ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যাময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সাহিত্য উৎসব

ক্যানভাসে মুক্তিযুদ্ধ-নারী জাগরণ, আবহমান বাংলার ছবি

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ক্যানভাসে মুক্তিযুদ্ধ-নারী জাগরণ, আবহমান বাংলার ছবি

বাবুল হোসেন খুদে স্কুলছাত্রীদের ক্যানভাসে মহান মুক্তিযুদ্ধের ছবি, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ’৬৯ এর গণঅভুত্থান, নারী জাগরণ, শিশু অধিকার,পরিবেশ দূষণ, আগামী দিনের পরিবেশবান্ধব স্বপ্নের শহর, পালতোলা নৌকা, ফুল পাখি প্রকৃতি ও আবহমান বাংলার চিরায়ত ছবি। আছে রং তুলির বাহারি নক্শা, গল্প কবিতা ও ছড়াসহ ইতিবাচক ভাবনার সব ছবি। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের উদ্যোগে সৃজনশীল শিল্প-সাহিত্য উৎসব-২০১৭ উপলক্ষে ময়মনসিংহ শহরের বিদ্যাময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্ষুদে ছাত্রীরা গত ১৬ জানুয়ারি সোমবার তাদের ক্যাম্পাসে মেলে ধরেছে এসব ছবি। ক্ষুদে স্কুলছাত্রীদের এমন ইতিবাচক সৃষ্টিশীল ভাবনার প্রতিফলন দেখে মুগ্ধ আয়োজক কর্তৃপক্ষসহ স্কুলের শিক্ষক, অতিথিবৃন্দ ও অভিভাবকেরা। আয়োজন নিয়ে উজ্জীবিত ছাত্রীরাও। সেদিনের এই ব্যতিক্রমী আয়োজনে বিদ্যাময়ী স্কুলের চতুর্থ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণীর ৪ শতাধিক খুদে স্কুলছাত্রী অংশ নেয়। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ময়মনসিংহ জেলা ইউনিট ইনচার্জ এম রবিউল ইসলাম জানান, কোমলমতি শিশুদের মধ্যকার সুকুমার বৃত্তির বিকাশ ঘটিয়ে শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে নতুন জাগরণ সৃষ্টি করার জন্য ২০১৪ সাল থেকে সৃজনশীল সাহিত্য উৎসবের আয়োজন করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ময়মনসিংহ শাখা। দেশে ময়মনসিংহ জেলাতেই এ উদ্যোগ প্রথম। ২০১৪ সালে প্রথমে সরকারী আনন্দ মোহন কলেজে এই সৃজনশীল সাহিত্য উৎসবের আয়োজন করা হয়। পরবর্তীতে সরকারী মুমিনুন্নেছা মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠ ও বিদ্যাময়ী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়সহ শহরের নানা জায়গায় এই আয়োজনে ব্যাপক সাড়া মেলে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হয় এই উৎসবের। তবে প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতার কারণে এখনও এই উৎসব শহর থেকে গ্রাম-গঞ্জের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি। এম রবিউল ইসলাম আরও জানান, শীঘ্রই এটি শহর থেকে গ্রামের সব স্কুলে সম্ভব না হলেও উপজেলা সদরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে। এ জন্য প্রয়োজন সমাজ সেবকদের সহায়তা। বিদ্যাময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসিমা আক্তার জনকণ্ঠকে জানান, কোমলমতি ছাত্রীদের সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ ঘটাতেই এই আয়োজন করা হয়েছে। বিশেষ করে যার যা মেধা ও চিন্তা শক্তি রয়েছে তার বিকাশ ঘটাতেই মূলত এই উদ্যোগ ও আয়োজন। পড়ালেখার সঙ্গে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধকে জাগিয়ে তোলার পাশাপাশি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে কোমলমতি ছাত্রীদের মুক্ত চিন্তার চর্চার মধ্যে ব্যস্ত রাখাই এর উদ্দেশ্য। প্রধান শিক্ষকের মতে, আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসন আর ডিজটাল প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের কারণে বিপথগামী হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগ রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আয়োজনে স্কুলের ৪ শতাধিক ছাত্রী তাদের ইতিবাচক ভাবনা ও চিন্তা মেলে ধরেছে তাদের শিল্পকর্মে। উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত ১০০ জন ছাত্রীকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। পুরস্কার প্রদান উপলক্ষে স্কুলের মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় আলোচনা সভার। এতে আলোর ফেরিওয়ালা খ্যাত বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মতিন্দ্র সরকার, মুক্তিযুদ্ধের গল্পের ফেরিওয়ালা বিমল পাল, ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) আব্দুল লতিফ আলোচনা শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এ সময় আলোচকরা বলেন,এই উদ্যোগ ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হলে শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা এবং এর বিকাশে ইতিবাচক বিপ্লব ও জাগরণ সৃষ্টি হবে নতুন প্রজন্মের মধ্যে। মুক্ত চিন্তার বিকাশ ঘটবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এতে বতর্মান সমাজে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে তারও অবসান ঘটবে বলে মনে করেন আলোচকরা। সেদিন দুপুরে ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছায়া শীতল পরিবেশের পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা গেছে, শানবাঁধানো পুকুরঘাট ঘেঁষে স্কুলের প্রধান ফটক পেরিয়ে মিলনায়তন পর্যন্ত মেলে ধরা হয়েছে ক্ষুদে ছাত্রীদের ৪ শতাধিক শিল্পকর্ম। এর মধ্যে পালতোলা নৌকাসহ ফুল পাখি ও প্রকৃতির মিশ্রণ ঘটিয়ে আবহমান বাংলার চিরায়ত রূপের ছবি ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্ষুদে শিল্পীদের ক্যানভাসে মহান মুক্তিযুদ্ধের ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে অসাধারণভাবে। নারী জাগরণ, শিশু অধিকার ও ইটভাঁটির কালো ধোঁয়ার কারণে মারাত্মক পরিবেশ দূষণের ছবি মেলে ধরা হয়েছে সাবলীলভাবে। এসবের বাইরে বিজ্ঞানসহ মোট ২০টি ক্যাটাগরিতে আঁকা শিল্পকর্ম মেলে ধরেছে ছাত্রীরা। উৎসব উপলক্ষে গল্প কবিতা ছড়া পেপার কাটিং ও দেয়াল পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে স্কুলের কোমলমতি ছাত্রীদের চিন্তা শক্তির বিকাশ দেখে মুগ্ধ অভিভাবকসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। শহরের চরপাড়া কপিক্ষেত আবাসিক এলাকার অভিভাবক গৃহবধূ বিউটি ছাত্রীদের ছড়া ও কবিতাসহ দেয়ালিকার প্রকাশ দেখে বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ ছাত্রীদের মুক্ত চিন্তার বিকাশ ঘটাতে সহায়ক হবে এবং আগামীতে এসব লেখক ও শিল্পীর এ ধরনের প্রকাশনা অব্যাহত থাকলে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ সহজ হবে।
×