ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

মানবিক সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যাশায় জাতীয় পথনাট্যোৎসব শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মানবিক সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যাশায় জাতীয় পথনাট্যোৎসব শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অমানবিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী উচ্চারণে মানবিক সমাজ বিনির্মাণের আকাক্সক্ষায় সূচনা হলো নাটককেন্দ্রিক উৎসবটির। ‘মূল্যবোধের অবক্ষয় রুখবো, মানবিক সমাজ গড়বো’ সেøাগানে মঙ্গলবার থেকে শুরু হলো জাতীয় পথনাট্যোৎসব ২০১৭। এদিন বিকেলে ভাষাশহীদদের স্মৃতির স্মারক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আট দিনের এ উৎসবের উদ্বোধন হয়। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলমান উৎসবে প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে শুরু হবে পথনাটকের প্রদর্শনী। দেশ, সমাজ, রাজনীতি, সংস্কৃতি, চলমান সময়সহ বৈচিত্র্যময় বিষয়ের ওপর নির্মিত নাটক পরিবেশন ঢাকা ও ঢাকার বাইরের ৪০টি নাট্যদল। এছাড়া দেশের আটটি বিভাগের ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে চলবে এ উৎসব। ১৯৮৬ সালে যাত্রা করে ৩২তম বছরে পদার্পণ করা এ উৎসবের আয়োজন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। উৎসবের সূচনায় মিনারের বেদির ওপর ইজেল রেখে ছবি আঁকেন রফিকুন নবীন। রং-তুলির আঁচড়ে চিত্রকর্মটি আঁকা হলে একগুচ্ছ বেলুন উড়িয়ে উৎসব উদ্বোধন করেন বরেণ্য এই শিল্পী। এর আগে সম্মেলক কণ্ঠে গীত হয় ‘আমার সোনার বাংলা’। জাতীয় সঙ্গীতের পরিবেশনা শেষে ভাষা আন্দোলনের শহীদসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অতিথিরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন শহীদ মিনারে। ফুলেল ভালবাসা নিবেদন শেষে পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। সাম্প্রতিক মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা উগ্রবাদের বিরুদ্ধে শিল্পিত প্রকাশ ঘটে নৃত্যদল স্পন্দনের নৃত্যশিল্পীদের পরিবেশনায়। ‘এ মাটি নয় জঙ্গীবাদের, এ মাটি মানবতার’ ও ‘দা শৈর্য, দাও ধৈর্য’ গানের সুরে নাচ করে দলটি। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন আইটিআইয়ের সাম্মানিক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, চিত্রশিল্পী মনিরুজ্জামান, ঝুনা চৌধুরী প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন উৎসব আহ্বায়ক চন্দন রেজা। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশনের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকী। উদ্বোধনী বক্তব্যে রফিকুন নবী বলেন, ছেলেবেলা থেকে এতদূর পর্যন্ত এসেছি কিন্তু আজও পর্যন্ত কথার পরিবর্তন হয়নি। এর কারণ হচ্ছে আমাদের কাক্সিক্ষত সেই অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যহীন সমাজটি এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই দেশ স্বাধীনের এত বছর পরও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কথা বলতে হয়। কেন পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকতার অনুপ্রবেশ নিয়ে কথা বলতে হয়? অবস্থান এমন হয়েছে যে আমাদের পিঠটি এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা এ অবস্থা থেকে উত্তরণ পেতে চাই। উৎসব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মূলত মানুষের কাছাকাছি আসার একটি মাধ্যম হচ্ছে পথনাটক। কোন মঞ্চ না মিলনায়তনে নয়, এ নাটকের সূচনাও হয়েছিল উন্মুক্ত আকাশের নিচে। এছাড়া পথনাটকের অন্তর্নিহিত বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যেও রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য। রামেন্দু মজুমদার বলেন, পথনাটকের মাধ্যমে মূলত সমাজ ও রাষ্ট্রের চলমান ঘটনাগুলো প্রাধান্য পায়। চারপাশে যা ঘটে তাই বলা হয় শিল্পের এ মাধ্যমে। তবে যারা পথনাটক করছে তাদের অবশ্যই শিল্পমানটিও একইসঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের পাঠ্যপুস্তকে ভুলের নামে যে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন হয়েছে সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একেবারে নিশ্চুপ। এ অবস্থা চলতে থাকলে মৌলবাদের হুংকার আরও তীব্র আকার ধারণ করবে। তবে সংস্কৃতিকর্মীরা তাদের প্রতিবাদ ঠিকই চালিয়ে যাবে। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে পরিবেশিত হয় নাট্যধারা প্রযোজিত পথনাটক ‘জলে ভাসা পদ্ম’। পথনাটকটি রচনার পাশাপাশি নির্দেশনাও দিয়েছেন লিটু সাখাওয়াত। আজ বুধবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে বিকেল ৪টায়। এদিন মুন্সীগঞ্জের থিয়েটার সার্কেল পরিবেশন করবে পথনাটক ‘মাগো ওরা বলে’, সংলাপ গ্রুপ থিয়েটার মঞ্চস্থ করবে ‘জোড়াতালি’, নারায়ণগঞ্জের সংসপ্তক নাট্যদল উপস্থাপন করবে ‘মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন’, আরণ্যক নাট্যদল উপস্থাপন করবে ‘মূর্খ লোকের মূর্খ কথা’, কুমিল্লার চৌকস নাট্য সম্প্রদায় পরিবেশন করবে ‘গর্ত’ এবং এসিক থিয়েটার উপস্থাপন ‘বায়ান্ন একাত্তরের নিক্তি’। প্রাণের খেলায় গাইলেন বুলবুল ইসলাম ও আনন্দময়ী মজুমদার ॥ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত নিয়মিত গানের আসর ‘প্রাণের খেলা’। মঙ্গলবার সান্ধ্যকালীন এ সঙ্গীত আসরটি সাজানো হয় রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে। কবিগুরুর গান শুনিয়ে এদিন শ্রোতাদের মুগ্ধ করলেন প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী বুলবুল ইসলাম। আর অনুষ্ঠানের ঐতিহ্য অনুযায়ী নবীন শিল্পী হিসেবে গান শুনিয়েছেন আনন্দময়ী মজুমদার। ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে এবারকার আসরটিও ছিল চিরচেনা বৈঠকী আঙ্গিকে। শিল্পী ও দর্শক বসেছিলেন মুখোমুখি। ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী শুরুতেই শিল্পীকে পরিচয় করে দেন শ্রোতা-দর্শকের কাছে। এর আগে এই আয়োজন সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরা হয় শ্রোতা-দর্শকদের সামনে।
×