ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মানুষের জন্য নয়, তাদের যত কান্না রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৯ জানুয়ারি ২০১৭

মানুষের জন্য নয়, তাদের যত কান্না রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা দিয়েছেন রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হলে দেশ জনগণ ও পরিবেশের কোন ক্ষতি হবে না। সুন্দরবনের জন্যও কোন ক্ষতিকর দিক বয়ে আনবে না। সুন্দরবন থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে এ প্রকল্পের অবস্থান। ডোবা ভরাট করে এ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি সুন্দরবনের বাইরে। যারা আন্দোলন করছেন, তাদের মানুষের ভালমন্দ দেখার দরকার নেই। মানুষের জন্য তাদের কান্না নেই, অথচ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্যই তাদের যত কান্না। শনিবার সকালে চট্টগ্রামে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) এর ‘ডিজিটাল টেকনোলজি ফর ডেভেলপমেন্ট’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ৫৭তম কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দেন। আইইবি’র চার দিনব্যাপী এ কনভেনশনে প্রধানমন্ত্রী অধিক জনসংখ্যার দিক বিবেচনা করে সীমিত জায়গায় স্বল্প খরচে স্থাপনা নির্মাণ এবং টেকসই যন্ত্রপাতি ও পদ্ধতি উদ্ভাবনের গবেষণার উপর জোর দিতে প্রকৌশলী ও পরিকল্পনাবিদদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত, সমৃদ্ধ একটি দেশ। আমরা ই-গভর্নেস চালু করতে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। প্রকৌশলীরা নিজেদের মেধা, মনন আর শ্রমের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন ত্বরান্বিত করতে পারেন। প্রযুক্তির সহায়তায় ই-গভর্নেস বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমরা দেশবাসীর দোরগোড়ায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সুফল পৌঁছে দিতে চাই। দেশ গঠনে প্রকৌশলীদের ভূমিকা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পেয়েছিলেন। জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে স্বাধীনতা পরবর্তীতে অতি অল্প সময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত রাস্তা, সেতু, কলকারখানাসহ সকল অবকাঠামো সংস্কার এবং পুনর্নির্মাণ করে আপনারা দেশপ্রেমের নজির স্থাপন করেছেন। আমরা জাতির পিতার দেখানো পথেই প্রিয় মাতৃভূমিকে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, এর আগের আইইবি কনভেনশনে পদ্মা সেতু নির্মাণে আপনাদের কারিগরি পরামর্শ চেয়েছিলাম। সে থেকে আপনাদের সহযোগিতা ও পরামর্শ এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশেষ অবদান রাখছে। নিজস্ব অর্থায়নে আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। ২০১৮ সালের মধ্যেই এ সেতু চালু হবে। দেশের উন্নয়নে বিদ্যুত, সার ও গ্যাস উৎপাদন এবং সরবরাহ-বিপণন ও রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি, বিভিন্ন স্থাপনা মিল কারখানা, হাসপাতাল ও অফিস আদালত সবকিছু নির্মাণ এবং স্থাপনের দায়িত্ব প্রকৌশলীদের। জ্বালানি আহরণ, বিদ্যুত উৎপাদন ও বিতরণসহ সকল কাজ প্রকৌশলীরাই সম্পাদন করে থাকেন। বিকল্প জ্বালানি ও জ্বালানি সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন, স্বল্প ব্যয়ে বাড়িঘর নির্মাণের কৌশল ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে আপনাদের এগিয়ে আসতে হবে। প্রসঙ্গক্রমে প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরেন। তা হলো- ‘উন্নয়ন কৌশল হবে দেশীয় কিংবা স্থানীয় পদ্ধতির, কিন্তু মান হবে আন্তর্জাতিক।’ আইইবি’র অগ্রযাত্রায় নিজের সরকারের ভূমিকা তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সদর দফতরের জমিটি ১৯৯৬ সালে আমিই নামমাত্র মূল্যে আইইবি’র নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছিলাম। ভবন নির্মাণের জন্য ৫ কোটি টাকা অনুদান প্রদান এবং ভবনের উর্ধমুখী সম্প্রসারণের জন্য ২৩ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছি। ইঞ্জিনিয়ারিং স্টাফ কলেজ, বাংলাদেশের জন্য ১৯৯৭ সালে ৭২ বিঘা জমি নামমাত্র মূল্যে প্রদানের ব্যবস্থা করেছি। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের জন্য ২৩ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করি। আইইবি রাঙ্গাদিয়া কেন্দ্রের জন্য ১৩০ শতক, ফরিদপুর কেন্দ্রের জন্য ৫০ শতক, খুলনা কেন্দ্রের জন্য কেডিএ’র জায়গা এবং পূর্বাচলে ২ বিঘা জমি আইইবি’র জন্য বরাদ্দ দিয়েছি। চট্টগ্রাম কেন্দ্রের কার্যক্রম রেল থেকে ভাড়া নেয়া জায়গায় পরিচালিত হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামেও আইইবি’র নিজস্ব ভবন থাকা প্রয়োজন। বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে জানিয়ে তিনি এ ব্যাপারে রেলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণে আন্তরিকতা ব্যক্ত করেন। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে তিনি চট্টগ্রামেরই সন্তান গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে আলোচনার অনুরোধ জানান। প্রধানমন্ত্রী আরও বড় পরিসরে একটি জায়গা পাওয়া যায় কিনা তা অনুসন্ধানের তাগাদাও দেন। অর্থনীতি, অবকাঠামো উন্নয়ন, শিল্পায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালের আগ পর্যন্ত দেশের ২১টি বছর হেলাফেলায় নষ্ট হয়েছে। যারা দেশের স্বাধীনতা চায়নি, যারা এদেশের নিরীহ মানুষকে পাকিস্তানীদের হাতে তুলে দিয়েছিল তাদের দিয়ে উন্নয়ন আশা করা যায় না। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে যে উন্নয়ন হয়েছে তা এর আগের একুশ বছরে হয়নি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ২০০৯ সাল থেকে যে উন্নয়ন হচ্ছে তা দেশবাসীর কাছে দৃশ্যমান। দেশে বিদ্যুত ছিল না। প্রতিদিন ৮, ১০ এমনকি ১২ ঘণ্টা, এমনকি কোন কোন এলাকায় দুদিন পর্যন্ত বিদ্যুত থাকত না। এখন আমরা ১৫ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষমতা অর্জন করেছি। প্রকৌশলীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের ক্ষমতার মেয়াদ আর দুই বছর। এর মধ্যে দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়নাধীন স্থাপনা এবং প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে তিনি উন্নত ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ওপর জোর দেন। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা স্বাধীনতা চায়নি তারা আবারও ক্ষমতায় এলে দেশ উন্নয়নবঞ্চিত হবে। বক্তব্যে তিনি দেশের উন্নয়নে নানা সীমাব্ধতার কথাও তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের জনসংখ্যা বেশি, গ্যাসসহ বিভিন্ন সম্পদ সীমিত। তবে আমরা অনুসন্ধানের মাধ্যমে সম্পদ আহরণের চেষ্টা করছি। এলএনজি টার্মিনাল হচ্ছে, বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি হবে। বর্তমানে দেশের ৮০ ভাগ মানুষ বিদ্যুত পাচ্ছে। শতভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুত পৌঁছে দিতে হবে। এর জন্য বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। বর্তমানে ভারত থেকে ৬শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত আসছে। আরও ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। সবার জন্য বিদ্যুত নিশ্চিত করতে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত ৯ হাজার ৫৬০ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ এবং ১ লাখ কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণের পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া নেপাল ও ভুটানে বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে আমরা বিনিয়োগ করতে পারি। তিনি বিদ্যুত, গ্যাস ও পানির ব্যবহারে সচেতনতা সৃষ্টির উপর গুরুত্বারোপ করেন। রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে সরকারের উদ্যোগের সমর্থনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিদ্যুত কেন্দ্রে পরিবেশের কোন ক্ষতি হবে না। কেননা, এর অবস্থান সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে। রামপালে একটি ডোবা ভরাট করে এ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। জাতিসংঘ যে পয়েন্টটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ঘোষণা করেছে তার দূরত্ব কেন্দ্র হতে ৬০ থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে। রামপালবিরোধী আন্দোলনের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আন্দোলন করছেন তারা সেখানে যাননি। রামপাল থেকে সুন্দরবন অভিমুখে একটি মার্চ করলে তারা বুঝতে পারবেন যে, বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে সুন্দরবন কত দূরে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আন্দোলন করছেন তারা দেশের মানুষের জন্য কান্না করছেন না, তারা করছেন সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য। তারা যেন সুন্দরবনে যান, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সঙ্গে দেখা করে জিজ্ঞেস করেনÑ তাদের কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা। এটুকু যদি তারা করেন, যদি গিয়ে দেখে একটা রিপোর্ট দেন তাহলে আমরা বিবেচনা করতে পারি। এ সময় তিনি কিছুটা রসিকতার সঙ্গে বলেন, ‘অবশ্য রয়েল বেঙ্গল টাইগার অভুক্ত থাকলে তো উপায় নেই।’ খাদ্য উৎপাদনে সফলতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্য ঘাটতির দেশকে আমরা উদ্ধৃত্ত খাদ্যের ভা-ারে পরিণত করেছি। ইতোমধ্যে আমরা উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। দেশের উত্তরাঞ্চলসহ সারাদেশে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং আপতকালীন সময়ের খাদ্যশস্য কার্যক্রমকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। বেশকিছু সংরক্ষণাগার ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সংরক্ষণ করা যায় মাত্র ১৫ লাখ টন। এর আগের দু’যুগে নতুন কোন খাদ্য গুদাম তৈরি হয়নি। আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর কয়েকটি শস্যগুদাম স্থাপনের পরিকল্পনা করি। কিন্তু পরবর্তী সরকার এ উদ্যোগ অব্যাহত না রাখায় অগ্রগতি হয়নি। বর্তমানে আরও ৮ লাখ টন খাদ্য মজুদের জন্য ১৩টি খাদ্যগুদাম নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের সরকারের চলতি মেয়াদেই ৫ লাখ টন খাদ্য মজুদের জন্য গুদাম নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে। তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় আসার বিনে পয়সায় আন্তঃমহাদেশীয় সাবমেরিন কেবল সংযোগ নেয়ার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু শুধুমাত্র তাদের অজ্ঞতার কারণে এ সুযোগ পাওয়া থেকে আমরা বঞ্চিত হই। ১৯৯৬ সালে এ সংযোগ নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করি। আমরা দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল সংযোগেরও উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইটও উৎক্ষেপণ হবে। তখন যোগাযোগ প্রযুক্তিতে আরও বড় ধরনের বিপ্লব আসবে। ১৯৯৬ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর কম্পিউটার ব্যবহার সহজলভ্য করতে এর উপর থেকে সকল শুল্ক উঠিয়ে দিই। ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মোবাইল ফোন বর্তমানে ২/৪ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপির আমলে তৎকালীন সরকারদলীয় একমন্ত্রী মোবাইল ব্যবসায় মনোপলি কায়েম করেছিল। আমরা তা ভেঙ্গে দিয়ে সবার জন্য মোবাইল ফোন উন্মুক্ত করে দিই। যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে অগ্রসরমান। কোন ষড়যন্ত্রই এ অগ্রাযাত্রা রুখতে পারবে না। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তবতা। আমাদের জিডিপি এখন ৭ দশমিক ১ ভাগ। রিজার্ভের পরিমাণ ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। রফতানি আয় ৩৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৪৬ ডলার। দারিদ্র্য অর্ধেকের বেশি কমিয়ে ২২ দশমিক ৪ ভাগে নামিয়ে এনেছি। শিক্ষার হার এখন ৭১ শতাংশ। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭১ বছর। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ১২৩ শতাংশ বাড়িয়েছি। এ বছর ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজারসহ আমাদের সরকার গত আট বছরে ২২৫ কোটি বই বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। আমার সরকার দেশের ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ এবং এসব বিদ্যালয়ের ১ লাখ ৩ হাজার ৮৪৫ জন শিক্ষকের চাকরি সরকারী করেছে। আমরা বেশকিছু ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্প গ্রহণ করেছি। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, চার লেন সড়ক, আন্তঃদেশীয় রেল প্রকল্প এবং এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম টানেল নির্মাণের কাজ চলছে। দেশে জঙ্গীবাদী তৎপরতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্মের নামে সন্ত্রাসের চরমপন্থা জঙ্গীবাদ উস্কে দিয়ে যারা দেশের মধ্যে আইএস আছে বলে অপবাদ চাপিয়ে দিতে চায় তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। সন্তানরা যাতে বিপথে পরিচালিত না হয় সে জন্য অভিভাবক, শিক্ষকসহ সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই তরুণরা বিপথে পরিচালিত হলে শুধু তাদের নিজেদেরই ক্ষতি নয়, দেশেরও ক্ষতি। কারণ, দেশের জন্য এই তরুণদের দরকার রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর দীর্ঘ বক্তব্যে তুলে ধরেন বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচী হিসাবে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, শিক্ষা উপবৃত্তি চালু, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বিস্তৃতকরণ, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার, কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক, কর্মসংস্থান ব্যাংক ও ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক বিভিন্ন পদক্ষেপ। তিনি বলেন, আমার সরকার একটি বিশেষ লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ‘অর্থনৈতিক মুক্তি’ নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডি না হলে, জাতির পিতা বেঁচে থাকলে অনেক আগেই এদেশের মানুষের ভাগ্য বদলে যেত, অর্থনৈতিক মুক্তি আসত। আইইবি প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মোঃ কবির আহমেদ ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সম্মানী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মোঃ আব্দুস সবুর, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী সাদেক মোহাম্মদ চৌধুরী ও সদস্য সচিব প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন। কনভেনশনে যোগ দেন বিদেশী অতিথিসহ দেশে আইইবি’র ১৮টি কেন্দ্র ও ৩১টি উপকেন্দ্রের প্রকৌশলীরা। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, এমএ লতিফ এমপি, দিদারুল আলম এমপি, ড. আবু রেজা নদভী এমপি, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক এমএ সালাম, চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম এবং চট্টগ্রামের জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা। চার দিনব্যাপী এই কনভেনশনের সমাপনী দিন সোমবার প্রধান অতিথি থাকবেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। এ কনভেনশনে পৃথক পৃথক দিনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
×