার সংখ্যালঘুরা আছে মহাআতঙ্কে। একের পর এক ইস্যুতে তারা যেভাবে তাদের ওপর চড়াও হবার চেষ্টা করছে বোঝা কঠিন নয় আসল মাজেজা বা উদ্দেশ্য আসলে ভিন্ন। সেখানে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যাবার মতো পরিবেশ তৈরি হয়েছে। যার মানে এলাকাটি উপদ্রুত। সে এলাকায় সঙ্গীত তারকা ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর বাড়িঘর জাদুঘরে হামলা হয়েছিল। উপমহাদেশের গৌরব সঙ্গীতরতœদের বাদ্যযন্ত্রের মতো নিরীহ কিন্তু কালজয়ী উত্তরাধিকারের চিহ্নও ছাড় পায়নি। তারপরও সেখানে শান্তি নেমে আসেনি। নাসির নগর ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া যেন এক অভিশপ্ত এলাকা হতে চলেছে। যারা গদির লোভে বা সরকারে থাকায় নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছেন তাদের কালঘুম ভাঙতে ভাঙতে কোথায় কি ঘটে যায় সেটা ভাবতেও বুক ধড়ফড় করে ওঠে। এবার সেখানে মানুষকে পথে নামিয়ে সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণে থাকা মূর্তি সরানো চাওয়ায় যে মিছিল তাতে আতঙ্কিত না হওয়ার কোন কারণ দেখি না। বাংলাদেশে কি খালি ঐ এক এলাকাতেই ধর্মপ্রাণ মানুষ বাস করেন? দেশের আরও যত এলাকা; টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত বিস্তৃৃত জনপদে কি আর কারও কোন অনুভূতি নেই? তারা কি ধার্মিক নন? আসলে এ এক ধরনের রাজনৈতিক কূটকৌশল। সরকারের বিরুদ্ধে নানাভাবে জনমত গঠন ও জনগণকে রাগিয়ে তোলার কাজটি করতে না পারা বিএনপি, জামায়াত ও সুশীলের ইন্ধন আছে এর পেছনে। তারা সিনে না থাকলেও অন্তরালে আছে। সামনে আছে হেফাজত। আমার মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে সরকারী দলের মূল পরিচয় কিন্তু রাজপথের দল হিসেবে। দেশের রাজপথে আওয়ামী লীগ অবধ্য ও দুর্দম্য সেই কাহিনী কি গদির টানে আজ অতীত? না, তার জনবলের ওপর আর কোন বিশ্বাস বা ভরসা নেই? এর প্রতিবাদে তারা একটি মিছিল বা সভা করতে ভয় পাবে। করলেও তা হবে দায়সারা। বদলে আমরা দেখব কম্প্রোমাইজের নামে এসব অপশক্তিকে লাই দিয়ে মাথায় তোলার চক্রান্ত। এ যাবত যা ঘটেছে, যখন ঘটেছে সরকারের কিছু নেতা আগ বাড়িয়ে সেখানে গিয়ে ফিরে এসে হাইকমান্ডকে ম্যাসেজ দিয়েছে সমস্যা বা প্রব্লেম সলভড। আসলে কি তাই? তোফা দিয়ে বা উৎকোচ দিয়ে কাউকে কিংবা কোন শক্তিকে কিছুদিন বশে রাখা গেলেও সমস্যা যায় না। এটা কোনদিন লীগের স্বভাব ছিল না। আমাদের নেতা বঙ্গবন্ধু কখনও সমস্যা জিইয়ে রাখতেন না। এই যে নতুন আবদার সেটা যদি কেবল মূর্তি সরানোর বিষয়ে হতো হয়ত ভাবতাম অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে কারও। কিন্তু এরা তো আগেভাগেই বলে দিয়েছে ভাস্কর্য না সরালে হিন্দুদের খবর আছে। কিন্তু কেন? হিন্দুরা কি গ্রিক দেবীর পূজা করে? না তারা এই ভাস্কর্য বসিয়েছে সেখানে? এটা নিরীহ মাদ্রাসার ছাত্র বা অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত জনতা না জানলেও যারা তাদের মাঠে নামিয়েছে তারা খুব ভাল জানে। তবু এই ইস্যুকে এভাবে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার কারণ কি আমাদের অজানা? এটা সেই পাকিস্তানী ভাবধারা। যা আমাদের তার ছায়া বানাতে আদাজল খেয়ে লেগে আছে। তারা ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়েনি। কিন্তু পাকিস্তানের বাস্তবতা কি বলে? সেখানে হিন্দু বা অন্য কোন জনগোষ্ঠীকে আপনি মাইক্রস্কোপ দিয়ে খুঁজলেও পাবেন না। না তারা আছে সমাজে না নীতিতে না মাটিতে। যারা আছে তাদের কোথাও যাবার জায়গা নেই বা মরতে পারে না বলে আছে। কিন্তু তাতে কি সেদেশের সমস্যা ঘুচে গেছে? এখন সেদেশ আরও অগ্নিগর্ভ আরও নরকতুল্য। শিয়া সুন্নি মোহাজের কওমি বালুচ সিন্ধি কতশত ভাগ আর বিবাদ। প্রতিদিন কোন না কোনভাবে মানুষ মরে। মসজিদে বোমা পড়ে। শিশুরা মারা যায়। আরও কত ন্যক্কারজনক ঘটনা। যারা বাংলাদেশকে সেদিকে টানতে চায়, যে ধর্ম অত্যাচারিত, নিপীড়িত মানুষকে বাঁচাবে বলে, আশ্রয় দেবে বলে আবির্ভূত তাকে কলুষিত করে রাজনীতিতে টেনে আনে তাদের মোকাবেলা না করলে বাংলাদেশে এমন ঘটনা ঘটতেই ধাকবে। আজ তারা একটি বিশেষ এলাকায় সীমাবদ্ধ বা সীমিত থাকলেও সুযোগ বুঝে সারাদেশে আগুন ও হিংসার লেলিহান শিখা জ্বালাতে চাইবে। গোড়াতেই এদের দমন করুন। যারা কথায় কথায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত শক্তিশালী করার ডাক দেন তারা কেন হাত গুটিয়ে আছেন? আপনারা মানুষের জানমালের নিশ্চয়তা না দিতে পারলে সময় কি ছেড়ে কথা বলবে? আর হিন্দুরা তো গিনিপিগ মাত্র। সে প্রক্রিয়া শেষ হলে কেউই বাদ যাবে বলে মনে হয় না। সময় জানে কোথায় এর প্রতিকার, আমরা জানি বাধ্য না হলে কেউ এ সমাজে আসল কাজ বা প্রতিকারে হাত দেয় না। তবু বাংলাদেশ তার আশা নিয়ে জেগে থাকে।
×