ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

স্থানের বাংলা ও ইংরেজী নামের মধ্যে অসামঞ্জস্য

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

স্থানের বাংলা ও ইংরেজী নামের মধ্যে অসামঞ্জস্য

ব্রিটিশ আমলে ঢাকার ইংরেজী বানান ছিল উধপপধ, যা বাংলা উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। ইংরেজী বানান অনুযায়ী উচ্চারণ করতে গেলে তার উচ্চারণ হতো ‘ডাক্কা’। কিন্তু পরবর্তীতে আশির দশকে সেই বানানটি বাংলা উচ্চারণের সঙ্গে সামঞ্জস্য করে উধপপধ এর পরিবর্তে উযধশধ হিসেবে সংশোধন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে। অপরদিকে একইভাবে ভারতের কলকাতার ইংরেজী নামের বানান ব্রিটিশ আমল থেকে ছিল ঈধষপঁঃধ, যা উচ্চারণ করলে সহজ নাম কলকাতার পরিবর্তে তা ক্যালকাটা হিসেবে উচ্চারণ করতে হতো। এ নামটিরও বানান পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার সংশোধনের মাধ্যমে বাংলার সঙ্গে সামঞ্জস্য তৈরি করে কড়ষশধঃধ হিসেবে পরিবর্তন করে নিয়েছে। কাজেই বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নামের বানানে যে অসামঞ্জস্য কিংবা অসঙ্গতি রয়েছে, সেগুলোও ঢাকা নামের বানান সংশোধনের সঙ্গে সঙ্গেই উদ্যোগ নিয়ে পরিবর্তনের প্রয়োজন ছিল। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও সময় ফুরিয়ে যায়নি। কাজেই এ মুহূর্তেই আরও কিছু স্থানের নামের বানান বাংলা উচ্চারণের সঙ্গে সামঞ্জস্য করা হলে অসঙ্গতি দূর হবে। সেইসঙ্গে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা থেকে পুরোপুরি বের হওয়ারও একটি প্রয়াস পাওয়া যাবে। সেরকম কিছু স্থানের বাংলা ও ইংরেজী নামের বানান নিয়ে আলোচনা করা হলো। ইংরেজীতে ঈড়সরষষধ এর বাংলা উচ্চারণ মতো কোমিল্লা হওয়ার কথা। যার সঠিক ইংরেজী বানান ঈঁসরষষধ ড়ৎ কঁসরষষধ হলে প্রকৃত অর্থে বর্তমানে চালু থাকা কুমিল্লা বাংলা বানানটি যুক্তিযুক্ত হয়। এমনিভাবে ঈযরঃঃধমড়হম-চিটাগাং, ঈযধঃঃধমৎধস-চট্টগ্রাম, ঈযধঃমধহ চাটগাঁ হিসেবে সংশোধন করা প্রয়োজন। কক্সবাজারকে ঈড়ী’ং ইধুধৎ হিসেবে না লিখে বরং কড়ীধনধুধৎ ড়ৎ ঈড়ীনধুধৎ হিসেবে লেখা যেতে পারে। অপরদিকে শিল্প, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের অতি পুরাতন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহ নামের যে ইংরেজী বানান সেটির একটি বাংলা অর্থও প্রচলিত আছে লোকমুখে। ময়মনসিংহ = গুসবহংরহময, গু-আমার, গবহ-মানুষেরা, ংরহম-গান করে। কিন্তু যদি একে গড়ুসড়হংরহময হিসেবে সরাসরি সংশোধন করে নেওয়া যায়, তবে তা বাংলা বানানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। আরেক গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহর যশোহরকে সংক্ষেপে যশোরও বলা হয়ে থাকে। কিন্তু যশোর বা যশোহর যাই বলা হোক না কেন, এর ইংরেজী বানান কোন অবস্থাতেই ঔবংংড়ৎব হতে পারে না। বরং এর বানান ঔড়ংড়যধৎ ড়ৎ ঔড়ংযড়ৎ হতে পারে। এমনিভাবে ঝিনাইদহকে সংক্ষেপে ঝিনেদা বলে থাকেন অনেকে। সেখানেও তার ইংরেজী বানান ঔযরহবফধয না হয়ে ঔযরহধরফধযড় হতে পারে। মাগুরা যদি ইংরেজী বানান অনুযায়ী গধমঁৎধ হতে পারে, তবে কেন বগুড়া নামের বানান ইড়মঁৎধ না হয়ে ইড়মৎধ হবে, এ প্রশ্ন উঠতেই পারে। তাহলে তো বাংলায় এর উচ্চারণ হওয়া উচিত ছিল বগ্রা। তেমনিভাবে সিলেট নামের ইংরেজী বানান সিলহেট না হয়ে বাংলা বানানের সঙ্গে মিল রেখে ঝুষবঃ বা আরও সহজ হয়ে ঝরষবঃ হতো। এগুলো মোটাদাগে সবার পরিচিত এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানের নাম। এর বাইরেও আরও অনেক স্থানীয় পর্যায়ের নাম রয়েছে, যাদেরও ঠিক একইরকমভাবে উচ্চারণের বিভ্রাট রয়েছে। সেসব স্থানের বানানগুলো একবারে পরিবর্তনের জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া ও কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। একটি দেশের রাজধানীর নামের বানান সংশোধন করাতে কিন্তু কোথাও বড় ধরনের কোন বিপদ কিংবা সমস্যায় পড়েছি, এমন শোনা যায়নি। অপরদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের রাজধানী হিসেবে কলকাতার নামের বানান শুদ্ধ করার পরেও তেমন কোন অসুবিধার কথা শোনা যায়নি কখনও। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি সেই রাজ্যটির নামও পরিবর্তন করে পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুধু বাংলা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতেও খুব বড় কোন অসুবিধা হবে বলে মনে হচ্ছে না। কাজেই সরকারের জেলা-উপজেলা, ইউপি, পৌরসভা, সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় প্রশাসন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল পর্যায় থেকে এসব স্থানের বাংলা ও ইংরেজী নামের বানানগুলো পরিবর্তন, সংশোধন করে যুগোপযোগী করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে ব্রিটিশ শাসনের শৃঙ্খলিত দুঃসহ স্মৃতি থেকে জাতিকে পুরোপুরি মুক্তি প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। লেখক : ডেপুটি রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় email: [email protected]
×