ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সোনালি আঁশের সোনার দেশ

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ৬ মার্চ ২০১৭

সোনালি আঁশের সোনার দেশ

‘সোনালি আঁশের সোনার দেশ, পাটপণ্যের বাংলাদেশ’ এই সেøাগানে প্রথমবারের মতো সারাদেশে আজ ৬ মার্চ জাতীয় পাট দিবস পালন করছে সরকার। এ উপলক্ষে আট দিনের কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। ৯ মার্চ রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও বহুমুখী পাট-পণ্য মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেলায় ১৩৫ রকমের পণ্য পাওয়া যাবে। পাট শিল্পের পুনরুজ্জীবন ও আধুনিকায়নের ধারা বেগবান করা, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে পাটের চাহিদা বৃদ্ধির ব্যাপক প্রচারের লক্ষ্যে জাতীয় পাট দিবস পালন করা হচ্ছে। পাট শিল্পের অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখতে বর্তমান সরকার দেশের অভ্যন্তরে ৬টি পণ্য যথা- ধান, গম, চাল, ভুট্টা, চিনি এবং সার মোড়কীকরণে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। খুব তাড়াতাড়ি আরও ১২টি পণ্য মোড়কীকরণে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাধ্যতামূলক হচ্ছে। ২০১০ সালে বাধ্যতামূলক প্যাকেজ আইন চালু করা হয়। ফলে স্থানীয় বাজারে পাটের চাহিদা অনেক বেড়েছে। পাটপণ্যের মেলায় এখন শতরূপী পাটের পণ্য দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর বিভিন্ন বিভাগে ১২ কোটি ৭০ লাখ বর্গমিটার উন্নত ধরনের চটের (জুট জিও টেক্সটাইল) প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন এখন এর পুরোটাই উৎপাদনে সক্ষম। তবে আমাদের করণীয় হলো বিদেশে অনুষ্ঠেয় বাণিজ্যমেলায় নিজেদের পণ্যের প্রদর্শন। তাহলে রং, নক্সা, অন্যরা কী করছে, আরও কী করার আছেÑ বিশদ জানা সম্ভব। মেলাসহ অন্যান্য বিষয়ের অভিজ্ঞতার আলোকে পদক্ষেপ নিলে আমরা আরও সাফল্য পাব। বিশ্বের শীর্ষ পাট উৎপাদনকারী দেশ বাংলাদেশের বাজার নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা তৈরি হলে পাটের সোনালি দিন পুনরায় ফিরবে। বলাবাহুল্য পাটপণ্যের ক্ষেত্রে আমাদের আরও গবেষণা প্রয়োজন। পাটের উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। পাট শুধু বাংলাদেশের অগণিত কৃষকের জীবিকার অবলম্বন নয়, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বিবেচনায় এটি গুরুত্বপূর্ণ রফতানি খাত। এই আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ আনা সম্ভব বহুমুখী পাটপণ্য (জুট ডাইভার্সিফাইড প্রোডাক্ট বা জেডিপি) থেকে। উল্লেখ্য, বিশ্ব বাজারের নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বহুমুখী পাটপণ্যের রফতানি সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বেড়ে চলেছে। বিশ্ববাজারে শুধু চটের ব্যাগ নয়, অন্যান্য খাতে যেমন হোম টেক্সটাইল, গিফট এ্যান্ড হাউসওয়্যার প্রডাক্ট, ফ্যাশন এক্সেসরিজ এ্যান্ড লাইফস্টাইল প্রোডাক্ট উৎপাদনে প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে পাটের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এক্ষেত্রে ভারত গত বিশ বছর ধরে এ খাতকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে সরকারী ও বেসরকারী যৌথ উদ্যোগে একটি সহায়ক পরিবেশ ও রফতানি নীতিমালার আলোকে কাজ করে সাফল্য পেয়েছে। শুধু বহুমুখী পাটপণ্য খাত থেকে ভারত আয় করছে দশ হাজার কোটি রুপী। আমাদেরও উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে এ খাতে একটি শক্তিশালী অবস্থান করে গড়ে তোলার। পণ্য ও ডিজাইনের উন্নয়ন ঘটিয়ে বাংলাদেশ এসব বাজারে শক্ত জায়গা করে নিতে পারে। পাটের শপিং ব্যাগের ব্যাপক স্থায়ী সম্ভাবনা রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল জুট স্টাডি গ্রুপের (আইজেএসজি) তথ্য অনুসারে বিশ্ববাজারে শপিং ব্যাগের বার্ষিক চাহিদা ৫০০ বিলিয়ন পিস। ফলে সুপরিকল্পনামাফিক উৎপাদন অব্যাহত রাখলে পাটের সোনালি দিন ফিরিয়ে এনে দেশকে সত্যিকারের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলা শুধু সময়ের ব্যাপার।
×