ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় স্থগিতাদেশ বহাল

আইনী লড়াইয়ে ফের হারলেন ট্রাম্প

প্রকাশিত: ০৭:০১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আইনী লড়াইয়ে ফের হারলেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের এক ফেডারেল আপীল কোর্ট বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করতে অস্বীকৃতি জানালে ট্রাম্প এক আইনী লড়াইয়ে পরাজিত হলেন। তার নির্বাহী নির্দেশে সাতটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থেকে লোকজনের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। খবর বিবিসি ও ইয়াহু নিউজের। নাইনথ ইউএস সার্কিট কোর্ট অব আপীলসের তিন বিচারক প্যানেল সর্বসম্মৃতিক্রমে রুলিং দেন যে, জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ যে অবিলম্বে এ নিষেধাজ্ঞা পুনবর্হাল করা আবশ্যক করে তুলেছে এমন কোন প্রমাণ দিতে ট্রাম্প প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। দু’সপ্তাহ আগে ট্রাম্প ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। কোর্টের ২৯ পৃষ্ঠার রায় ঘোষণার পরপরই ট্রাম্প টুইট করেন, আদালতেই দেখা হবে, আমাদের দেশের নিরাপত্তা বিপন্ন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তার প্রশাসন শেষ পর্যন্ত মামলায় জয়ী হবে। তিনি রুলিংকে ‘রাজনৈতিক’ বলে উড়িয়ে দেন। লাইনহা সার্কিট রুলিংয়ে মামলাটির মীমাংসা হয়নি। এটি শুধু ট্রাম্পের নির্দেশের ওপর এক নিম্ন আদালতের আরোপিত স্থগিতাদেশ তুলে নেয়া হবে কি-না সে প্রশ্ন সম্পর্কিত। রুলিংয়ে আদেশটি স্থগিত করে ইউএস ডিস্ট্রিক্ট জজ জেমস রবার্টের শুক্রবারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করা হয় মাত্র। সফ্রান্সিসকোর নাইনথ সার্কিট আপীল কোর্টের তিন বিচারক তাদের সর্ববম্মত সিদ্ধান্তে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ ওই নিষেধাজ্ঞার যৌক্তিকতা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। সাত দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দিলে নিরাপত্তা ঝুঁঁকি তৈরি হবে বলে দাবি করলেও সরকার এর পক্ষে কোন প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। এ আদেশের ফলে ইরান, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেনের বৈধ ভিসা ও কাগজপত্রধারী যাত্রীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দেয়া যাবে না। সেই সঙ্গে বিশ্বের যে কোন দেশের শরণার্থীদের ক্ষেত্রে যে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল, তাও আপাতত খাটবে না। এ আদেশে সন্তোষ প্রকাশ করে ওয়াশিংটনের এ্যাটর্নি জেনারেল বব ফার্গুসন বলেন, এটা তার রাজ্যের জন্য একটি বড় বিজয়। নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডে বালসিও বলেন, আমরা সব সময় আমাদের প্রতিবেশীদের পাশে আছি, তারা যেখান থেকেই আসুক না কেন। এটাই আমাদের ঐতিহ্য। হোয়াইট হাউসের পক্ষে এ মামলা লড়া বিচার দফতর এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা আপীল আদালতের আদেশ পর্যালোচনা করে দেখছে এবং সুপ্রীমকোর্টে যাওয়ার সুযোগগুলো খতিয়ে দেখছে। সেক্ষেত্রে এখনই এ মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র সরকার সার্কিট কোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টে গেলে সেখানেই নির্ধারিত হবে গত ২৭ জানুয়ারি ট্রাম্পের দেয়া নির্বাহী আদেশের ভাগ্য। বর্তমানে সুপ্রীমকোর্টের আট বিচারকের মধ্যে চারজন নিয়োগ পেয়েছেন রিপাবলিকান আমলে আর বাকি চারজন ডেমোক্র্যাট সরকারের নিয়োগ পাওয়া। ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের ওই নির্বাহী আদেশের বিরোধিতা করে আসছেন শুরু থেকেই। ওয়াশিংটন, মিনেসোটাসহ ১৬ অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্র্যাটরা আইনগত লড়াইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। আর তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় স্থগিতাদেশ বহাল থাকায় আবারও আদালতের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা তাদের আদালতে দেখব। এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। ট্রাম্প বলেন, হোয়াইট হাউসের জন্য এ রায় তেমন কোন প্রতিবন্ধকতা নয়। এটা হলো একটি সিদ্ধান্ত, যা আমাদের বিপক্ষে গেছে। তবে আমরাই মামলায় জিততে যাচ্ছি। গত ২৭ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে সাত মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। পরে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের ফেডারেল বিচারক স্থগিত করে রুল জারি করেন। এর বিরুদ্ধে আপীল করে ট্রাম্প প্রশাসনের অধীন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ। আপীলে তাৎক্ষণিকভাবে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করার আবেদন জানানো হলেও তা অগ্রাহ্য করে বিষয়টি নিয়ে হোয়াইট হাউস ও বিচার বিভাগকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করার কথা বলে আপীল আদালত। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে রায় দেয় আপীল আদালত, যা আবারও ট্রাম্পের বিরুদ্ধেই গেল।
×